Coronavirus

কাজ নেই, বাড়ি ফেরার রাস্তাও বন্ধ!

পেটের দায়েই মালদহ থেকে গত ১৬ মার্চ মহারাষ্ট্রে পাড়ি দেন ৪০ জন শ্রমিক। লকডাউনে নবি মুম্বইয়ের একটি বস্তিতে কোনও মতে মাথা গুঁজেছেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২০ ০৫:৪৫
Share:

ফাইল চিত্র

কেউ পেটের দায়ে গিয়ে ভিন্‌্‌ রাজ্যে আটকে পড়েছেন, কেউ বা নিছক বেড়াতে গিয়ে। লকডাউনের পরিস্থিতিতে আপাতত কোনও ভিন্‌ রাজ্যের শ্রমিক এবং পর্যটককে নিজ রাজ্যে ফেরানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্র। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে পরিস্থিতি সামলাবেন আপাতত সেই চিন্তায় তাঁরা। তবে এই পরিস্থিতিতে এ রাজ্যের প্রশাসন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মাধ্যমে তাঁদের সাহায্য করছে। রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ব্যক্তিগত ভাবে যেখানে আটকে পড়া রাজ্যের বাসিন্দাদের খবর পাচ্ছেন, সেখানেই সাহায্য করছেন। এ দিনই হিমাচলে আটকে পড়া পর্যটকদের হোটেলের বিল মিটিয়েছেন তিনি।

Advertisement

পেটের দায়েই মালদহ থেকে গত ১৬ মার্চ মহারাষ্ট্রে পাড়ি দেন ৪০ জন শ্রমিক। লকডাউনে নবি মুম্বইয়ের একটি বস্তিতে কোনও মতে মাথা গুঁজেছেন। সেখান থেকেই তাঁরা জানান, খাবার কেনার পয়সাটুকু পকেটে নেই। লকডাউনের জেরে কারখানা বন্ধ থাকায় কাজ নেই। এ দিকে বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা। সব মিলিয়েই রাতের ঘুম উড়েছে তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে মিষ্টি দোকানের কারিগর প্রভাস রাউতের। প্রভাসের সঙ্গেই একই কারখানায় কাজ করেন গ্রামের আরও ছয় যুবক। তাঁদেরও একই হাল।

উত্তরবঙ্গের শ্রমিকেরা মূলত কেরল, উত্তরপ্রদেশ, হায়দরাবাদ, দিল্লি, মুম্বই, রাজস্থান, হরিয়ানায় কাজ করেন। তবে কোন জেলার কত শ্রমিক ভিন্‌্‌ রাজ্যে কাজে যান সেই তথ্য নেই শ্রম দফতরের কাছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “রাজ্যের শ্রমিকদের জন্য চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরাও বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে আটকে থাকা শ্রমিকদের খোঁজ নিচ্ছি।”

Advertisement

কর্নাটকে আটকে পড়েছেন পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর মহকুমার প্রায় ৩৫ জন শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে আটকে পড়েছেন পুরুলিয়ার আরও ৪৭ জন শ্রমিক। তাঁদের এক জন বিপ্লব দাস

বলেন, ‘‘ঠিকাদার তিন দিন আগে কিছুটা চাল, ডাল ও আনাজ দিয়েছিলেন। সব শেষ।’’

হলদিয়ার ২২ জন নির্মাণ শ্রমিক ওড়িশার পুরী এবং ভুবনেশ্বরে কাজে গিয়ে আটকে পড়েন। সেই দলে ছিলেন হলদিয়ার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হারুন রশিদও। হলদিয়া পুরসভার পুর-পারিষদ শেখ আসগর আলির মধ্যস্থতায় প্রশাসনের সহযোগিতায় বাস পাঠিয়ে শনিবার তাঁদের ফেরানো হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে ওই তাঁদের গৃহ-পর্যবেক্ষণে (হোম কোয়রান্টিন) থাকতে বলা হয়েছে।

গুজরাতের ভাপিতে আটকে পড়েছে নির্মাণ শ্রমিকদের একটি দল। ৪০ জন শ্রমিকের অনেকেই মোহনপুরের। রাজকোটে আটকে থাকা ঝাড়গ্রামের শ্রমিকদের উদ্ধারে তৎপর হয়েছেন বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রম। তীর্থ করতে অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতিতে গিয়ে আটকে পড়েছেন মেদিনীপুর শহরের ২০ জন। বিশাখাপত্তনমে আটকে পিংলার

এক দম্পতি।

লক ডাউনের মধ্যে হেঁটেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন ঝাড়খণ্ডের এক দল শ্রমিক। শনিবার দুপুরে তাঁরা পৌঁছন পালসিটে। সেখানে তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেন স্থানীয় একটি ক্লাব ও পুলিশ। পরে গাড়িতে ঝাড়খণ্ডে পৌঁছনোর ব্যবস্থাও হয়।

রাজস্থানে আটকে পূর্ব বর্ধমানের জনা পঞ্চাশ শ্রমিক। গয়নার দোকানে কাজ করতে গিয়ে কালনার জনা দশেক মুম্বইয়ে আটকে পড়েছেন।

মুম্বইয়ে আটকে রয়েছেন হাওড়ার ঘোড়াবেড়িয়া গ্রামের আট জন। ভিন্‌্‌ রাজ্যে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আটকে পড়েছেন ভাঙড়ের এক বৃদ্ধ। সন্দেশখালির জনা পনেরো শ্রমিক কেরলের কান্নুরে আটকে পড়েছেন। সন্দেশখালির শ্রমিকদের জন্য কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেন বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু। পুলিশ তাঁকে আশ্বস্ত করেছে। মুর্শিদাবাদের ডোমকল, হরিহরপাড়া-সহ বিভিন্ন এলাকার শ্রমিকেরা

ভিন্‌্‌ রাজ্যে আটকে রয়েছেন। বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে আটকে রয়েছেন হরিহরপাড়ার আমজাদ শেখ নামে এক ব্যক্তি।

এ সবের মাঝেই ১২ মার্চ ৪০ জনের একটি দলের সঙ্গে কাশ্মীর রওনা হয়েছিলেন শ্রীরামপুরের বাসিন্দা কার্তিক রায়। ভূস্বর্গে তাঁরাও বিপাকে পড়েছেন।

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement