ছবি: পিটিআই।
লকডাউনের মধ্যে ভিন্ রাজ্য ও অন্য জেলা থেকে বীরভূমে ঢোকার পরই জেলার বিভিন্ন নিভৃতবাস কেন্দ্রে ঠাঁই হয়েছিল ওঁদের। নিভৃতবাস কাটানো অন্য জেলার সেই সব শ্রমজীবি মানুষকে তাঁদের বাড়িতে ফেরানোর কাজ শুরু করল জেলা প্রশাসন। তবে অন্য রাজ্যের যে সব বাসিন্দারা সরকারি নিভৃতবাস কেন্দ্রগুলিতে রয়েছেন তাঁদের অবশ্য বাড়ি যাওয়ার সুযোগ মেলেনি।
বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানান, জেলার মোট ১৪টি নিভৃতবাস কেন্দ্রে ১৫ থেকে ২০দিন কাটিয়েছেন এমন ২৯০ জনকে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি জানান, যাঁরা ফিরলেন তাঁদের প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ফিট সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাড়ি ফিরেও অবাধ ঘোরাফেরা নয়, চোদ্দো দিনের গৃহ-নিভৃতবাসে থাকতে হবে তাঁদের। ওই সব মানুষদের মধ্যে অন্য জেলার অনেক বাসিন্দা রয়েছেন। তাঁদের যাতে নিজের জেলায় ফিরতে কোনও সমস্যা না হয় সে জন্য প্রত্যেকের নামের তালিকা ধরে সেই জেলার জেলাশাসকদের জানানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, করোনা সংক্রমণ রুখতে কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে সরকার এটা যাঁরা আগাম আঁচ করেছিলেন তাঁরা আগাম জেলায় ফিরতে শুরু করেছিলেন। কোনও উপসর্গ নেই এমন সকলকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে ১৪ দিনের নিভৃতবাসে রাখার ব্যবস্থা করে প্রশাসন। কিন্তু পরিস্থিতি জটিল হয় লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই। রাজ্যে ২৩ মার্চ বিকেল থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। দেশ জুড়ে লকডাউন শুরু হয় তার পরদিন থেকেই। তারপরই কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে বিভিন্ন জেলায় আটকে পড়া শ্রমিকরা কেউ হোঁটে, কেউ পণ্যবাহী ট্রাকে চড়ে, কেউ সাইকেলে যে যেভাবে পেরেছেন বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছিলেন। যাঁরাই জেলায় ঢুকেছেন তাঁদের চিহ্নিত করে নিভৃতবাস কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা হয় প্রশাসনের তরফে।
ওই শ্রমজীবী মানুষদের মধ্যে শুধু জেলার বাসিন্দারা নন, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার মানুষ ছিলেন। ছিলেন পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড, বিহারের বাসিন্দারাও। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সমস্ত সুযোগ সুবিধা দেওয়া হলেও উপসর্গ না থাকায় নিভৃতবাস কেন্দ্রে লাগাতার অপরিচিত পরিবেশ থাকতে থাকতে হাঁফিয়ে উঠেছিলেন ওঁরা। দীর্ঘদিন পর বাড়ির যাওয়ার সুযোগে উচ্ছ্বসিত তাঁরা।
দুবরাজপুরের বক্রেশ্বর নিভৃতবাস কেন্দ্র থেকে এ দিন ৩৩জনকে ছাড়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে তিন জন জেলার বাসিন্দা। বাকিরা মালদহ, মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। অন্যদিকে ইলামবাজারের নিভৃতবাস কেন্দ্র থেকে ছাড়া হয় ১১৮ জনকে। তাঁরা প্রত্যেকেই ভিন জেলার বাসিন্দা। সিউড়ির আবাদারপুর কেন্দ্র থেকে মুক্তি পেলেন ১৮ জন। তাঁদের মধ্যে জেলার বাসিন্দা ৭জন। বাকিরা ভিন জেলার।
জেলা পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে , কোন নিভৃতবাস কেন্দ্রে কতজন শ্রমজীবি রয়েছেন, তাঁদের বাড়ি কোথায় এই বিষয়টি বিবেচনা করে একটি রুট চার্ট তৈরি করা হয়ে। সেই অনুয়ায়ী সরকারি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যাতে বাসগুলি জেলার নির্দিষ্ট এলাকায় এবং অন্য জেলার নির্দিষ্ট এলাকায় গিয়ে ওই বাসিন্দাদের নামিয়ে দিয়ে আসেন। যে যে জেলায় বাস যাচ্ছে জানানো হয়েছিল সেই জেলাকেও। তবে বাসে পাশাপাশি নয়, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই বসানোর ব্যবস্থা করেছিল প্রশাসন। কতগুলি বাস লাগবে তা ঠিক করেছিল জেলা পরিবহণ দফতর। নিভৃতবাস কেন্দ্র থেকে নিয়ম মেনে সবাইকে বাসে তোলার ব্যবস্থা করেছে স্থানীয় থানা ও ব্লক প্রশাসন।
জেলাশাসক জানিয়েছেন, একই ভাবে বীরভূমের যে সমস্ত বাসিন্দা অন্য জেলার নিভৃতবাস কেন্দ্রে আটকে রয়েছেন তাঁদেরও একই ভাবে ফেরানোর ব্যবস্থা করবে সেই জেলার প্রশাসন।