করোনা-আবহে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বাস চালানোর ক্ষেত্রে ভীতিও কাজ করছে অনেকের মধ্যে। ছবি: সংগৃহীত।
ভাড়া বৃদ্ধি-সহ বেশ কিছু দাবিদাওয়ার সুরাহা না-হওয়ায় অধিকাংশ বেসরকারি বাস এত দিন পথে নামেনি। সেই বিরোধিতার পথ থেকে সরে এসে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে আপাতত পুরনো ভাড়াতেই বাস নামাতে রাজি হয়েছে সব মালিক সংগঠন। যত আসন, তত যাত্রী— এই নিয়মেই বাস চলবে বলে জানিয়ে দিয়েছে বেসরকারি বাস সংগঠনগুলি।
জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস, মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি, ইন্টার অ্যান্ড ইন্ট্রা রিজিয়ন বাস অ্যাসোসিয়েশন জানাচ্ছে, তারা আজ থেকে ধাপে ধাপে পরিষেবা শুরু করছে। জয়েন্ট কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী আমাদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাড়া বৃদ্ধির কমিটি গঠন, বাস-মালিকদের কর ছাড়, চালকদের জন্য স্বাস্থ্য বিমা-সহ বেশ কিছু দাবি আছে আমাদের। মন্ত্রী বিবেচনার আশ্বাস দেওয়ায় আমরা এখন পুরনো ভাড়াতেই বাস চালাতে রাজি হয়েছি।’’
তবে বাস-মালিকেরা জানাচ্ছেন, বহু চালক ও কর্মী জেলার বাড়িতে আছেন। ট্রেন না-চলায় তাঁরা কী ভাবে আসবেন, সেটা বড় প্রশ্ন। সেই সঙ্গে করোনা-আবহে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বাস চালানোর ক্ষেত্রে ভীতিও কাজ করছে অনেকের মধ্যে।
আরও পড়ুন: করোনায় মৃত্যু নার্সের, বদলি হলেন একাধিক সিএমওএইচ
আরও পড়ুন: পরিযায়ীকে দশ হাজার করে টাকা দিক কেন্দ্র: মমতা
বুধবার কলকাতার সব রুটে সরকারি এসি বাসও চালু হয়েছে বলে জানান পরিবহণমন্ত্রী। লোকাল ট্রেনের অভাব মেটাতে এসবিএসটিসি ধর্মতলা থেকে চুঁচুড়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুর, বালি, ডানলপ, মানকুণ্ডু বৈদ্যবাটী-সহ শহরতলির বেশ কিছু রুটে বাস চালাতে শুরু করেছে।
যদিও বাস কম থাকায় এ দিনও হয়রান হতে হয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ। কয়েকটি বেসরকারি রুটের বাসে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে যেতেও দেখা যায়। অনেক বাসস্টপে যাত্রীদের দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অনুপম হাজরা নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘বাস আসছে বহু ক্ষণ পরে পরে। এলেও ওঠা মুশকিল। কারণ, আসন ভর্তি।’’
তবে পরিবহণমন্ত্রী জানান, সোমবারের তুলনায় হয়রানি অনেক কমেছে। এখন বাসের জন্য দাঁড়াতে হচ্ছে অনেক কম। মন্ত্রী বলেন, ‘‘এ দিন বৃহত্তর কলকাতায় সরকারি বাস ছিল ৭৫০টি। চলেছে ৪৫০টি বেসরকারি বাসও। ৮ জুনের মধ্যে ১২০০ সরকারি বাস নামাব। সব বেসরকারি সংগঠন বৃহস্পতিবার বাস নামালে সমস্যা আরও কমে যাবে।’’ বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের তরফে টিটো সাহা জানান, তাঁরা এ দিন পর্যন্ত ২০টি রুটে বাস চালিয়েছেন। সোমবারের মধ্যে বাস চালানো হবে ৫০টি রুটে।
পরিবহণ দফতরের কিছু অফিসার অবশ্য মনে করছেন, শহরতলির ট্রেন ও মেট্রো চালু না-হওয়ায় যাত্রীদের একাংশের সমস্যা থেকেই যাবে। শুভেন্দুবাবু জানান, মানুষের হয়রানি কমাতে শনিবার থেকে ২৯টি নতুন রুটে বিশেষ ফেরি সার্ভিস চালু হবে। তার মধ্যে আছে শ্রীরামপুর-ব্যারাকপুর, উত্তরপাড়া-বাগবাজার, বেলুড় থেকে আড়িয়াদহের মতো রুট। নতুন ব্যবস্থায় অধিকাংশ রুটেই ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা ১৫ মিনিট অম্তর ভেসেল চলবে। ‘‘যে-সব রুটে ফেরি সার্ভিস চালু হচ্ছে, তার দু’ধারের এলাকার প্রচুর মানুষ লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করেন। ট্রেনের অভাব অনেকটাই মেটাতে পারবে এই ফেরি সার্ভিস,’’ বলেন শুভেন্দুবাবু।