রাজস্থান থেকে ফেরা শ্রমিকেরা। ডানকুনিতে মঙ্গলবার। ফাইল চিত্র
কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে চলমান সংঘাতে এ বার পরিযায়ী শ্রমিকদের ভাগ্যও জড়িয়ে গেল। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের অভিযোগ, পরিযায়ীদের ঘরে ফেরানোর ব্যাপারে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে মরিয়া অমিত শাহ তথা বিজেপি শিবির ২০২১-এর আগে বাংলায় কৃত্রিম অসন্তোষ তৈরি করে হাওয়া গরম করতে চাইছেন। উল্টো দিকে বিজেপির দাবি, পরিযায়ীদের না ফিরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব দায় কেন্দ্রের ঘাড়ে ঠেলতে চাইছেন। কিন্তু এই চাপানউতোরে শ্রমিকরা কবে সুরাহা পাবেন, সেই উত্তরটাই অধরা।
পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে রাজ্য সরকার উৎসায়ী নয় বলে অভিযোগ এনে আজ অমিত চিঠি দিয়েছেন। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, এই চিঠির পিছনে বড় তাগিদই হল শাক দিয়ে মাছ ঢাকা। মহারাষ্ট্রে গত কাল শ্রমিকদের ট্রেনে কাটা পড়ার যে কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটেছে, বা এর আগেও যে ভাবে রাস্তায় শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে, বিজেপি তা থেকে আড়াল খুঁজছে। সেই জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাঠগড়ায় তুলে হাওয়া গরম করার চেষ্টা করছে। কারণ তাঁরা জানেন, মমতাই সবথেকে মানবিক মুখ নিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করছেন। যা অন্যান্য রাজ্যকে পিছনে ফেলে দিতে পারে।
অন্য দিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, “এত দিন সচিব পর্যায়ে চিঠি এসেছে। কিন্তু রাজ্য সরকার তাতে গুরুত্ব দেয়নি। বিভিন্ন রাজ্য তাদের শ্রমিকদের ফেরাতে চায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার কাউকে ফেরাবে না, আবার সব দোষ কেন্দ্রের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে। এখন জল মাথার উপর দিয়ে বইছে। তাই এ বার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিঠি দিয়েছেন।’’
তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের পাল্টা বক্তব্য, বাংলার যে সব লোক অন্যান্য রাজ্যে রয়েছেন, তাঁদের সেই সব রাজ্যছাড়া করার উদ্যোগই বেশি চোখে পড়ছে। এই দুর্বিপাকের সময় সেটা শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয়। তার মধ্যে রাজনীতি রয়েছে। অন্য রাজ্য থেকে তাড়িয়ে বাংলায় অতিরিক্ত লোক ঢুকিয়ে চাপ তৈরি করার চেষ্টা। তৃণমূল শীর্ষ সূত্রের যুক্তি, রাজ্য কেন্দ্রের থেকে কোনও আর্থিক সহায়তা পায়নি। তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতনে হাত দেওয়া হয়নি। গরিব মানুষের বিরাট অংশের হাতে খাদ্য পৌঁছচ্ছে। সেটা হচ্ছে বলেই বিজেপির গাত্রদাহ।
অমিত আজ মমতাকে চিঠি লেখার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ভিডিয়ো মারফত সাংবাদিক বৈঠক করে পাল্টা আক্রমণ করেছেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং রাজ্যের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ডেরেক বলেন, ‘‘হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠে মমতাকে আক্রমণ শুরু করেছেন অমিত। বলছেন পশ্চিমবঙ্গ নাকি শ্রমিকদের ফেরত আনতে চায় না। অথচ পশ্চিমবঙ্গই কেরল এবং রাজস্থান থেকে বাংলার শ্রমিকদের ফিরিয়ে এনেছে।” কাকলি বলেন, “মোদী সরকার নিজেরা ল্যাজে গোবরে হচ্ছে। তাই আগামী বছরের ভোটে সুবিধা পাওয়ার জন্য মমতার সঙ্গে রাজনীতির লড়াই লড়ছে।’’ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “আমরা চিকিৎসকদের জন্য মাস্ক পাই না, সরঞ্জাম পাই না, শুধু চিঠি পাই!’’
আরও পড়ুন : রেলের বক্তব্য অসত্য, টুইট আলাপনের, সঙ্ঘাতের পথেই রাজ্য
আরও পড়ুন : রাতে লাইন ধরে হাঁটছিলেন ৫১ জন শ্রমিক, একটুর জন্য অওরঙ্গাবাদ হল না বীরভূম
বিষয়টি নিয়ে জল মাপতে চাইছে অন্য দলগুলিও। কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীর মতে, “শ্রীঅমিত শাহকে পশ্চিমবঙ্গের দুরবস্থার কথা জানানোর পর, উনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেন, যার ফলে আরও আটটি ট্রেন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে ঢোকার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু যে পরিমাণ পরিযায়ী শ্রমিক বাইরে আছেন, সে তুলনায় আটটা ট্রেন কিছুই নয়। আরও ট্রেনের দাবি করছি।” সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, “মোদী সরকার অন্য সময় রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে দ্বিধা করে না। কিন্তু এখন শ্রমিকদের জন্য রেল চালাতে পারছে না। এ দিকে শ্রমিকদের ব্যাপারে রাজ্যের ফোন নম্বর কেউ পায় না, অ্যাপ চলে না। তামাশা না করে এখন সত্যি করেই দিদিকে বলুন তৃণমলের কর্মীরা।”
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)