পরিযায়ীদের কে কোন কাজে দক্ষ, তার নিরিখে তালিকা তৈরি করছে বিভিন্ন জেলা প্রশাসন। ছবি: পিটিআই।
ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে ২০১৭ সালে খুন হন বাংলার এক শ্রমিক। পরের বছরেও অনুরূপ একটি ঘটনায় রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হয়েছিল। কার্যত তখনই প্রথম বঙ্গবাসী পরিযায়ী শ্রমিকদের তথ্য ভান্ডারের খোঁজ পড়েছিল। কোভিড-ধাক্কায় এত দিনে পরিযায়ীদের নাম ও ঠিকানা-সহ একটি তথ্য ভান্ডার তৈরি হয়েছে। পরিযায়ীদের কে কোন কাজে পটু, তার ভিত্তিতে আরও একটি তথ্যনির্ভর তালিকা তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু আগে থেকে এমন তালিকার ব্যবস্থা কেন করা হয়নি, সেই প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনিক মহলেই। প্রশাসনের অন্য একাংশের বক্তব্য, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, কোনও রাজ্যেই এমন তালিকা ছিল না। তা থাকলে লকডাউন পর্বে পরিযায়ীদের ফেরানো নিয়ে দেশ জুড়ে এত জটিলতা তৈরি হত না।
প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, দু’টি তালিকাই তৈরি হচ্ছে কার্যত কোভিড-ধাক্কায়। পরিযায়ী প্রত্যাবর্তন পর্বের সূচনায় প্রথমটি তৈরির কাজ শুরু হয়। সরকারি কন্ট্রোল রুমে যত শ্রমিক ফোন করেছেন, তাঁদের তথ্য নথিবদ্ধ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গমুখী ট্রেনে তোলার আগে সংশ্লিষ্ট রাজ্য নাম, ঠিকানা-সহ শ্রমিকদের তথ্য বাংলায় পাঠিয়েছিল। সেগুলিও তথ্য ভান্ডার তৈরির কাজে লেগেছে। দ্বিতীয় তালিকা অধিকতর তথ্যনির্ভর। কে কোন কাজে দক্ষ, তার নিরিখে সেটি তৈরি করছে বিভিন্ন জেলা প্রশাসন। সব পরিযায়ী ফিরে এলে তবেই সেই তালিকা চূড়ান্ত হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরতে শুরু করার পরে জেলা-ভিত্তিক তথ্য ভান্ডার তৈরির জন্য রাজ্য সরকার সব জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছিল। দক্ষতার ভিত্তিতেই সেটি তৈরি করতে হবে। জেলা-ভিত্তিক সেই তথ্য ভান্ডার কেন্দ্রীয় ভাবে ব্যবহারের উপযুক্ত করা হবে। কোনও শ্রমিক অন্য রাজ্যে ফিরতে না-চাইলে দক্ষতা অনুযায়ী তাঁকে ব্যবহার করা হবে। এ ব্যাপারে শিল্প গোষ্ঠীগুলির সঙ্গেও আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
আরও পড়ুন: এখন ভোট হলে ফিরবে তৃণমূলই, মত সমীক্ষায়
আরও পড়ুন: লোকাল ট্রেন কবে, বোঝা যাবে আজ?
বিভিন্ন জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, দু’ভাবে এই তথ্য ভান্ডার তৈরির কাজ চলছে। ট্রেন থেকে নামলেই শ্রমিকের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে নথিবদ্ধ করছে কিছু জেলা। আবার শ্রমিকেরা এলাকায় ফিরে গেলে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করাচ্ছে কোনও কোনও জেলা প্রশাসন। ফলে কিছু জেলায় প্রাথমিক তালিকা তৈরি হয়ে গেলেও অনেক জেলায় সেই কাজ এখনও চলছে। এক জেলা-কর্তা বলেন, “পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরে আসা শেষ হয়নি। তাই তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে, এমন কথা বলা যায় না।” অন্য এক জেলা-কর্তা জানান, প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত। বাকিরা ফিরে এলে চূড়ান্ত তালিকা পাঠানো হবে রাজ্য স্তরে। লকডাউন নিয়ন্ত্রণ শিথিল হওয়ায় কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার পদ্ধতি জানতে ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে খোঁজখবর শুরু করেছেন পরিযায়ীদের একাংশ। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “ভিন্ রাজ্যে কেউ কেউ দৈনিক সাত-আটশো টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতেন। তাই অনেকেই নিজেদের কাজের রাজ্যে ফিরে যেতে চাইছেন।”
কর্মহীন পরিযায়ীদের বিকল্প কাজের ব্যবস্থায় গ্রাম, ব্লক ও জেলা-ভিত্তিক তথ্য ভান্ডার তৈরি করতে বলেছে সুপ্রিম কোর্টও। তাই প্রবীণ আধিকারিকদের অনেকেই মনে করছেন, এমন তালিকা আগে থেকে তৈরি থাকলে সংশ্লিষ্টদের কাজের ব্যবস্থা করতে সুবিধা হত রাজ্যের। করোনা শুরুর আগে কেন এমন তথ্য ভান্ডার রাজ্যে ছিল না, সরকারি ভাবে এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে ফোনে পাওয়া যায়নি। জবাব দেননি মোবাইল বার্তারও।