১০০ দিনের কাজে নতুন করে জব কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। —ফাইল চিত্র।
‘স্নেহের পরশ’ প্রকল্পে হাজার টাকা হাতখরচের টাকা দিয়েছে নবান্ন। ১০০ দিনের কাজে নতুন করে জব কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। তার পরেও রাজ্যে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের বড় অংশ ইতিমধ্যেই আবার ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। তাঁদের অনেকেরই দাবি, ভিন্ রাজ্যে আয় বেশি। এখানে ১০০ দিনের কাজ করে দৈনিক ২০২ টাকার মজুরির জন্য উৎসাহী নন অনেকেই।
কেন কাজ হারানো শ্রমিকেরা ১০০ দিনের কাজের চেয়ে ফের ভিন্ রাজ্যে ফিরে যেতে চাইছেন?
শ্রম দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, ১০০ দিনের কাজে প্রতিদিন মাটি কেটে ২০২ টাকা মজুরি পাওয়া যায়। ভিন্ রাজ্যে কাজে গেলে শ্রমিকেরা প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা রোজগার করেন। বীরভূম, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দুই দিনাজপুরের শ্রমিকেরা মূলত নির্মাণ শিল্পে কাজ করেন। তাঁরা এখনই ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দুই মেদিনীপুর, হাওড়ার শ্রমিকেরা আবার সোনা, হিরে কাটা বা জরির কাজ, হোটেল-রেস্তরাঁয় রান্না বা হাউসকিপিংয়ের করেন। এই জেলাগুলি থেকে ফেরার তোড়জোড় এখনই তেমন না-থাকলেও মাটি কাটার কাজেও তাঁরা বিশেষ আগ্রহী নন।
আরও পড়ুন: ঝোলা ব্যাগ নিয়ে দেখা করতে আসতেন মমতা
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, দক্ষিণের বিভিন্ন রাজ্য থেকে কারখানা মালিক বা নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বাসও পাঠাতে শুরু করেছেন। সম্প্রতি তেলঙ্গানা থেকে কয়েকটি বাস এসে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে শ্রমিকদের নিয়ে চলে গিয়েছে। বহু ব্লকে শ্রমিকেরা নিজেরাও গাড়ি ভাড়া করে ফের সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিতে ফিরে যাওয়ার তোড়জোড় করছেন বলে নবান্ন জেনেছে। একই ভাবে রাজ্যের মধ্যে সুন্দরবন থেকে শ্রমিকদের বর্ধমান-হুগলির হিমঘর বা ইটভাটা মালিকেরা নিয়ে যেতে শুরু করেছেন। জেলাশাসকেরা শ্রমিকদের কাজে ফেরানোর ব্যবস্থাও করে দিচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।
পঞ্চায়েত দফতর জানাচ্ছে, ১০০ দিনের কাজ করতে তেমন আগ্রহী নন অধিকাংশ পরিযায়ীরা। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের কয়েক জন জেলাশাসক জানিয়েছেন, বাড়িতে নিভৃতবাসে থাকা শ্রমিকদের ১০০ দিনের প্রকল্পে ব্যক্তিগত উপভোক্তা স্কিমে (আইবিএস) ১৪ দিনের মজুরি দেওয়া হচ্ছে। খাদ্য দফতরের বিশেষ কুপন নিয়ে তাঁরা রেশনের চাল-ডালও তুলেছেন। তবে জব কার্ডের দরখাস্ত তেমন পড়ছে না। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন সীমানা দিয়ে প্রায় ২ লক্ষ পরিযায়ী রাজ্যে ঢুকেছেন। তার মধ্যে ৬০ হাজার পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা। কিন্তু জব কার্ড চেয়ে এক হাজার আবেদনও ওই জেলায় পড়েনি।
আরও পড়ুন: উত্তর-দক্ষিণ দুই বঙ্গেই এল বর্ষা, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা
মালদহে এসেছেন ৬৫ হাজার শ্রমিক। তাঁরা মালদহ, দুই দিনাজপুরের বাসিন্দা। এই তিন জেলাতেও ১০০ দিনের কাজ করতে আগ্রহী নন অধিকাংশ শ্রমিক। কোচবিহারে ফিরেছেন ২০ হাজার শ্রমিক। সেখানেও জব কার্ডের আবেদন নগণ্য।
সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে রাজ্য দাবি করেছে, রাজ্যে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। কিন্তু পঞ্চায়েত দফতর জানাচ্ছে নতুন করে জব কার্ড চেয়ে আবেদন ৫০ হাজারও আসেনি। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা তো কাজ করার জন্য জোর করতে পারি না। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওঁরা কাজ চাইলে সরকার কাজ দেবে।’’