ওষুধের দোকানে লাইন।—ফাইল চিত্র।
মজুত আছে পর্যাপ্ত ওষুধ। জেলায় জেলায় তা পৌঁছে দিতে দিনরাত গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে প্রশাসনের দাবি। তা সত্ত্বেও কর্মী ও গাড়িচালকের অভাবে অনেকের কাছে অনেক ওষুধ পৌঁছচ্ছে না। বিশেষত জীবনদায়ী ওষুধের সমস্যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। নজরদারি চলছে।
ব্যবসায়ী সংগঠন সূত্রের খবর, কলকাতার বাগড়ি মার্কেট ও মেহতা বিল্ডিংয়ের মজুত ওষুধ জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। বেলা ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত ওই দু’টি বাজারের প্রায় সব দোকানই খোলা থাকছে। বিভিন্ন জেলার অনেক ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটর একসঙ্গে গাড়ি ভাড়া করে কলকাতায় এসে ওষুধ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন বলে রাজ্য ড্রাগ কন্টোল সূত্রে জানানো হয়েছে।
বেঙ্গল ড্রাগিস্ট ও কেমিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শঙ্খ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ওষুধের মজুত যথেষ্টই। বিশেষ সরকারি নির্দেশে ওষুধ পরিবহণ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। জেলার দোকানেও সাত-দশ দিনের ওষুধ মজুত রয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ না-কিনলে কোনও সমস্যা হবে না।’’
ড্রাগ কন্ট্রোল দফতরের খবর, বিভিন্ন কোম্পানি কলকাতার বাজারে ওষুধ সরবরাহ শুরু করেছে। দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গে সেই ওষুধ পাঠানোর জন্য বিভিন্ন পরিবহণ সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে। জেলায় ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার উপরে নজরদারি চালানো হচ্ছে। কলকাতার ওষুধ বাজার জানাচ্ছে, সোমবার মহানগরী সংলগ্ন উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, নদিয়ার বহু ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটর নিজেদের উদ্যোগে গাড়িতে ওষুধ নিয়ে গিয়েছেন। নিজেদের এলাকায় খুচরো ব্যবসায়ীদের ওষুধ সরবরাহ করবেন তাঁরা। অল ইন্ডিয়া কেমিস্ট ও ডিস্ট্রিবিউটর ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ সরকার বলেন, ‘‘অর্থবর্ষের শেষে বিভিন্ন সংস্থা প্রচুর ওষুধ সরবরাহ করেছে। পরবর্তী কালেও সরবরাহ নিশ্চিত করা দরকার। নইলে পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আশঙ্কা আছে।’’ ড্রাগ কন্ট্রোলের ডিরেক্টর তারাপদ দাস জানান, ওষুধ সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনায় সরবরাহ নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিবহণে বিশেষ সরকারি নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে বলে জানান ওষুধ ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, লকডাউনের জেরে ওষুধ সরবরাহে লোকবলের সঙ্কট রয়েছে। কলকাতার বাজারে গাড়িতে ওষুধ তোলা ও নামানোর কাজ করতেন বিহার ও উত্তরপ্রদেশের শ’দুয়েক শ্রমিক। করোনা-আতঙ্কে তাঁদের অধিকাংশই কলকাতা ছেড়েছেন। মাত্র ৩০-৪০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। বিভিন্ন পরিবহণ সংস্থায় গাড়িচালকের অভাব রয়েছে।
বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে রত্নাবলী রায়, মোহিত রণদীপ, দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় ওষুধ সরবরাহে সমস্যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। তাঁরা জানান, কলকাতার ওষুধ বাজারে, জেলায় লোকবলের অভাবে দোকান খোলা যাচ্ছে না। ওই সব দোকান খোলার ব্যবস্থা না-করলে জীবনদায়ী ওষুধ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে না। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রায় ৬০ শতাংশ দোকানের কর্মী ও শ্রমিক কাজ শুরু করেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিকের পথে।’’