পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্যের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে আর্জি মুখ্যমন্ত্রীর। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে রাজনীতিতে রাশ টানার আর্জি জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নবান্নে তিনি জানান, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ব্যবস্থা করতে গিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ করেছে। পরিযায়ী, অসংগঠিত শ্রমিক এবং হকারদের অর্থ সাহায্য করা হোক বলে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছেন মমতা। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে এককালীন সাহায্য হিসাবে এঁদের অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার করে টাকা পাঠানো হোক বলে তিনি টুইটও করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মানুষকে যখন বাঁচাতে চাইছি (কোভিড-আমপান-পরিযায়ী পরিস্থিতিতে), তখন কেউ কেউ বলে বেড়াচ্ছে, বাংলা আমরা দখল করব। দখল তো অনেক করেছ। কত রাজ্য তোমাদের অধীনে। আর কী দরকার? বাংলা অনেক বড় জায়গা। ঝগড়া নয়, সহযোগিতা চাই। কেন্দ্র-রাজ্য সরকারের মধ্যে উন্নয়নের সেতুবন্ধন চাই। বিপর্যয়ের সময় রাজনীতি বন্ধ হোক।’’
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, রাজ্য সরকারের তহবিলে কমবেশি দেড়শো কোটি টাকা অনুদান এসেছে। রাজ্য পৃথক ভাবে ২০০ কোটি টাকার কোভিড-তহবিল করেছিল। কিন্তু বিভিন্ন ব্যবস্থাপনায় বেশির ভাগ অর্থই খরচ হয়ে গিয়েছে। অন্য রাজ্যে থাকার সময় ৪.৭৫ কোটি পরিযায়ী শ্রমিককে অর্থ সাহায্য করতে ৪৫.৭০ কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার। ট্রেনের ভাড়া বাবদ ২৫ কোটি টাকা, বাসের জন্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা, কোয়রান্টিন ব্যবস্থার জন্য দৈনিক ৩ কোটির বেশি টাকা, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ৭-৮ কোটি টাকা এবং অসংগঠিত শ্রমিকদের এককালীন অর্থ সাহায্যে ১৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তাঁর অনুরোধ, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে প্রচুর টাকা জমা পড়েছে। দয়া করে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গড়ুন।’’
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘ট্রেনে এসেছেন ২.৪ লক্ষ। আরও আসবেন প্রায় দেড় লক্ষ শ্রমিক। সড়ক পথে এসেছেন ৬.৫ লক্ষ মানুষ। সকলে সুস্থ থাকুন, প্ররোচনায় পা দেবেন না। লকডাউনের আগে পরিকল্পনা করে পাঠালে এই সমস্যা হত না। যাঁরা ট্রেনের ভাড়া দিতে পারবেন না, তারা পরিযায়ীদের কাছে উত্তেজক ভাষণ দেবেন না।’’ পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্ভোগের জন্য ফের রেলকে দায়ী করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: অর্থ-সঙ্কট চরমে, বন্ধ বিধায়ক কোটার টাকা
আরও পড়ুন: ‘বাংলা’কে তুলে ধরে এ বার মাস্ক শাসকের
প্রত্যেক জেলায় আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম, ঠিকানা, কোন কাজে তিনি দক্ষ— তার তালিকা তৈরির নির্দেশ প্রতিটি জেলাশাসককে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রয়োজন অনুযায়ী ওই তালিকা ব্যবহার করা হবে।
এ দিনই দিল্লিতে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘লকডাউন ঘোষণার আগে এক বারও মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেননি মোদী-শাহ জুটি। পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিস্থিতি নিয়ে কোনও ধারণাই না থাকায় তাদের জীবন, জীবিকা, সম্মান নিয়ে ছেলেখেলা করছে কেন্দ্র। শেষে পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে রাজ্যের দিকে আঙুল তোলার রাজনীতি করছে শাসক দল। ’