মমতার অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্য থেকে শ্রমিক এবং আটকে পড়া মানুষদের ফেরাতে ২৩৫টি ট্রেনের পরিকল্পনা পশ্চিমবঙ্গ সরকারই করেছে, ভাড়াও দিচ্ছে। ছবি: পিটিআই।
আপ্রাণ চেষ্টা করেও করোনা পুরোপুরি আটকানো ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে—শুক্রবার নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে তা কার্যত জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রমিক এক্সপ্রেসকে ‘করোনা এক্সপ্রেস’ আখ্যা দিয়ে এ জন্য রেলের পদক্ষেপকেই দায়ী করেছেন তিনি। এ বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে অভিন্ন নীতি স্থির করার দাবি করেছে রাজ্য। দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনোদকুমার যাদবকে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে চেয়ার ছেড়ে উঠে যান তিনি। পরে আবার একই প্রশ্ন করা হলে চেয়ারম্যান সটান গাড়িতে উঠে যান।
একসঙ্গে এত সংখ্যায় ভিন্ রাজ্য থেকে শ্রমিকদের পশ্চিমবঙ্গে পাঠানোর বিরোধী রাজ্য। এ দিনও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাসে এবং গাড়িতে কয়েক লক্ষ মানুষ এসেছেন। এখনও পর্যন্ত ৭৫ হাজার মানুষ এসেছেন ট্রেনে। অনেকে করোনা আক্রান্ত। ওই জন্যই তো আক্রান্ত বাড়ছে। তাঁরা তো হটস্পট রাজ্য থেকে আসছেন। পরিকল্পনাহীন ভাবে যাতায়াত বাড়ায় এটা ছড়িয়েছে বেশি। এখন আর উপায় নেই। সবাইকে নিয়েই থাকতে হবে। করোনাকে নিয়ে ঘুমোন, করোনাকে পাশবালিশ করে নিন। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও করেছি। কিন্তু সব আমার হাতে নেই। আকাশ যেমন আমার হাতে নেই, ট্রেনটাও আমার হাতে নেই।’’ প্রসঙ্গত, শুক্রবার হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, গত ২৮ তারিখ পর্যন্ত শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে শুধু মহারাষ্ট্র থেকে হাওড়ায় এসেছেন সাড়ে তিন হাজারের বেশি শ্রমিক। যাঁদের মধ্যে করোনা পজ়িটিভ ১১৭ জন।
ঘটনাচক্রে, এ দিনই রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় টুইট করেন, ‘যে পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরে আসছেন, তাঁরা আমাদের আপনজন। তাঁরা পেটের দায়ে রাজ্য ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁরা আমাদের সম্পদ, কেউ ফেলনা নন। বিশ্বব্যাপী মহামারির প্রেক্ষাপটে বাড়ি ফিরলে তাঁদের উষ্ণ অভ্যর্থনা প্রাপ্য। তাঁদের সংক্রমণকারী হিসেবে দেগে দেওয়া অন্যায়, হতাশাব্যঞ্জক এবং হৃদয়বিদারক।’
আরও পড়ুন: সোমবার থেকে রাজ্য়ে কী কী খুলছে? জানালেন মমতা
আরও পড়ুন: আলো-খাদ্য ও শৌচাগার, তিন ‘নেই’-এ বিক্ষোভ
মমতার অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্য থেকে শ্রমিক এবং আটকে পড়া মানুষদের ফেরাতে ২৩৫টি ট্রেনের পরিকল্পনা পশ্চিমবঙ্গ সরকারই করেছে, ভাড়াও দিচ্ছে। তার পরেও মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, চেন্নাই এবং দিল্লির মতো ‘হটস্পট’ থেকে যে শ্রমিকেরা ফিরছেন, তাঁদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করেনি রেল। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘একটা সিটে কেন তিন-চার জন করে আসবেন? শ্রমিক এক্সপ্রেসের নামে আপনারা কি করোনা এক্সপ্রেস চালাচ্ছেন? বার বার ট্রেন চালাতে কী অসুবিধা? ট্রেনে বগি বাড়ানোও সম্ভব। মানুষকে খড়ের গাদার মতো করে নিয়ে আসছেন। যাঁর ছিল না, তাঁকেও আপনি করোনা দিচ্ছেন।’’
রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা, পরিযায়ী শ্রমিকরা এলাকায় ফিরে বিভিন্ন স্কুলে থাকবেন। ১০ দিনের মাথায় পরীক্ষা হবে। নেগেটিভ হলে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পজ়িটিভ হলে কোয়রান্টিন করা হবে। প্রশাসনের বক্তব্য, অনেকে করোনা নিয়ে ফিরলেও তাঁদের দোষ দেওয়া যায় না। কারণ, তাঁরা যেখানে ছিলেন, সেখানে চিকিৎসা পাওয়া যায়নি।