খিদিরপুরে এ ভাবেই বক্তৃতা মুখ্যমন্ত্রীর। নিজস্ব চিত্র
আগের দিন কলকাতা পরিদর্শনে বেরিয়ে রাস্তায় তো নেমেছিলেনই, গ্লাভস পরা হাতে রীতিমতো ঝাঁটা ধরে দেখিয়েও দিয়েছিলেন, স্যানিটাইজ় বা জীবাণুমুক্ত করে ঝাঁট দিতে হবে কী ভাবে। বুধবারেও শহরের রাস্তায় বেরোলেন। তবে রাস্তায় নামলেন না। গাড়িতে বসেই বক্তব্য জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাস্তায় না-নামার কারণ হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘রাস্তায় নামলে কেউ যদি বলে, লকডাউন ভাঙছি! তাই রাস্তায় নামলাম না। আপনাদের কাছে যেতে পারলাম না বলে আমি দুঃখিত। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি লকডাউন ভাঙছি না। আপনারাও লকডাউন ভাঙছেন না। বাড়িতে থাকুন। পরিবারের সঙ্গে থাকুন।’’
এ দিন বিকেল ৪টে ১০ মিনিট নাগাদ নবান্ন থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় প্রথমে যায় খিদিরপুর মোড়ে। সেখানে রাস্তার ধারে আগে থেকেই লাগানো ছিল মাইক। গাড়িতে বসেই মমতা এলাকাবাসীদের উদ্দেশে হিন্দি ও বাংলায় আবেদন জানান, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সকলেই যেন লকডাউনের নিয়মবিধি মেনে চলেন। তাঁর বক্তব্য শুনতে রাস্তার পাশের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বাসিন্দাদের।
আরও পড়ুন: রিপোর্টের ক্ষেত্রে আশা করি কেন্দ্রীয় দল নিরপেক্ষ হবে: মুখ্যসচিব
মমতা বলেন, ‘‘আপনারা আরও কয়েকটা দিন বাড়িতে থাকুন। আপনাদের কষ্ট হবে। কিন্তু পরিবারের জন্য এবং করোনাকে জয় করার জন্য এই লড়াই করতে হবে। ‘‘দোকানপাট বন্ধ। কাজে যেতে পারছেন না। কিন্তু কী করা যাবে! সামনে রমজান আসছে। আপাতত ঘরই মন্দির, ঘরই মসজিদ, ঘরই গুরুদ্বার। আমরা চাই, ইদের আগে করোনা চলে যাক। দুর্গাপুজোর আগে করোনা চলে যাক।’’
খিদিরপুর থেকে মমতা চলে যান পার্ক সার্কাস চার নম্বর সেতুর কাছে। সেখানেও তিনি গাড়িতে বসেই বক্তব্য জানান। রাস্তার ধারে লাগানো ছিল মাইক। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘লকডাউনের কথা আগে কখনও শুনিনি। লকডাউন কেমন হয়, আগে কখনও দেখিনি। এই প্রথম বার শুনলাম, দেখলাম। আপনাদের কষ্ট হচ্ছে, জানি। কিন্তু করোনা রোগটাকে জয় করতে হলে আমাদের বাড়িতে থাকতেই হবে।’’ করোনা রুখতে হলে স্বাস্থ্যবিধি যে না-মানলেই নয়, এখানেও তা স্মরণ করিয়ে দেন মমতা। সাধারণ মানুষের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘মাস্ক ব্যবহার করুন। এক জায়গায় জড়ো হবেন না। বাইরে থেকে ঘরে আসার পরে শুধু জামাকাপড় নয়, জুতোও ধুতে হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর মতে, করোনার বিরুদ্ধে জিততে গেলে শুধু পুলিশ বা স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে হবে না। দরকার সাধারণ মানুষের সহযোগিতা।
আরও পড়ুন: কিট দেওয়ার নাম নেই, বদনামের চক্রান্ত: মমতা
মমতা জানান, মানুষের অসুবিধা দূর করতে অনেক বাজার খোলা আছে ঠিকই। কিন্তু পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে বাজার করতে হবে। হাসপাতালে যেতে হলে বা অন্য যে-কোনও দরকারে পুলিশ সাধারণ মানুষের পাশে আছে। মমতা জানিয়ে দেন, রেশন দোকান থেকে মোট পাঁচ কিলোগ্রাম চাল ও গম পাওয়া যাবে। কিছু কিছু রেশন দোকান ছোট। হয়তো তাদের বেশি মালপত্র মজুত থাকে না। সে-ক্ষেত্রে দু’বারে পাঁচ কেজি চাল ও গম দেওয়া হবে। যাঁদের দোকান ছোট, তাঁরা যাতে বেশি পরিমাণে চাল ও গম মজুত রাখতে পারেন, সেই জন্য পাড়ার ক্লাবঘর ব্যবহার করতে পারেন। পাড়ার ক্লাবকে তাঁদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে হবে।
করোনা যে-কারও হতে পারে বলে জানান মমতা। তিনি বলেন, ‘‘করোনা হলে লজ্জা পাওয়ার কোনও কারণ নেই। যে-ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছি, তাতে আমারও করোনা হতে পারে। ববির (ফিরহাদ হাকিম) হতে পারে। পুলিশ কমিশনারের হতে পারে। হলে ট্রিটমেন্টটা করতে হবে। অনেক রোগীই ভাল হয়ে গিয়েছে। তবে শ্বাসকষ্ট হলে বেশি অপেক্ষা করবেন না।’’ মমতা জানান, খিদিরপুর হোক বা ওয়াটগঞ্জ, মনসাতলা হোক বা হেস্টিংস, একবালপুর হোক বা ফ্যান্সি মার্কেট, মোমিনপুর— সর্বত্র সবাইকে একসঙ্গে লড়তে হবে। একসঙ্গে লড়লে ভয়ের কোনও কারণ নেই।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে বাড়ির বারান্দায় দাঁড়ানো মানুষজন হাততালি দেন। চার নম্বর ব্রিজ থেকে মমতা চলে যান বালিগঞ্জ ফাঁড়িতে। সেখানেও গাড়িতে বসে মিনিট পনোরো বক্তৃতা দেন। তার পরে চলে যান কালীঘাটে নিজের বাড়িতে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)