ছবি: পিটিআই।
ভিন্ রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের নিখরচায় ঘরে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার টুইট-বার্তায় জানান, অন্য রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে যে সব স্পেশাল ট্রেন আসবে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার পুরো খরচ বহন করবে। পরিযায়ী শ্রমিকদের থেকে ভাড়া নেওয়া হবে না। রেল বোর্ডকেও সে কথা জানিয়েছে রাজ্য প্রশাসন।
রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ এ দিন চিঠি দিয়ে রাজ্যের সিদ্ধান্তের কথা রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনোদকুমার যাদবকে জানিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, স্পেশাল ট্রেনে বাংলার শ্রমিকদের কাছ থেকে যেন ভাড়া না-নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে রেল বোর্ড সব রেলকর্তাকে নির্দেশ দিক। রাজ্য সরকারের সূচি অনুযায়ী যাতে রেল পরিষেবা শুরু হয়, তা নিশ্চিত করতেও রেল বোর্ডকে অনুরোধ করা হয়েছে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানো নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই কেন্দ্র-বাংলা তরজা চলছে। এ দিন বাংলার সিদ্ধান্ত জানার পরে রেল মন্ত্রক সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি এখনও দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে গিয়েছেন রেল কর্তারাও। সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বিলম্বিত বোধোদয়, ঘরের মানুষ ঘরে ফিরুক। আন্দোলনে সাফল্য মিলেছে। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।’’
আরও পড়ুন: ‘জানি না, গণেশের কী হয়েছে’, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রাকের যাত্রী
নবান্নে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘১৬টি রাজ্য থেকে ১০৫টি ট্রেনের ভাড়া মেটাবে রাজ্য সরকার।’’ জানান, সবচেয়ে বেশি ট্রেন আসবে কেরল থেকে, ২৮টি। তার পরেই রয়েছে মহারাষ্ট্র, ১৭টি। বাকি স্পেশাল ট্রেন আসবে মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাত, দিল্লি, হরিয়ানা, হিমাচলপ্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, কর্নাটক, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানা এবং উত্তরাখণ্ড থেকে। স্টেশন থেকে বাড়ি ফেরাতে বাসের ব্যবস্থাও থাকছে। তাঁর কথায়, ‘‘এ পর্যন্ত সাতটি ট্রেনের মধ্যে দু’টি পৌঁছেছে। শনিবার দু’টি পৌঁছেছে। রবিবার আসবে একটি ট্রেন।’’
আগামী দিনে ফেরানোর প্রক্রিয়াটি কী হবে? রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল রাতে টুইট করে জানিয়েছেন, রেল দেশের যে কোনও জেলা থেকে শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুত। সে ক্ষেত্রে জেলশাসকেরা শ্রমিকদের গন্তব্যের ভিত্তিতে তালিকা তৈরি করে দেবেন। রেলের কাছে আবেদন জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের নোডাল অফিসারের মাধ্যমে। সূত্রের খবর, রেল ওই তালিকা অনুযায়ী ট্রেনে ওঠার সুযোগ দেবে। কোনও ট্রেনেই গাদাগাদি ভিড় হবে না। পরিযায়ী শ্রমিকেরা স্টেশন থেকে ‘রিজার্ভেশন স্লিপ’ সংগ্রহ করে ট্রেনে উঠবেন।
আরও পড়ুন: ইউরোপীয় যোগ থেকেই রাজ্যে সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত
স্বরাষ্ট্রসচিব জানান, রাজ্যে ফেরার পরে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও পরবর্তী বিধিমাফিক ব্যবস্থা নেওয়ার বন্দোবস্ত থাকছে। বেশি করোনা-আক্রান্ত রাজ্য, যেমন মহারাষ্ট্র, গুজরাত বা দিল্লি থেকে যাঁরা আসবেন, তাঁদের নিবিড় স্বাস্থ্যপরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। তবে এর জন্য তাঁদের যাতে ভোগান্তি না-হয়, বা সময় বেশি না-লাগে, তা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যপরীক্ষা কেন্দ্রগুলি বিকেন্দ্রীকরণের চেষ্টা চলছে।
রাজ্য সরকারের তথ্য, এখনও পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার মানুষ ‘এন্ট্রি পাস’ নিয়ে নিজেদের গাড়িতে পশ্চিমবঙ্গে ফিরেছেন। ‘এগ্জ়িট পাস’ নিয়ে এ রাজ্য থেকে ফিরেছেন প্রায় ২ লক্ষ ১৫ হাজার মানুষ।