ছবি: পিটিআই।
রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা গত ১৫ দিনে দ্বিগুণের বেশি হয়ে গিয়েছে। চিন্তার কথা হল, নতুন আক্রান্তদের ৫৬ শতাংশই জেলায় ফেরা পরিযায়ী শ্রমিক। ভিন্ রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় করোনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে বঙ্গের স্বাস্থ্য দফতর।
সাধারণ ভাবে রাজ্যের মোট লালারসের নমুনা পরীক্ষার নিরিখে করোনা সংক্রমণের হার ৩%। পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ১০০ জনে ১০ জনের করোনা ধরা পড়ছে। কিন্তু তাঁদের প্রায় সকলেই উপসর্গহীন। নবান্নের কর্তাদের বক্তব্য, গ্রামে সংক্রমণ ঠেকাতে পারলে তবেই করোনা-যুদ্ধ জয় সম্ভব। আগামী দেড়-দু’মাসে রাজ্যে সংক্রমণ যদি ৫০ হাজারের মধ্যে আটকে রাখা যায়, সেটাকে বড় সাফল্য বলে ধরা হবে।
স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৩১ মে রাজ্যের মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৫০১। ১৪ জুন তা হয়েছে ১১,৪৯৪। অর্থাৎ ১৪ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯৯৩ জন। তাঁদের মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৩৩৫৮, যা নতুন আক্রান্তের ৫৬%।
আরও পড়ুন: পরিযায়ী পর নন, শেখাচ্ছে বাংলার পিছিয়ে পড়া গ্রাম
নবান্নের খবর, ট্রেনে বিভিন্ন রাজ্য থেকে ৬,৬৩,৮২৩ জন পরিযায়ী শ্রমিক বঙ্গে ফিরেছেন। অন্যেরা এসেছেন বাসে, নিজেদের ব্যবস্থায় বা হেঁটে। দিল্লি, তামিলনাডু, মহারাষ্ট্র, গুজরাত ও মধ্যপ্রদেশ থেকে আসা শ্রমিকদের নমুনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। উপসর্গহীন শ্রমিকদের সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে শুরু করায় নবান্ন উদ্বিগ্ন। আইসিএমআর নতুন নির্দেশিকায় উপসর্গহীনদের পরীক্ষা চালাতে নিষেধ করায় ওই পাঁচ রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক পরীক্ষা থেকে সরে আসে বাংলা। কর্তারা জানান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দুই দিনাজপুর প্রথম থেকে ‘গ্রিন জ়োন’ ছিল। পরিযায়ীদের ট্রেন আসার পরে ওই সব জেলায় সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছে। এক কর্তা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী করোনা এক্সপ্রেস বলেছেন কি না, তা নিয়ে বহু সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনগুলি এসেছে করোনা নিয়েই।’’
আক্রান্ত পরিযায়ী
মোট পরিযায়ী
জেলা আক্রান্ত আক্রান্ত
বীরভূম ২৫৪ ২১২
বাঁকুড়া ১৮০ ১২৮
মালদহ ৩২১ ২৮০
উঃ দিনাজপুর ২২৭ ১৯৭
পূর্ব বর্ধমান ১৩৯ ১২৮
কোচবিহার ২৬৪ ২২৩
পশ্চিম মেদিনীপুর ৩০০ ২৩৪
পুরুলিয়া ৮৫ ৮২
সূত্র: স্বাস্থ্য দফতর ১৫ জুন, ২০২০ পর্যন্ত।
রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ বলেন, ‘‘উপসর্গহীন সংক্রমিত শ্রমিকদের সেফ হোমে রেখে সুস্থ করা হবে। তাঁরা তরতাজা এবং কমবয়সি। তাঁদের অন্য কোনও রোগ নেই। ফলে সাত দিনের মধ্যেই কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন। শুধু উপসর্গহীন আক্রান্তেরা যাতে গ্রামে অন্যদের মধ্যে রোগ ছড়াতে না-পারেন, অগ্রাধিকার দিয়ে সেটাই দেখতে বলা হয়েছে।’’
স্বাস্থ্য ভবনের একাংশের বক্তব্য, জেলায় সংক্রমণ বাড়লেও সুস্থতার হার অনেক বেশি। মৃত্যুও কম। কিন্তু কলকাতা ছাড়াও চিন্তা বাড়াচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি, হাওড়া। গত ১৪ দিনে উত্তর ২৪ পরগনায় ২০৫, হুগলিতে ৪২১, হাওড়ায় ৩৪৭ জন আক্রান্ত হন। স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, রাজ্যের ৮৭৮৫টি কোভিড-শয্যার ২৫% ভর্তি হয়েছে। হাওড়ার ৭৫০টি শয্যার মধ্যে ৩৫০টি ভর্তি। কলকাতার ১৫০০টি শয্যার ৯০০টিতে রোগী আছেন। ফলে কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সংক্রমণ বাড়লেও পরিকাঠামোর সমস্যা এখনও নেই।