প্রতীকী ছবি।
এক বছরে দেশে আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়েছে ৩.৪ শতাংশ। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড বুরোর (এনসিআরবি) প্রকাশিত তথ্যেই এ কথা জানা গিয়েছে। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালের পরিসংখ্যানের নিরিখেই এই শতাংশের বৃদ্ধি। সংখ্যার বিচারে দেখলে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯-এ দেশে প্রায় পাঁচ হাজার জন বেশি আত্মহত্যা করেছেন।
এনসিআরবি-র তথ্য অনুযায়ী, আত্মহত্যায় দেশে সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে মহারাষ্ট্র। তার পরে তামিলনাড়ু এবং তৃতীয় স্থানে পশ্চিমবঙ্গ। প্রথম পাঁচে বাকি দুই রাজ্য হল মধ্যপ্রদেশ এবং কর্নাটক। আত্মহত্যার কারণ হিসেবে সব থেকে উপরে রয়েছে পারিবারিক সমস্যা। মহানগরের ক্ষেত্রে অবশ্য কলকাতা প্রথম সারিতে নেই। রিপোর্ট বলছে, চেন্নাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু এবং মুম্বইয়ে সব থেকে বেশি আত্মহত্যা ঘটেছে। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে বেঙ্গালুরু বাদে বাকি তিনটি মহানগরেই আত্মহত্যা বেড়েছে। তবে দেশের শহরাঞ্চলের মধ্যে আত্মহত্যায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এ রাজ্যের আসানসোল। দেশে ২০১৯ সালে ৭২টি সপরিবার আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ৩২.৪ শতাংশ আত্মহত্যার জন্য পারিবারিক কারণ দায়ী। প্রায় ১০ শতাংশ আত্মহত্যার পিছনে কোনও কারণ জানা যায়নি। সব থেকে বেশি আত্মহত্যা ঘটেছে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে।
আত্মহত্যায় প্রথম পাঁচ∗
কোথায় কত
• মহারাষ্ট্র ১৮৯১৬
• তামিলনাড়ু ১৩৪৯৩
• পশ্চিমবঙ্গ ১২৬৬৫
• মধ্যপ্রদেশ ১২৪৫৭
• কর্নাটক ১১২৮৮
∗ এনসিআরবি
কলকাতার ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রির শিক্ষক-চিকিৎসক সুজিত সরখেলের মতে, এনসিআরবি-র রিপোর্ট থেকে কোন ঘটনার জন্য বেশি আত্মহত্যা হচ্ছে তা নির্দিষ্ট ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। তাঁর ব্যাখ্যা, এনসিআরবি রিপোর্ট পুলিশের উপরে নির্ভর করে। আত্মহত্যার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশের তদন্তকারী অফিসার আপাত ভাবে যে কারণটি উঠে আসে সেটিকেই তাঁর রিপোর্টে চিহ্নিত করেন। সেই রিপোর্টই এনসিআরবি-তে জমা পড়ে। মনস্তত্ত্ব সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ পুলিশ অফিসারদের থাকে না বলে অনেক সময়ই মূল কারণ জানা যায় না। ‘‘হতেই পারে যিনি পারিবারিক সমস্যায় আত্মঘাতী হলেন তিনি দীর্ঘদিন ধরে অবসাদে ভুগছিলেন এবং তার চিকিৎসা হয়নি। ফলে আপাত ভাবে পারিবারিক সমস্যা আত্মহত্যার কারণ হলেও মূল কিন্তু সেই অবসাদই,’’ বলছেন তিনি।
আরও পড়ুন: আত্মহত্যায় শীর্ষে দিনমজুর, তার পরেই কৃষিক্ষেত্র
রিপোর্টে এ-ও দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ আত্মঘাতী মানুষের শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পাশ। এ ক্ষেত্রে সুজিতবাবুর পর্যবেক্ষণ, ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে বেশি মানুষ আত্মঘাতী হন। রিপোর্টে দেখা যাবে, পেশাদার এবং পরিণত বয়সে আত্মহত্যার ঘটনা কম। যে-হেতু অপরিণত বয়সে আত্মহত্যা বেশি হচ্ছে তাই আত্মঘাতীরা উচ্চশিক্ষার স্তরে পৌঁছতে পারছে না। তাই উচ্চ ডিগ্রিধারীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা কম।