এই রথই ব্যবহার করা হতে পারে প্রচারে। —ফাইল চিত্র
শেষ পর্যন্ত বিজেপির রথযাত্রার অনুমতি দিল না রাজ্য সরকার। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী শনিবার শেষ লগ্নে রাজ্য সরকার বিজেপির রাজ্য দফতরে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়, রথযাত্রার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। একই সঙ্গে তাদের জানানো হয়েছে, সভা করতে চাইলে স্থানীয় থানার কাছ থেকে নতুন করে অনুমতি নিতে হবে।
সরকারের এই বক্তব্য জানার পরেও বিজেপি অবশ্য যাত্রার সিদ্ধান্তে অটল। তবে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এই রকম একটি প্রস্তাব আসবে, সেটা বিজেপি নেতৃত্ব ধারণা করতে পারেননি। তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট, পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে তারা কিছুটা বিভ্রান্ত। আইনের পথে যাওয়া, পথে নেমে আইন অমান্য করা, কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ চাওয়া ইত্যাদি সব পথই তারা আপাতত খোলা রাখতে চাইছে।
বিজেপি সূত্রের খবর, এ দিন রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ তাদের রাজ্য দফতরে চিঠিটি ফ্যাক্স করে রাজ্য সরকার। তিন পাতার চিঠিতে বলা হয়েছে, গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, যাত্রা ঘিরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দলের মতো ‘উগ্র’ হিন্দুত্ববাদী সংগঠন যাত্রায় অংশ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি করতে পারে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কমলনাথের শপথে যেতে পারছেন না মমতা
চিঠি দেখার পরে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আদালতের দরজা খোলা আছে। প্রয়োজনে আমরা আইন অমান্য করব। গ্রেফতার হব। কিন্তু যাত্রা হবেই।’’ দলীয় সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আলোচনা শুরু হয়েছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গেও। রাজ্য দলের এক নেতার কথায়, ‘‘প্রমাণ হয়ে গেল, এ রাজ্যে কোনও গণতান্ত্রিক দল রাজনৈতিক কর্মসূচিটুকুও পালন করতে পারে না। আইন-শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। আমরা এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চাইব।’’ বিজেপির আরও দাবি, তাদের যাত্রা ‘রাজনৈতিক’। রথযাত্রা নয়, তারা ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’ করতে চায়। এর সঙ্গে আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দলের কোনও সম্পর্ক নেই। বৃহস্পতিবার লালবাজারেও এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তাঁরা স্পষ্ট করেছিলেন বলে বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়েছেন।
বিজেপির যাত্রা নিয়ে শনিবার দিনভর বৈঠক চলে নবান্নে। দফায় দফায় আলোচনায় বসেন রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা), এডিজি (আইবি) এবং রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা। তার আগে অবশ্য সব জেলাশাসক এবং জেলা গোয়েন্দা বিভাগের থেকে যাত্রা হলে কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, সে সম্পর্কে রিপোর্ট আনিয়ে নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: মেয়ের থেকেও বেশি স্নেহ! খুন করে ট্রলিব্যাগে ভাইপোর দেহ পাচার কাকিমার
পুলিশ মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, সমস্ত রিপোর্টেই যাত্রা ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হওয়ার আশঙ্কার কথা বলা ছিল। তা ছাড়া, ডিসেম্বরের শেষ থেকে রাজ্যে একাধিক অনুষ্ঠান আছে। সেখানে পুলিশ বাহিনীর একটি বড় অংশ ব্যবহার করতে হবে। ফলে অত বড় যাত্রার জন্য পৃথক ভাবে পুলিশের বন্দোবস্ত করা সম্ভব নয়।
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, রাজ্যের কৌশল হল, সময়ের ঘেরাটোপে বিজেপির যাত্রাকে বেঁধে ফেলা। নবান্নের প্রস্তাব বিজেপি না মানলে লড়াই সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে। তাতে সময় গড়িয়ে লোকসভা ভোটের কাছাকাছি চলে যাবে। তখন বিজেপির পক্ষে তাদের পরিকল্পনামাফিক রাজ্য জুড়ে ৪২ দিনের কর্মসূচির বাস্তবায়ন করা কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।