ভার বিশেষজ্ঞদের
icmr

আইসিএমআর নির্দেশিকা নিয়ে মত চায় রাজ্য

প্রতিদিনই নতুন আক্রান্তের সংখ্যার মাপকাঠিতে রেকর্ড তৈরি হচ্ছে দেশে। এই অবস্থায় করোনা পরীক্ষার রূপরেখায় উল্লেখযোগ্য বদল ঘটিয়ে শুক্রবার রাতে অ্যাডভাইজ়রি জারি করে আইসিএমআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ)। তিন পাতার অ্যাডভাইজ়রির মূলত তিনটি পরামর্শ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নজর কেড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:০১
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

করোনা পরীক্ষার কৌশল বদল নিয়ে আইসিএমআরের অ্যাডভাইজ়রি কতখানি মানা সম্ভব তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। শনিবার এ কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম।

Advertisement

প্রতিদিনই নতুন আক্রান্তের সংখ্যার মাপকাঠিতে রেকর্ড তৈরি হচ্ছে দেশে। এই অবস্থায় করোনা পরীক্ষার রূপরেখায় উল্লেখযোগ্য বদল ঘটিয়ে শুক্রবার রাতে অ্যাডভাইজ়রি জারি করে আইসিএমআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ)। তিন পাতার অ্যাডভাইজ়রির মূলত তিনটি পরামর্শ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নজর কেড়েছে। তা হল— কন্টেনমেন্ট এবং নন-কন্টেনমেন্ট জ়োনের নিরিখে নমুনা পরীক্ষার পদ্ধতি বদল।

কন্টেনমেন্ট জ়োনে যেখানে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের (র‌্যাট) উপরে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, নন-কন্টেনমেন্ট জ়োনে অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে আরটি-পিসিআর, ট্রুন্যাট বা সিবিন্যাট। সেই সূত্রে কন্টেনমেন্ট জ়োনের একশো শতাংশ বাসিন্দার র‌্যাট-এর পক্ষে সায় দিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।

Advertisement

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

অ্যাডভাইজ়রির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য হল, ভিন দেশ বা রাজ্য থেকে আগত ব্যক্তিদের সুস্থতার প্রমাণ হিসাবে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট জমা করতে হবে। এ রাজ্যে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া করোনা পরীক্ষা করানোর সুযোগ নেই। বস্তুত, সরকারি বা বেসরকারি স্তরে উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিরই যাতে করোনা পরীক্ষা হয়, তার উপরেই জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। তৃতীয় পরামর্শ, কেউ চাইলে করোনা পরীক্ষা করাতেই পারেন।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

অ্যাডভাইজ়রি কার্যকর করার বিষয়টি রাজ্যগুলির হাতেই ছেড়ে রেখেছে আইসিএমআর। যার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যসচিব বলেন, ‘‘আইসিএমআরের অ্যাডভাইজ়রি আমাদের টেস্টিং বিশেষজ্ঞরা খতিয়ে দেখছেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণ জানার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’ ভিন রাজ্য বা দেশ থেকে আগতদের কাছ থেকে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট কি চাওয়া হবে? স্বাস্থ্যসচিব জানান, এখন আগতদের থার্মাল স্ক্রিনিং করা হয়। অ্যাডভাইজ়রির নতুন বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থার অ্যাডভাইজ়রি প্রসঙ্গে কমিউনিটি মেডিসিনের প্রফেসর তথা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কুণাল মজুমদার বলেন, ‘‘কন্টেনমেন্ট জ়োনে উপসর্গহীন ব্যক্তিরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সংক্রমণ রোধ করতে হলে তাঁদের চিহ্নিত করা জরুরি। সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য কন্টেনমেন্ট জ়োনে একশো শতাংশ র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের কথা বলা হয়েছে। এর ফলে দ্রুত উপসর্গহীনদের খুঁজে বার করা সম্ভব হবে।’’ কোনও ব্যক্তি চাইলে টেস্ট করাতে পারেন এ প্রসঙ্গে পরিকাঠামোর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘করোনা পরীক্ষার সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার বিষয়টি জড়িত থাকায় অনেক রোগ গোপন করে যাচ্ছেন, এটা সত্যি। কিন্তু যে কেউ চাইলে পরীক্ষা করাতে পারেন সেটা বললে শুধু হবে না। তার জন্য গুণমান বজায় রেখে বিপুল সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা করার মতো পরিকাঠামো রয়েছে কিনা তাও দেখতে হবে।’’

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

স্বাস্থ্য দফতরের এক এপিডেমিয়োলজিস্টের বক্তব্য, কন্টেনমেন্ট জ়োনে একশো শতাংশ র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের ভাবনায় গলদ নেই। কিন্তু করোনা পরীক্ষা করানোর বিষয়টি ব্যক্তির ইচ্ছার উপরে ছেড়ে দিলে তা খামখেয়ালিতে পর্যবসিত হতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘কেউ চাইলে টেস্ট করাতে পারেন না বলে কোনও ব্যক্তি চাইলে আইসিএমআরের নির্দেশিকা মেনে টেস্ট করাতে পারেন বললেই ভাল হতো।’’ ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ জানান, যে সব এলাকায় অনেক আক্রান্তের সন্ধান মিলছে সেখানে কন্টেনমেন্ট জ়োন বা আক্রমণাত্মক টেস্টিং করে লাভ নেই। র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করে সম্পদ নষ্ট করা অর্থহীন। কারণ তা পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয়।

(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হলসেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দুদিনের সংখ্যা এবং তার পরের দুদিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবেদৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দুদিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement