দফতরের দাবি, ঠিক মতো খোঁজ করলে সরকারের ঘর থেকে বছরের পর বছর বেতন নিয়ে যাওয়া এমন বহু ‘বেআইনি’ কর্মী পাওয়া যাবে।
খোঁজ শুরু হয়েছিল মাস তিনেক আগে। শেষ পর্যন্ত ৫০টি সরকারি দফতরে ৩ লক্ষ ১৩ হাজার কর্মচারীর মধ্যে ১৭ হাজার ৪২৭ জন কর্মীর খোঁজ মিলেছিল, যাঁরা কোন পদে কাজ করেন সেটাই জানা যায়নি। শেষ পর্যন্ত তাঁদের সকলের জন্যই পদ তৈরির সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে অর্থ দফতরকে। শুধু ৫০টি দফতরেই সেই কাজ শেষ হচ্ছে না। স্কুল-কলেজ, পঞ্চায়েত-পুরসভা ও রাজ্যের অধীনস্থ সংস্থাগুলিতে এমন আরও কত ‘ভূতুড়ে’ কর্মী রয়েছে, তার খোঁজও শুরু করেছে অর্থ দফতর।
দফতরের দাবি, ঠিক মতো খোঁজ করলে সরকারের ঘর থেকে বছরের পর বছর বেতন নিয়ে যাওয়া এমন বহু ‘বেআইনি’ কর্মী পাওয়া যাবে। কারণ, রাজ্য সরকার সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ কর্মীর বেতন দেয় প্রতি মাসে। তার মধ্যে ৩ লক্ষ ১৩ হাজার কর্মী কাজ করেন ৫০টি দফতরে। স্কুল-কলেজ, পঞ্চায়েত, পুরসভা, সরকারি অধীনস্থ সংস্থা, কমিশন, পর্ষদে কাজ করেন প্রায় ৭ লক্ষ কর্মী। সেখানে খোঁজ করলে হাজার হাজার অনিয়মের কর্মী মিলবে বলে মনে করছেন অর্থ দফতরের কর্তারা। তাঁদের কী হবে, শুরু হয়েছে সেই চিন্তাও। এক কর্তার কথায়, ‘‘নিয়োগে অনিয়ম থাকলে বেতন বন্ধ করা উচিত ছিল। কিন্তু সাড়ে ১৭ হাজার কর্মীর ক্ষেত্রে সেই সাহস সরকার দেখাতে পারেনি। এখন আরও বড় সংখ্যায় অনিয়মের কর্মী হয়তো পাওয়া যাবে। নবান্নকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এমন সকলের পদ অনুমোদন করে দেবে কি না।’’
অর্থ দফতরের খবর, এক সময় ট্রেজারি থেকে তুলে এনে নগদে বেতন দেওয়া হত সরকারি কর্মীদের। পরে তা ব্যাঙ্কে পাঠানো শুরু হয়। এখন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এইচএমআরএস) নামে একটি বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে বেতন থেকে ছুটি, সার্ভিস বই থেকে পদোন্নতির সব কিছু নিয়ন্ত্রিত হয়। সেই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর গত জুলাইয়ে অর্থ দফতর প্রত্যেক কর্মীর নিয়োগের বৈধতা যাচাইয়ে নেমেছিল। তাতে বলা হয়, এইচএমআরএসের মাধ্যমে যাঁরা বেতন পান, তাঁরা কোন দফতরে, কোথায়, কী পদে কাজ করেন তা ‘ট্যাগ’ করা হবে। দফতরের নির্দিষ্ট সংখ্যক অনুমোদিত পদে কারা কাজ করেন তা-ও চিহ্নিত করা হয়। (এইচআরএমএস)-এর তথ্য বলছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থ দফতরের প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার জন নিজেদের সরকারি কর্মচারী হিসেবে প্রমাণ করতে পারেননি। ফলে কর্মচারী মহলে এ নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগও ছিল। সরকার অবশ্য বেতন কাটার রাস্তায় না গিয়ে সব পদ অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনিয়মের কর্মী আরও মিললে তাঁদের আর্থিক দায়ও কি নেবে রাজ্য সরকার, প্রশ্ন সেটাই।