রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে র্যাগিং রুখতে পদক্ষেপ করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। র্যাগিং মোকাবিলায় এ বার ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন রাজ্যপাল তথা আচার্য। বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে এই কথা জানানো হয়েছে রাজভবনের তরফে।
সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। যা ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্যে। এই পরিস্থিতিতে র্যাগিং রুখতে পদক্ষেপ করলেন রাজ্যপাল। বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করেছে ইসরোর চন্দ্রযান ৩। প্রথম দেশ হিসাবে ভারত এই কৃতিত্ব অর্জন করেছে। সেই সাফল্যকে সামনে রেখেই রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে র্যাগিং নির্মূল করতে ইসরোর প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্যপাল।
রাজভবনের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে র্যাগিং রুখতে উপযুক্ত প্রযুক্তিকে যাতে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে ইসরোর চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন রাজ্যপাল বোস। এই নিয়ে হায়দরাবাদে অ্যাডভান্সড ডেটা প্রসেসিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এডিআরআইএন)-এর সঙ্গেও আলোচনা করেছেন তিনি। এই বিষয়টি ফলপ্রসূ করতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউকে।
গত ৯ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের তিন তলার বারান্দা থেকে এক ছাত্র নীচে পড়ে যান। পরের দিন ভোরে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়। র্যাগিংয়ের জেরে ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়। তদন্তে নেমে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় প্রাক্তনী এবং পড়ুয়া মিলিয়ে ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
র্যাগিংয়ের অভিযোগ নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। গত মঙ্গলবার বিধানসভায় এই নিয়ে প্রস্তাব আনে বিজেপি। যাদবপুরের ঘটনায় ‘রাজ্যপাল দায়ী’ বলে বিধানসভায় পাল্টা সরব হন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার সকালে জরুরি বৈঠক ডাকেন রাজ্যপাল বোস। বৈঠকে যান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য। রাজভবনের ফটক দিয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায় রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়কেও। তিনি আচার্যের তৈরি করে দেওয়া অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির মাথায় রয়েছেন। যদিও বৈঠকে কী নিয়ে কথা হয়েছে, তা দিনভর জানা যায়নি। বৃহস্পতিবার রাতে বিবৃতি দিয়ে র্যাগিং মোকাবিলায় পদক্ষেপের কথা জানাল রাজভবন।
অন্য দিকে, ইসরোর সঙ্গে যাদবপুরের যোগসূত্র রয়েছে। চাঁদের মাটিতে ল্যান়্ডার বিক্রমের ‘পাখির পালকের মতো অবতরণ’ (বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় যার নাম ‘সফ্ট ল্যান্ডিং’) কর্মসূচিতে ইসরোর সহযোগীর ভূমিকায় ছিল দেশের কয়েকটি প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই তালিকার অন্যতম নাম যাদবপুর। রাজ্যের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরফে অবতরণের প্রকল্পে নেতৃত্বের মধ্যে ছিলেন পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অমিতাভ গুপ্ত এবং ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক সায়ন চট্টোপাধ্যায়। ছিলেন আরও কয়েক জন গবেষকও।