রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (বাঁ দিকে) এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশের দুই শীর্ষকর্তার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চাইলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
ওই দুই পুলিশ কর্তা হলেন কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এবং ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। তাঁদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। রাজ্যপাল জানতে চেয়েছেন, সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে দুই পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করেছে নবান্ন। একই সঙ্গে কোচবিহারের মাথাভাঙা এবং উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার ঘটনায় সিবিআই তদন্ত নিয়েও তিনি রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন নবান্নের কাছে।
সোমবার সন্ধ্যায় রাজভবনের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে রাজ্যপাল নিজেই জানিয়েছেন ওই রিপোর্ট তলব করার কথা। তাতে লেখা হয়েছে, ‘‘সংবিধানের ১৬৭ নম্বর ধারায় রাজ্যপালকে দেওয়া ক্ষমতার ভিত্তিতে রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দু’টি বিষয়ে রিপোর্ট চেয়েছেন রাজ্যপাল। ১. কলকাতা পুলিশ কমিশনার এবং ডিসি (সেন্ট্রাল)-এর বিরুদ্ধে রাজভবনের তরফে যে রিপোর্ট ভারত সরকার এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছিল, তার ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী কোনও ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না এবং ২. প্রকাশ্যে এক মহিলাকে বিবস্ত্র করে মারধর এবং সালিশি সভায় যুগলকে মারধরের যে ঘটনায় পুলিশ তেমন কোনও পদক্ষেপই করেনি, সেই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত কি না।
রবিবারেই সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছিল, কলকাতার দুই পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যে অভিযোগ করেছিলেন রাজ্যপাল, তার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ওই দুই অফিসারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। প্রসঙ্গত, জুনের শেষ সপ্তাহে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে দেওয়া রিপোর্টে রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন, রাজ্যপালের পদকে ‘কলঙ্কিত’ করছেন কলকাতা পুলিশের দুই শীর্ষকর্তা। গত ৪ জুলাই ওই রিপোর্টের প্রতিলিপি পাঠানো হয় রাজ্য সরকারের কাছেও। রাজ্যপালের ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে দুই পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক পদক্ষেপের প্রক্রিয়া শুরু করলেও ‘অভিযুক্ত’ দুই আইপিএসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রয়েছে তাঁদের বর্তমান উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। অর্থাৎ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্র (পুলিশ) মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সোমবার তারই রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে চেয়ে পাঠালেন রাজ্যপাল।
অন্য দিকে, কোচবিহারের মাথাভাঙা এবং উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার ঘটনায় পুলিশি ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগ এনে সিবিআই তদন্তের কথাও বলেছেন রাজ্যপাল। গত ৩০ জুন চোপড়ায় এক যুগলকে রাস্তায় ফেলে পেটানোর অভিযোগ উঠেছিল এলাকার তৃণমূল নেতা তাজিমুল ইসলামের বিরুদ্ধে। আর মাথাভাঙায় এক মহিলাকে প্রকাশ্যে বিবস্ত্র করে মারধরের অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে চোপড়ার ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে। মাথাভাঙার ঘটনাতেও গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তদের। পরে ওই দুই ঘটনায় আক্রান্তদের সঙ্গে দেখা করতে রাজ্যপাল উত্তরবঙ্গে গেলেও চোপড়ার নির্যাতিতরা তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি। রাজ্যপাল দু’টি ঘটনাতেই পুলিশি ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগ করে সিবিআই তদন্তের কথা বলেছেন।