চিকিৎসকের অভাব মেটাতে তাঁদের স্বেচ্ছাবসরের উপর নিষেধাজ্ঞা বসিয়েছিল রাজ্য। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এ বার সেই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সরকার জোর ধাক্কা খেল। তিন সরকারি চিকিৎসককে স্বেচ্ছাবসর ও অবসরকালীন সমস্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালত।
এর আগে এই মামলায় ‘স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুন্যাল’ এবং কলকাতা হাইকোর্টে হেরে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। তার পরেও হাল না ছেড়ে তারা সুপ্রিম কোর্টে যায়। সেখানে হেরে যাওয়ার পর এ বার স্বাস্থ্য দফতরের অনেকেই মনে করছেন, এই রায়কে হাতিয়ার করে অনেক চিকিৎসক এবং শিক্ষক চিকিৎসকই এ বার স্বেচ্ছাবসর চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবেন। সে ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাবসর না-দিয়ে চিকিৎসকদের ধরে রাখার সরকারি চেষ্টা ভবিষ্যতে কতটা সফল হবে, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হল।
বীরভূমের সিউড়ি ডাঙালপাড়ার বাসিন্দা শ্রবণকুমার ঘোষ রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালের, দ্বিজবন্ধু সরকার কোচবিহার সদর হাসপাতালের এবং অঞ্জন গুহ আসানসোল হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন। তিন জনই ২০১১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছাবসর চেয়ে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। রাজ্য সেই আবেদন মঞ্জুর করেনি। গত ২৬ অক্টোবর দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি অনিল দাভে এবং বিচারপতি আদেশকুমার গোয়েলের ডিভিশন বেঞ্চ মামলার রায়ে তিন চিকিৎসককেই আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে আইন মেনে অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বন্দোবস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। ওই তিন চিকিৎসকই জানিয়েছেন, এটা দেশের আইন-ব্যবস্থার জয়, তাঁদের অধিকারের জয়।
রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, এই রায়কে সামনে রেখে অন্য চিকিৎসকেরাও যদি স্বেচ্ছাবসরের দাবিতে আদালতে যান, সে ক্ষেত্রে সরকার কী ভাবে তার মোকাবিলা করবে? তাঁর জবাব, ‘‘এখনও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতিলিপি চোখে দেখিনি। শুধু শুনেছি। দেখা যাক, কী হয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। এত আগে থেকে চিন্তা করে লাভ নেই।’’
ওই তিন চিকিৎসকের আইনজীবী শমীক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এক জন সরকারি চাকুরিজীবী হিসাবে সার্ভিস রুল মেনেই আমার
মক্কেলরা স্বেচ্ছাবসরের আবেদন করেছিলেন। অথচ রাজ্য সরকার টালবাহানা করে তাঁদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনও সহযোগিতাই করেনি। উল্টে, একের পর এক মামলা করে তিন চিকিৎসককে আইনি লড়াইয়ে জড়িয়েছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ২০১৪ সালে সার্ভিস রুলে স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনের সংশোধন করে সরকার। কিন্তু, ওই তিন চিকিৎসক আইন সংশোধন হওয়ার বহু আগেই স্বেচ্ছাবসরের
আবেদন করেছিলেন।
রাজ্য স্বেচ্ছাবসরের আবেদনে সাড়া না দেওয়ার এঁরা প্রত্যেকেই হাসপাতাল থেকে দায়িত্ব ছেড়ে দেন। অস্থি চিকিৎসক শ্রবণকুমার ঘোষ এ দিন জানান, দীর্ঘ ১৬ বছর একটানা এক পদে এক হাসপাতালে একা কাজ করেছেন। তার আগে গ্রামাঞ্চলেও ছিলেন। বাবা-মার অসুস্থতায় কিংবা সন্তানদের গুরুত্বপূর্ণ
পরীক্ষায় ছুটি চেয়েও পাননি। ‘‘কর্মজীবনে টানা শারীরিক, মানসিক এবং পারিবারিক চাপে তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছিলাম। তাই সার্ভিস রুল মেনেই স্বেচ্ছাবসরের আবেদন করি,’’— বলেন শ্রবণবাবু। একই অভিজ্ঞতা দ্বিজবন্ধুবাবু এবং অঞ্জনবাবুরও। তাঁরা বলেন, ‘‘প্রাপ্য অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করেছে রাজ্য সরকার। আমরা ঠিকই করেছিলাম, এর শেষ দেখে ছাড়ব!’’