Swasthya Sathi

স্বাস্থ্যসাথী: পূর্ণ শুশ্রূষা না-হলে পুরো টাকা নয়

এক শ্রেণির হাসপাতালের বিরুদ্ধে এত দিন অভিযোগ ছিল, রোগীর অসহায়তার সুযোগে তারা চিকিৎসার নামে বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিমার টাকা আত্মসাৎ করছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৫২
Share:

রেফারের ক্ষেত্রে যত দিন হাসপাতালে থাকার পরে রোগীকে অন্যত্র পাঠানো হবে, শয্যার ভাড়া নেওয়া যাবে ঠিক তত দিন পর্যন্ত। প্রতীকী ছবি।

রোগীর অস্ত্রোপচার সফল না-হলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল আর স্বাস্থ্যসাথী প্যাকেজের পুরো টাকা দাবি করতে পারবে না। তারা সংশ্লিষ্ট রোগীর চিকিৎসা-ব্যয়ের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত চাইতে পারবে বলে নতুন নিয়ম চালু করল রাজ্য সরকার। অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেই শুধু নয়, রোগীর কত দূর চিকিৎসা হলে ওই প্রকল্প থেকে কত কাটা যাবে, শুশ্রূষার পর্ব ভাগ করে তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন।

Advertisement

এক শ্রেণির হাসপাতালের বিরুদ্ধে এত দিন অভিযোগ ছিল, রোগীর অসহায়তার সুযোগে তারা চিকিৎসার নামে বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিমার টাকা আত্মসাৎ করছে। রাজ্য সরকারের রোগী কল্যাণ কর্মসূচি স্বাস্থ্যসাথী চালু হওয়ার পরে রোগী সুস্থ হোন বা না-হোন, সেই প্রকল্পের টাকাও নিঃশেষে নিংড়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। তাতে ক্ষতি হচ্ছে দু’ভাবে। প্রথমত, রোগীর যা হওয়ার, তা তো হলই। সেই সঙ্গে তাঁর স্বাস্থ্যসাথীতে প্রাপ্য পুরো টাকা শেষ হয়ে গেল। দ্বিতীয়ত, ওই প্রকল্পে সরকারই যে-হেতু টাকা জোগায়, তাই তাদেরও ভাঁড়ার থেকে বেরিয়ে গেল বাড়তি অর্থ। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুযোগ নিয়ে অহেতুক বেশি খরচ বন্ধ করার জন্যই চিকিৎসার কোন পর্ব পর্যন্ত এগোলে স্বাস্থ্যসাথীর কত টাকা নেওয়া যাবে, তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।।

স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরেই বেশ কিছু বিষয় খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালে ভর্তির পরে চিকিৎসা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই রোগীর মৃত্যু ঘটছে। আবার অনেক রোগীকে চিকিৎসা শুরুর আগেই ‘রেফার করা’ বা অন্য কোনও আরোগ্য নিকেতনে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কখনও কখনও সফল হচ্ছে না অস্ত্রোপচার। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোম ওই চিকিৎসা বাবদ রোগীর চিকিৎসার প্যাকেজে থাকা পুরো টাকা ‘ক্লেম’ বা দাবি করছে। এবং তা পেয়েও যাচ্ছে। এর ফলে রোগীর স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের পাঁচ লক্ষ টাকা থেকে সেই খরচ কেটে তো নেওয়া হচ্ছেই, তাতে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে সরকারেরও। কারণ, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের টাকা সরকারকেই জোগাতে হয়। কিন্তু যিনি ওই প্রকল্পের উপভোক্তা অর্থাৎ রোগীর চিকিৎসা পরিষেবা সম্পূর্ণ হচ্ছে না। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে মানুষকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়াই লক্ষ্য। সেখানে পুরো চিকিৎসা না-দিয়ে পুরো টাকা আদায় করা বা পেয়ে যাওয়া অনৈতিক। তাই সরকারের তরফে নতুন নিয়ম জারি করা হয়েছে।”

Advertisement

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রেফার বা অন্য যে-কোনও কারণে যদি রোগীর চিকিৎসা সম্পূর্ণ না-হয়, তা হলে পাঁচ লক্ষ টাকা থেকে সংশ্লিষ্ট প্যাকেজের টাকা পুরো পাওয়া যাবে না। সে-ক্ষেত্রে সরকারের নির্ধারিত টাকাই পাওয়া যাবে। ধরা যাক, কোনও রোগীর অস্ত্রোপচারের জন্য সব ব্যবস্থা করা হল। কিন্তু কোনও কারণে শেষ পর্যন্ত অস্ত্রোপচারই হল না। সে-ক্ষেত্রে প্যাকেজের সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ দাবি করা যাবে। রেফারের ক্ষেত্রে যত দিন হাসপাতালে থাকার পরে রোগীকে অন্যত্র পাঠানো হবে, শয্যার ভাড়া নেওয়া যাবে ঠিক তত দিন পর্যন্ত। ভর্তির পরে কোনও ‘প্রসিডিয়োর’ চালানো বা পরীক্ষা করার পরে রোগীকে অন্যত্র রেফার করা হলে কিংবা রোগীর মৃত্যু হয়ে থাকলে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত টাকা দাবি করা যাবে। রেফারের ক্ষেত্রে বাকি ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ টাকা দাবি করতে পারবে দ্বিতীয় হাসপাতাল।

স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানান, শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন নেই, এমন রোগী ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা গেলে প্যাকেজের ১৫ শতাংশ দাবি করা যাবে। আবার অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি সফল না-হলে স্টেন্টের দাম ও প্যাকেজের ৩০ শতাংশ দাবি করতে পারবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement