প্রতীকী চিত্র।
আরও এক দফা বাড়তে চলেছে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন। পে ব্যান্ড-টু থেকে পে ব্যান্ড-থ্রিতে ইতিমধ্যেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন কাঠামোকে। কিন্তু অনেক দিন ধরে যাঁরা চাকরি করছেন, তাঁরা কিন্তু বেতন কাঠামোর এই পরিবর্তনের পূর্ণ সুফল পাচ্ছিলেন না। প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠনের দাবি মেনে নিয়ে অবশেষে সিনিয়র শিক্ষকদের ক্ষেত্রে পৃথক ‘ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর’-এর ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিল শিক্ষা দফতর। মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই সে নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন বলে খবর।
মূল বেতন বা বেসিক পে হল ব্যান্ড পে এবং গ্রেড পে-র যোগফল। কোনও সরকারি কর্মী বা শিক্ষকের পে ব্যান্ড পরিবর্তিত হওয়ার অর্থ হল ব্যান্ড পে এবং গ্রেড পে বদলে যাওয়া। অর্থাৎ বেসিক পে বদলে যাওয়া।
প্রাথমিক শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গোটা দেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন কাঠামোরও উন্নয়ন ঘটেছে। বাকি ছিল পশ্চিমবঙ্গ। প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন শুরু করেছিল বেতন কাঠামোর উন্নয়নের দাবিতে। সম্প্রতি রাজ্য সরকার সে দাবি মেনে নেয়। প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন কাঠামোকে পে ব্যান্ড-টু থেকে পে ব্যান্ড-থ্রিতে নিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু যে প্রাথমিক শিক্ষকরা দীর্ঘ দিন ধরে চাকরি করছেন, বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধির সুবাদে তাঁদের ব্যান্ড পে এমনিতেই পে ব্যান্ড-থ্রিয়ের ন্যূনতম ব্যান্ড পে-র অঙ্ককে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তাই এই বেতন বৃদ্ধির সুফল জুনিয়ররা যতটা পেতে চলেছিলেন, সিনিয়রদের ক্ষেত্রে ততটা না মেলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।
আরও পড়ুন: যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত সাঁতার কোচের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির ঘোষণা রিজিজুর
কয়েক বছর ধরে চাকরি করছেন, এমন কোনও প্রাথমিক শিক্ষকের ক্ষেত্রে এত দিন (পে ব্যান্ড-টু) ব্যান্ড পে ছিল ৬হাজার৭০০ টাকার মতো। আর যাঁরা অনেক দিন ধরে চাকরি করছেন, বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধির সুবাদেই তাঁদের ব্যান্ড পে ৯ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তাই বেতন কাঠামো পে ব্যান্ড-টু থেকে পে ব্যান্ড-থ্রিতে পৌঁছনোর ফলে ন্যূনতম ব্যান্ড পে বেড়ে যদি ৭ হাজার ৪৪০ টাকায় পৌঁছয়, তা হলে জুনিয়র শিক্ষকদের লাভ হচ্ছে অনেকটাই। কিন্তু যাঁদের ব্যান্ড পে আগেই ওই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল, তাঁদের বেতন বৃদ্ধি সে ভাবে হচ্ছিল না। এই কথা মাথায় রেখেই ‘১.২৪ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর’ পদ্ধতি প্রয়োগ করে সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণের দাবি তুলছিল বিভিন্ন সংগঠন। বিজেপি প্রভাবিত সংগঠন ডব্লুবিপিটিটিএ-র নেতা পিন্টু পাড়ুই জানিয়েছেন, বুধবার বিধানসভায় নিজের ঘরে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তার পরে সিনিয়র শিক্ষকদের নতুন বেতন নির্ধারনের ক্ষেত্রে ১.২৪ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর পদ্ধতি প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন দফতরের কর্তাদের।
আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে প্রায় ২০০০ সেনা মোতায়েন পাকিস্তানের, কড়া নজর রাখছে ভারত
এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হলে সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন কাঠামো কেমন দাঁড়াতে পারে। ধরা যাক, পে ব্যান্ড-টুতে থাকাকালীনই কারও ব্যান্ড পে ৯ হাজার ২০ টাকাতে পৌঁছে গিয়েছে। তা হলে নতুন পে ব্যান্ডে (পে ব্যান্ড-থ্রিতে) তাঁর ব্যান্ড পে হবে ৯,০২০X১.২৪=১১,১৮৫ টাকা। এর সঙ্গে যোগ হবে ৩ হাজার ৬০০ টাকা গ্রেড পে (সেটা জুনিয়রদের ক্ষেত্রেও হবে)। অর্থাৎ পুরনো পে ব্যান্ডে যে শিক্ষকের ব্যান্ড পে ছিল ৯ হাজার ২০ টাকা, নতুন পে ব্যান্ডে তাঁর বেসিক পে হবে ১১,১৮৫ + ৩৬০০ = ১৪,৭৮৫ টাকা। এর পরে ডিএ, এইচআরএ, মেডিক্যাল অ্যালাউন্স নিয়ে তাঁর বেতন পৌঁছে যাবে ৩৫ হাজার ৭৮৫ টাকায়।
পিন্টু পাড়ুই বলেন, ‘‘আমরা বুধবার বিধানসভায় গিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। সিনিয়র শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ১.২৪ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর পদ্ধতি প্রয়োগ করার নির্দেশ তিনি আমাদের সামনেই দিয়েছেন। ১ অগস্ট থেকেই ওই নিয়ম কার্যকর হিসেবে ধরা হবে বলেও শিক্ষামন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন।’’