রাজ্যে ডেঙ্গি-জ্বরের যথাযথ তথ্য কেন্দ্রে পৌঁছচ্ছে না বা প্রকাশ্যে আসছে না বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তদন্তকারীদের পর্যবেক্ষণ। এ বার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দূষণের, বিশেষত বায়ুদূষণের তথ্য গোপন করার অভিযোগও উঠল। পরিবেশ আদালত বারবার বলা সত্ত্বেও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বায়ুদূষণ সংক্রান্ত তথ্য গোপন করছে বলে মঙ্গলবার জাতীয় পরিবেশ আদালতে অভিযোগ করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত।
পরিবেশ আদালত গত এক বছরে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত কী কী নির্দেশ দিয়েছে এবং তার ক’টি মানা হয়েছে, সুভাষবাবু এ দিন তার সবিস্তার তালিকা আদালতে বেশ করেন। দেখা যায়, আদালত যে-দশটি নির্দেশ দিয়েছে, তার কোনওটাই পুরোপুরি বলবৎ করা হয়নি। বিশেষ করে দিনের বিভিন্ন সময়ে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় দূষণের পরিমাণ কত থাকছে, বারবার চেয়েও পর্ষদের কাছ থেকে তা পাওয়া যাচ্ছে না।
সুভাষবাবুর অভিযোগ, আদালতে শুনানি থাকলেই বিষয়টি তোলা হয়, কিন্তু কোনও সুরাহা হচ্ছে না। তাই মার্কিন দূতাবাসের দেওয়া তথ্যকেই গবেষণা এবং অন্য প্রয়োজনে ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন গবেষকেরা। তিনি আদালতে বলেন, এক-এক সময়ে দিল্লিকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে কলকাতার বায়ুদূষণ। কিন্তু দূষণ মাপাই বন্ধ করে দিয়েছে পর্ষদ। বাস্তব চিত্র লুকোতেই এটা করা হচ্ছে। রাজ্যের পরিবেশ দফতর নিজেরা দূষণের তথ্য দিচ্ছে না, আবার মার্কিন দূতাবাসের তথ্যও ঠিক বলে মানতে চাইছে না। পরিবেশ দফতরের কর্তাদের মতে, কলকাতার মার্কিন দূতাবাস নিয়ম মেনে যন্ত্র বসায়নি। তার ফলে ভুল তথ্য ধরা পড়ছে। পর্ষদ ঠিক তথ্য প্রকাশ করছে না কেন, প্রশ্ন, সুভাষবাবুর।
পর্ষদকর্তারা জানান, মাঝখানে তাঁদের যন্ত্র বন্ধ রাখা হয়েছিল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। ধীরে ধীরে তা চালু করা হবে। তবে পরিবেশকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, পর্ষদের বেশির ভাগ যন্ত্রই মনুষ্যচালিত। বুড়ি ছোঁয়ার মতো সপ্তাহে দু’-এক দিন সেগুলির সাহায্যে দূষণ মাপা হয়। এমন দায়সারা কাজে খুশি নয় পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন সবুজ মঞ্চ। এ বার তারাই দূষণ মাপবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। পরিবেশকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, দিল্লির দূষণ নিয়ে তোলপাড় চলছে। কিন্তু কলকাতার দূষণ নিয়ে পরিবেশ আদালতের তরফে এখনও কোনও কড়া পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। সুভাষবাবু বলেন, ‘‘কলকাতার দূষণ ঠেকাতে পরিবেশ আদালত ১৬ মাস আগে কিছু নির্দেশ দিয়েছিল। সরকার তার একটাও রূপায়ণ করেনি। আমি সেই বিষয়ে হলফনামা জমা দিয়েছি। কিন্তু সুবিচার পাচ্ছি না।’’
পর্ষদের আইনজীবী অর্পিতা চৌধুরী এ দিনও তাঁর মক্কেলের হয়ে হলফনামা জমা দেওয়ার সময় চেয়েছেন। পর্ষদের অন্দরের খবর, দূষণের তথ্য কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না, তার জুতসই জবাব কর্তাদের কাছে নেই। আদালতকে কী বলা হবে, তার সদুত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না পর্ষদের আইন শাখার কর্তারা। তাই পর্ষদ হলফনামা তৈরি করে উঠতে পারেনি।
আদালতের বাইরে সুভাষবাবুর আক্ষেপ, ১৬ মাস আগেকার নির্দেশ মানছে না দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। কেন মানছে না, আদালতে তার ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি। আদালত যদি নিজেদের নির্দেশ মানতে বাধ্য করাতে না-পারে, তা হলে মামলা চালিয়ে কী লাভ— প্রশ্ন তুলেছেন সুভাষবাবু।