West Bengal government

‘অবাধ’ বরাদ্দ বজায় রাখতে জোর অডিটে

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, কেন্দ্রের অবাধ বরাদ্দের প্রশ্নে এই প্রক্রিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান পরিস্থিতিতে তা মোটেই হালকা ভাবে নিতে চাইছে না প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৩ ০৬:১৫
Share:

নাবান্ন। ফাইল চিত্র।

পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি কী ভাবে ব্যবহার করেছে, তার অডিট শুরু করার নির্দেশ দিল রাজ্য সরকার। সম্প্রতি প্রায় প্রতিটি জেলাশাসককে লিখিত ভাবে রাজ্য জানিয়েছে, ২০২১-২২ আর্থিক বছরের বরাদ্দ নিয়ে ২০টি জেলার গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে অডিট-প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে। পঞ্চায়েতের সঙ্গে যুক্ত সকলকে এ ব্যাপারে তা সবিস্তার জানিয়ে রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, কেন্দ্রের অবাধ বরাদ্দের প্রশ্নে এই প্রক্রিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান পরিস্থিতিতে তা মোটেই হালকা ভাবে নিতে চাইছে না প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল।

Advertisement

আলিপুরদুয়ার, বাঁকুড়া, বীরভূম, কোচবিহার, দার্জিলিং, দুই দিনাজপুর, হুগলি, হাওড়া, ঝাড়গ্রাম, জলপাইগুড়ি, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর এবং দুই বর্ধমানের ১০৩৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতে এই অডিট হবে। ৩১ মার্চের মধ্যে অডিট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার কথা। সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের বলা হয়েছে, জেলা পঞ্চায়েত আধিকারিকেরা অডিটের নোডাল অফিসার হবেন। অডিট চলাকালীন প্রত্যেক শনিবার কার্যালয় খোলা রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট সব ব্যাপারে পঞ্চায়েতের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে প্রস্তুত করে রাখবেন নোডাল অফিসার। অডিটরদের সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা করার নির্দেশও দিয়েছে পঞ্চায়েত দফতর।

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পাওয়ার প্রশ্নে অডিট রিপোর্টের উপরে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অতীতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ নিয়ে তৈরি বিতর্কে কেন্দ্র এই ধরনের অডিটের তথ্য নিয়েও কার্যত প্রশ্ন তুলেছিল। গত বছরের মাঝামাঝি রাজ্যে এসে কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী একশো দিনের কাজ-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় বরাদ্দের প্রেক্ষিতে অডিট রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। যদিও রাজ্যের বরাবরের দাবি, নিয়মমাফিক সব প্রক্রিয়া কার্যকর করা হয়। সেই তথ্যও পাঠানো হয় কেন্দ্রের কাছে। তবু এখনকার পরিস্থিতিতে সরকারি পদ্ধতিতে ন্যূনতম খামতি রাখতে না-চাওয়ার কারণেই সম্ভবত এই অডিটের উপর বাড়তি জোর দিচ্ছে রাজ্য।

Advertisement

বিভিন্ন অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ রয়েছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা এবং একশো দিনের কাজের প্রকল্পের কেন্দ্রীয় বরাদ্দ। রাজ্যের অভিযোগ, প্রতিটি ক্ষেত্রে বার বার পর্যাপ্ত তথ্য দেওয়ার পরেও এগুলির বরাদ্দ চালু করছে না কেন্দ্র। তবে প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, এই দু’টি প্রকল্পের বরাদ্দ বন্ধ থাকলেও, জলজীবন মিশন, স্বচ্ছ ভারত, অর্থ কমিশন, সড়ক পরিকাঠামোর নানা ক্ষেত্রে কেন্দ্রের বরাদ্দ এখনও অবাধ রয়েছে। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই কড়া নজর রেখেছে কেন্দ্র। রাজ্যের এখনকার আর্থিক পরিস্থিতিতে আর কোনও প্রকল্পে বরাদ্দ আটকে গেলে সমস্যা আরও বাড়বে। তাই অডিটের মতো ‘বাধ্যতামূলক’ প্রশাসনিক কাজকর্মগুলি সম্পর্কে সর্বস্তরের আধিকারিকদের সতর্ক করা হচ্ছে।

পর্যবেক্ষকেরা জানাচ্ছেন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে অর্থ কমিশনের বরাদ্দের গুরুত্ব অনেক। এতে নির্ধারিত (টায়েড) এবং অনির্ধারিত (আন-টায়েড) খাতে বিপুল বরাদ্দ থাকে। তা দিয়ে পানীয় জল, নিকাশি-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অন্যান্য পরিকাঠামো নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা যায়। ২০২১-২২ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের মধ্যে নির্ধারিত খাতে গোটা দেশের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১.৪২ লক্ষ কোটি টাকা। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের পাওয়ার কথা মোট ১০ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। ২৮টি রাজ্যের মধ্যে তা চতুর্থ সর্বোচ্চ। এ রাজ্যের থেকে বেশি পাচ্ছে উত্তরপ্রদেশ (২২ হাজার ৮০৮ কোটি), মহারাষ্ট্র (১৩ হাজার ৬২৮ কোটি) এবং বিহার (১১ হাজার ৭৩৬ কোটি)। রাজ্যের এক কর্তার কথায়, “এই কারণেই সম্ভবত যথাযথ ভাবে খরচ এবং কাজের গুণমান বজায় রাখতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল থেকে সব জেলাপ্রশাসনগুলিকে সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement