—প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে বাজির শব্দমাত্রা বাড়িয়ে দিল সরকার। দীর্ঘদিন ধরে এ রাজ্যে সর্বোচ্চ ৯০ ডেসিবেলের বাজি ছাড়পত্র পেত। চলতি সপ্তাহে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে, তাতে শব্দবাজি সর্বোচ্চ ১২৫ ডেসিবেল মাত্রা পর্যন্ত রাজ্যে বিক্রি হতে পারবে। আতশবাজির ক্ষেত্রে তা সর্বোচ্চ ৯০ ডেসিবেল। এই নির্দেশিকা দেখে অনেকেরই আশঙ্কা, এত দিন ধরে যে চকলেট বোমা লুকিয়ে চুরিয়ে বিক্রি হত, তা এ বার প্রকাশ্যে বিক্রি হবে। কালীপুজো, দীপাবলি মানুষের কান-প্রাণ আরও অতিষ্ঠ হবে।
সরকারি নির্দেশিকায় অবশ্য বলা হয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী একমাত্র সবুজ বাজি (পরিবেশবান্ধব বাজি) তৈরি করা, বিক্রি এবং ফাটানো যাবে। তবে পরিবেশকর্মীদের কটাক্ষ, এ রাজ্যে সবুজ বাজি তৈরি হয় এমন কারখানা তো নেই বললেই চলে। আদতে আইনি বাজি কারখানা রাজ্যে ক’টি আছে, সেটাই বড় প্রশ্ন। তাই বাজির উপদ্রব ঠেকাতে যেটুকু আগল ছিল, তা-ও সরকার তুলে দিল।
রাজ্য পরিবেশ দফতর এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তাদের যুক্তি, সুপ্রিম কোর্ট সবুজ বাজির ক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট শব্দমাত্রা বেঁধে দেয়নি। তাই এ ক্ষেত্রে গোটা দেশে যে শব্দমাত্রা আছে সেটি মেনে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী কালে আদালত যদি পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কোনও নির্দেশ দেয়, তখন সংশোধিত নির্দেশিকা দেওয়া হবে।
সরকারের অন্দরের খবর, এই নির্দেশিকা পর্ষদ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে দেয়নি। পরিবেশ দফতর থেকে এ ব্যাপারে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছিল। তিনি যা বলেছেন, সেটাই পরিবেশ দফতর পর্ষদকে বলেছে এবং পর্ষদ সেই অনুযায়ী নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। প্রসঙ্গত, রাজ্য পরিবেশ দফতর এখন খোদ মুখ্যমন্ত্রীর হাতে।
এই নির্দেশিকা দেখে রাজ্যের পরিবেশকর্মীরা যারপরনাই হতাশ। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘গত বছরও এই মাত্রা ৯০ ডেসিবেল রাখা হয়েছিল। তার পরে তো আর কোনও নির্দেশ কোর্ট দেয়নি। তা হলে এ বার আচমকা শব্দমাত্রা বাড়ানোর দরকার কী ছিল? এ রাজ্যে শব্দবাজির জন্য বহু লোক প্রাণ দিয়েছেন। এই নির্দেশিকা তাঁদের ভূমিকা মিথ্যা করে দিল।’’ তাঁর মতে, এই নির্দেশিকা আদতে এত দিন ধরে বাজির বিরুদ্ধে হাই কোর্ট এবং গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখানো।
পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, রাজ্যে শব্দবাজির পক্ষে এক দল ব্যবসায়ী আছে। তাঁদের পিছনে প্রভাবশালীদের মদত আছে। প্রতি বছর তাঁরা বাজির শব্দ মাত্রা বাড়ানোর জন্য কোর্টে যেতেন এবং শেষমেশ হারতেন। যদিও সেই ফাঁকে বেআইনি বাজি বাজারে বিক্রি হয়ে যেত। এই নির্দেশিকা সেই ব্যবসায়ীদের জিতিয়ে দিল। পরিবেশ কর্মীদের সংগঠন সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্ত বলছেন, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ২০১৭ সালে ইএনটি চিকিৎসক দুলাল বসুর নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি করে রাজ্যে বাজির শব্দ মাত্রা ৯০ ডেসিবেল রেখেছিল। সেই রিপোর্ট দেখিয়ে কোর্টে সওয়াল করা হয়। তা হলে কোন পরিস্থিতিতে শব্দ মাত্রা বাড়াতে হল? শব্দ বাজি ব্যবসায়ী লবিকে খুশি করতেই এই নির্দেশিকা।’’