প্রতীকী ছবি।
মানুষ থেকে গবাদি পশুর নানান রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কারের গবেষণায় তারা অপরিহার্য। কয়েক বছর আগেও খরগোশ, ইঁদুর, গিনিপিগের জন্য হায়দরাবাদের দিকে তাকিয়ে থাকত কলকাতা। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন’ থেকে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগারের জন্য ওই সব প্রাণী আমদানি করতে রীতিমতো নাজেহাল দশা! উড়ানের কার্গো বা মালপত্রের জায়গায় প্রাণীদের রাজ্যে আনার সময়ে পথকষ্টেই অনেকের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটছে আকছার।
এই সমস্যার মুশকিল আসান হয়ে উঠতে চাইছে রাজ্য প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন নিগম। কল্যাণীর বু্দ্ধ পার্কে বিজ্ঞানসম্মত সুপারিশ মেনে ‘ল্যাব অ্যানিম্যাল’ বা গবেষণাগারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাণী সরবরাহের একটি উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ে তুলছে তারা। বাজেট দেড় কোটি টাকা। খরগোশ ছাড়াও সুইস র্যাট, বাল্ব সি মাইস, গিনিপিগের মতো প্রাণী রাখা হবে।
বছর দুয়েক আগে বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ আইন অনুযায়ী খরগোশের মাংস বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার জেরেই বিকল্প ভাবনার সূচনা। নিগমের খবর, তখন বুদ্ধ পার্কের খামারে শুধু মাংস বিক্রির জন্য কিছু খরগোশ রাখা হতো। ‘কমিটি ফর দ্য পারপাস অব কন্ট্রোল অ্যান্ড সুপারভিশন অব এক্সপেরিমেন্টস অন অ্যানিম্যালস’-এর সুপারিশ মেনেই খরগোশ রাখার পরিকাঠামো ঢেলে সাজা হয়। এক বছর আগে কমিটির স্বীকৃতি মিলেছে।
‘‘কল্যাণীর ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ এবং কলকাতার বেলগাছিয়ায় ‘ইনস্টিটিউট অব অ্যানিম্যাল হেল্থ অ্যান্ড ভেটিরিনারি বায়োলজিক্যাল’-এর ল্যাবরেটরিতে নিয়মিত খরগোশ সরবরাহ চলছে। এ বারের লক্ষ্য, ছ’মাসের মধ্যে একটি উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়া,’’ বললেন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর গৌরীশঙ্কর কোনার।
একদা স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে খরগোশ নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে কলেরার জীবাণু সংক্রান্ত গবেষণায় আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছিলেন শম্ভুনাথ দে। কিন্তু নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘সরকারি বিধির জেরে পালিত ইঁদুর-খরগোশের অভাবে প্রাণী নিয়ে বহু নিরীক্ষাই থমকে গিয়েছে রাজ্যে।’’ বেলগাছিয়ার প্রতিষ্ঠানটির যুগ্ম অধিকর্তা তপন সাধুখাঁ জানাচ্ছেন, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগির জন্য নানা রকম রোগ প্রতিষেধক তৈরি করতেও কাজে লাগছে সরকারি খরগোশ।
মানুষের অনেক জটিল রোগ নিয়ে গবেষণাতেও ল্যাব অ্যানিম্যাল গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি বসু বিজ্ঞান মন্দিরের তরফে মধ্যমগ্রামে একটি কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। আপাতত নিজেদের গবেষণায় ইঁদুর-খরগোশ সরবরাহ করছে তারা। প্রতিষ্ঠানের তরফে প্রাণী নিয়ে গবেষণা পরিকাঠামোর দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সায়েন্টিস্ট কুলদীপ জানার কথায়, ‘‘ক্যানসার নিয়ে গবেষণায় বিভিন্ন ধরনের ইঁদুর, ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার অ্যান্টিবডি চিনতে খরগোশ নিয়ে নিরীক্ষা দরকার।’’ এই কাজে সরকারি পরিকাঠামো গড়ে উঠলে অনেকের উপকার হবে বলে মনে করেন তিনি।