অন্য সব রাজ্য ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গি-তথ্য পাঠিয়েছে, ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। তাই ৪ঠা অক্টোবরের পর পশ্চিমবঙ্গে কত জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন আর ক’জন মারা গিয়েছেন, সে বিষয়ে অন্ধকারে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তাগাদা দেওয়ার পরেও পশ্চিমবঙ্গ তথ্য পাঠাচ্ছে না বলে অভিযোগ।
নবান্নের এই মনোভাবে ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা। টানা এক মাস ধরে রাজ্য থেকে কোনও পরিসংখ্যান না যাওয়ায় মন্ত্রক উদ্বিগ্ন।
দেশের কোথাও কোনও রোগ সংক্রমণ হলে তা সঙ্গে সঙ্গেই মন্ত্রককে জানানোর কথা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, চিকুনগুনিয়া, এনসেফ্যালাইটিসের মতো যে সব রোগ ছড়ানোর পিছনে কীট-পতঙ্গ বাহক হিসেবে কাজ করে, সেই রোগের রিপোর্ট পাঠাতে হয় মন্ত্রকের অধীন জাতীয় পতঙ্গ বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের কাছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিভিন্ন রাজ্যের পাঠানো তালিকা দেখে আমরা বুঝতে পারি কোথায় কোথায় রোগটা বেশি ছড়াচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখার জন্য পরিদর্শক দল পাঠাই।’’ প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক, কীটনাশক ও ওষুধও পাঠানো হয় বলে ওই কর্তা জানান। তাঁর অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গ তথ্য গোপন করে রাখায় রাজ্যের মানুষই কেন্দ্রীয় সাহায্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জাতীয় পতঙ্গ বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের যৌথ অধিকর্তা কল্পনা বড়ুয়া বলেন, ‘‘আমাদের কাছে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের ডেঙ্গি সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে। ফলে সরকারি হিসেবে ওই রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা ১৯-এই থেমে রয়েছে।’’
পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা বলেন, ‘‘নিয়মিত যে রকম পাঠানো হয়, আমরা সে রকমই রিপোর্ট পাঠিয়েছি।’’
গত কাল রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব প্রীতি সূদনের সঙ্গে দেখা করেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী। তাঁর দাবি, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা বিশেষ করে দেগঙ্গা এলাকায় ডেঙ্গি মহামারির আকার ধারণ করেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অভিযোগ, একাধিক বার ভিডিও কনফারেন্সিং করে বা নির্দেশিকা পাঠিয়েও লাভ হয়নি। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর থেকে কোনও রিপোর্টই পাঠানো হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অভিযোগ, গত জুলাই মাসে ডেঙ্গি সংক্রান্ত একটি সার্বিক প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করে মন্ত্রক। তাতে বিভিন্ন সরকারি ও জেলা হাসপাতালের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেই প্রতিনিধিদের দায়িত্ব ছিল জেলার ছোট হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে একই ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার। মন্ত্রকের আক্ষেপ, নিচুতলায় সেই প্রশিক্ষণ শিবির হয়েছে বলেও কেন্দ্রের কাছে কোনও খবর নেই। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে এ বিষয়ে কোনও রিপোর্টই পাঠানো হয়নি তাদের। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওই অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ।