রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিমা যোজনা-ভুক্ত রোগীদেরও ভর্তুকি রাজ্যে!

রাজ্যের সর্বস্তরের সরকারি হাসপাতালে সব শয্যা এখন ‘ফ্রি’। ফলে এত দিন পেয়িং বেড, সেখানে ভর্তি হওয়া রোগীদের অস্ত্রোপচার, ডায়েট, শারীরিক পরীক্ষার খরচ বাবদ হাসপাতালের যা আয় হত, তার পথ এখন বন্ধ।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৬:৫৮
Share:

রাজ্যের সর্বস্তরের সরকারি হাসপাতালে সব শয্যা এখন ‘ফ্রি’। ফলে এত দিন পেয়িং বেড, সেখানে ভর্তি হওয়া রোগীদের অস্ত্রোপচার, ডায়েট, শারীরিক পরীক্ষার খরচ বাবদ হাসপাতালের যা আয় হত, তার পথ এখন বন্ধ। ‘রোগী কল্যাণ সমিতি’ (আরকেএস)-র টাকা রোজগারের একমাত্র পথ এখন ‘রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিমা যোজনা’ (আরএসবিওয়াই) থেকে আয়। ফলে আরএসবিওয়াই-কে জনপ্রিয় করে আরকেএস-এ টাকা আনতে মরিয়া স্বাস্থ্য দফতর এ বার আরএসবিওয়াই-ভুক্ত রোগীদের ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

Advertisement

কী রকম ভর্তুকি?

আরএসবিওয়াই-এর কার্ড থাকলে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা একই পরিবারের ৫ সদস্য এক বছরে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিত্‌সা (ওষুধ ও শারীরিক পরীক্ষা সমেত) নিখরচায় পেতে পারতেন। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যদি দেখা যায় রোগী চিকিৎসাধীন থাকাকালীন তাঁর কার্ডের ৩০ হাজার টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে অথচ চিকিৎসা তখনও অনেকটা বাকি, সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচের পুরোটাই মেটাবে রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রের খবর, পাইলট হিসেবে কলকাতার পাঁচ মেডিক্যাল কলেজে কিছু দিনের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া চালু হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সইয়ের জন্য ফাইল চলে গিয়েছে।

Advertisement

স্বাস্থ্যকর্তারা ব্যাখ্যা করেছেন, ধরা যাক আরএসবিওয়াই-এর কার্ড নিয়ে কেউ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হলেন। তাঁর চিকিৎসায় হয়তো ৭০ হাজার টাকা খরচ হল। অথচ কার্ড থেকে তিনি ৩০ হাজার টাকার চিকিৎসা নিখরচায় করাতে পারেন। নতুন নিয়মে বাকি ৪০ হাজার টাকা ওই রোগীকে মোটাতে হবে না। সরকার দিয়ে দেবে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেরই খবর, সরকার হাসপাতালের সব শয্যা ‘ফ্রি’ হওয়ার পরে প্রশ্ন উঠেছিল, মানুষ যদি অনেক পরিষেবা নিখরচায় এমনিতেই পেয়ে যান, তা হলে আর খামোখা আরএসবিওয়াই কার্ডের টাকা খরচ করতে চাইবে কেন? ফলে হাসপাতালের আয়ের অবশিষ্ট পথটুকু বন্ধ হওয়ার মুখে দাঁড়াতে পারে, এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। এ দিকে আরকেএস-এর এই টাকা থেকেই এত দিন হাসপাতালে গরিব রোগীদের দামি ইঞ্জেকশন, ওষুধ কিনে দেওয়া থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতি হঠাৎ খারাপ হয়ে গেলে সারানো, পাইপ-জেনারেটর মেরামত করা, হাসপাতাল সাফাইয়ের মতো অনেক কাজ হত। ফলে আরএসবিওয়াই-এ এমন কিছু অতিরিক্ত সুবিধা দিতে চাইছে সরকার, যাতে মানুষ আগ্রহী হয়। এবং আরকেএস-এর আয় অক্ষুণ্ণ থাকে।

কিন্তু একে মেডিক্যাল কলেজগুলি সমেত সমস্ত সরকারি হাসপাতালে সব পরিষেবা নিখরচায় চালানোর চাপ, তার উপরে আরএসবিওয়াই-এ এই অতিরিক্ত খরচের ভার বহন। ভাঁড়ারে অর্থের অনটনে এমনিতেই টলমল সরকারের পক্ষে শেষে এটা গুরুভার বোধ হবে না তো? স্বাস্থ্য দফতরের এক বড়কর্তার জবাব, ‘‘আরএসবিওয়াই-এর আওতায় থাকা কোনও গরিব রোগীর যদি ৩০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়ে যায়, তা হলে সেই অতিরিক্ত টাকা মেটানো হবে ‘স্টেট ইলনেস অ্যাসিস্ট্যান্স ফান্ড’ থেকে। এই ফান্ড থেকে কেস প্রতি বছরে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেওয়া যায়। সেই টাকার অভাব নেই।’’

কিন্তু প্রশ্ন হল, ‘ইলনেস অ্যাসিস্ট্যান্স ফান্ড’ (আইএএফ)-এর টাকার জন্য আবেদন করলে সেই টাকা পেতে মাসের পর মাস গড়িয়ে যাওয়াটাই দস্তুর। তত দিনে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচার না-হওয়ায় কত রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে পড়ে। এই রকম হলে আরএসবিওয়াই-এ কী করে চলবে?

স্বাস্থ্যকর্তারা দাবি করছেন, ফান্ডের টাকা আসতে দেরির বিষয়ে তাঁরা ওয়াকিবহাল। কিছু হাসপাতাল-কর্তার গড়িমশি এবং অজ্ঞতাকে তাঁরা এর জন্য দায়ী করেছেন। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘দেরি যাতে না হয়, তার জন্য এ বার অনলাইন ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কোনও হাসপাতালে আরএসবিওয়াই-এর আওতায় ভর্তি কোনও রোগীর টাকার প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল অনলাইনে তা সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য ভবনে জানাবে। দিনের দিন সেই টাকা অনুমোদন হয়ে হাসপাতালে চলে আসবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement