অমিত মিত্র।
টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। ন্যায্য পাওনা না-মেটানোর ফলে আর্থিক কষ্টে রাজ্য সরকার। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের দাবি, রাজ্যের পাওনা ৫৩ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লির বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে ‘রাজনীতি’ এই প্রথম নয়। প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, বাম জমানাতেও বার বার বাংলাকে বঞ্চনার অভিযোগ উঠেছে। যদিও রাজ্যের এই দাবির পাল্টা যুক্তি দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দলের ভার্চুয়াল সভায় বলেছেন, গত পাঁচ বছরে রাজ্যকে চার লক্ষ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। সেই টাকার হিসেব কই? রাজ্যের পাওনা দিতে কেন্দ্র বাধ্য। কিন্তু তার হিসেব দিতে হয়।
প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, বাজেটে কেন্দ্রীয় অনুদান বাবদ যে টাকা ধরা হয়, তার ২৫ ভাগ টাকা বছর শেষে আসে না। তার মূল কারণ, আর্থিক বছরের শুরুতেই দেওয়া প্রথম কিস্তির টাকা খরচ করতে না-পারা। যে টাকা খরচ হয়েছে, তার হিসেব দেওয়ার ক্ষেত্রে ঢিলেমিও অন্যতম বড় কারণ। সেই জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্পের প্রাপ্য টাকার বড় অংশ থেকে রাজ্য বঞ্চিত হয়ে চলেছে। নবান্নের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘এখন কেন্দ্রের টাকা পাওয়া ও তার খরচের পরিমাণ তা-ও অনেকটা বেড়েছে। কারণ, কেন্দ্র বহু প্রকল্পে সরাসরি উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেয়। অনেক প্রকল্পের টাকা দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট দফতর বা জেলাশাসকদের। আগে কেন্দ্রের সব টাকা অর্থ দফতরে আসত। তারা ‘ম্যাচিং গ্রান্ট’ জোগাড় করে বিভিন্ন দফতরে বা জেলায় পাঠাতে কয়েক মাস পেরিয়ে যেত।’’ ওই কর্তা জানান,
এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় অনুদানের উপর রাজ্যের খবরদারি নেই। বরং সময়ে ‘ম্যাচিং গ্রান্ট’ দিতে না-পারলে অর্থ দফতরকে সুদ দিতে হয়। নইলে পরের বছরের টাকা থেকে কেটে নেয় দিল্লি।
দেশে এখন ৭৩টি কেন্দ্রীয় প্রকল্প চলে। এর মধ্যে ছ’টি প্রকল্পের গুরুত্ব ও উপভোক্তা সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই ‘কোর অব দ্য কোর’ প্রকল্পগুলি হল, ১০০ দিনের কাজ, জাতীয় পরিবার সহায়তা (মূলত পেনশন প্রকল্প), তফসিলি জাতিদের জন্য অর্থ ও উন্নয়ন প্রকল্প, জনজাতিদের জন্য প্রকল্প, সংখ্যালঘুদের টাকা দেওয়া ও উন্নয়ন প্রকল্প এবং বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্য প্রকল্প। এই খরচ পুরোটাই কেন্দ্রের। উপভোক্তা-তালিকা রাজ্য তৈরি করে দিলেও টাকা বিতরণে তার কোনও ভূমিকা নেই।
আরও পড়ুন: গরিব কল্যাণে ‘বঞ্চনা’, সরব অভিষেক-অধীর
এর বাইরে ২২টি প্রকল্পের খরচ কেন্দ্র এবং রাজ্য ভাগাভাগি করে নেয়। মূলত উন্নয়নমূলক এই প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে আবাস যোজনা, সড়ক যোজনা,
নগরোন্নয়নের অম্রুত প্রকল্প, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সর্বশিক্ষা অভিযান, মিড ডে মিল, আইসিডিএস, বনসৃজন, স্বচ্ছ ভারত মিশন, স্বাস্থ্য প্রকল্প, খাদ্য প্রকল্প ইত্যাদি। এই প্রকল্পগুলির কাজ কোন রাজ্য কেমন করছে, তা দিয়েই তার উন্নয়নের অভিমুখ স্পষ্ট হয়। এ রাজ্য বরাবরই এই প্রকল্পগুলির সব টাকা খরচ করতে পারে না। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রের বরাবর বছরের শেষে টাকা দেওয়ার প্রবণতা থাকে। শেষ ভাগে টাকা দিলে খরচ করা সম্ভব হয় না। তবে ১০০ দিনের কাজ বা গ্রাম সড়ক যোজনায় আমরা যে টাকা খরচ করি, তা খুব কম রাজ্যই করতে পারে।’’
এর বাইরে আরও ৪৫টি পরিকাঠামোভিত্তিক কেন্দ্রীয় প্রকল্প আছে। যেমন সেচ বাঁধ, বিদ্যুৎ পরিকাঠামো নির্মাণ, সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহণ পরিকাঠামো, ই-প্রশাসন, খেলাধুলো-সংস্কৃতি বিকাশ ইত্যাদি। এই প্রকল্পগুলিতে এক কিস্তির টাকা পুরোপুরি খরচ হলে তবে পরের কিস্তির টাকা মেলে। যেমন আয়লার
বাঁধ দেওয়ার জন্য রাজ্য ৫০০০ কোটি টাকার প্যাকেজ পেয়েছে। ১৮০ কিমি বাঁধ দিতে ২০১১ সালে ১৩৩৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়। সেচ দফতর সেই টাকা এখনও খরচ করতে পারেনি। ফলে পরের কিস্তির টাকাও পায়নি। এ প্রসঙ্গে সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ ভাবনা সব সময় কাজ করে। রাজ্যকে টাকা দেওয়ার কথা বাদ দিন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্জুর করে আসা কলকাতার মেট্রো প্রকল্পগুলি রেল মন্ত্রক কেন শেষ করল না? কারণ, তাঁরা বাংলার উন্নতি চায় না।’’