নবান্ন। ফাইল চিত্র।
একে কাঁধে বিপুল ঋণের বোঝা। তার উপরে এক গুচ্ছ কল্যাণ প্রকল্পে মোটা অঙ্ক বরাদ্দের দায়। অথচ নিজস্ব রাজস্ব-আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হচ্ছে না সে ভাবে। প্রশাসনিক মহলের একাংশের বক্তব্য, এই ত্রিফলা আক্রমণের মুখে বাধ্য হয়েই রাজকোষ ভরতে আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরতে হচ্ছে পেট্রোপণ্যে কর এবং আবগারি শুল্ককে। নির্ভরতা বাড়ছে কেন্দ্রীয় অর্থের উপরেও। যদিও রাজ্যের দাবি, এ বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন খাত মিলিয়ে এক লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বকেয়া রয়েছে কেন্দ্রের কাছে। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের দাবি, “কেন্দ্র আমাদের বকেয়া দিচ্ছে না বলেই সমস্যা বাড়ছে।’’
রাজ্যের বাজেট তথ্যই বলছে, ২০১০-১১ (পূর্বতন বাম সরকারের শেষ বছর) থেকে ২০২০-২১ অর্থবর্ষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় অর্থের অঙ্ক ক্রমশ বেড়েছে। গোটা দেশ থেকে আদায় হওয়া করের একটা অংশ রাজ্যগুলিকে ফিরিয়ে দেয় (ডেভোলিউশন) কেন্দ্র। ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের সময়ে কেন্দ্রীয় করের ৭.২৬% পেত রাজ্য। চতুর্দশ অর্থ কমিশনে তা বেড়ে হয় ৭.৩৩%। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশে রাজ্য পাচ্ছে প্রায় ৭.৫২%। প্রবীণ এক অর্থকর্তা বলেন, “১% বৃদ্ধির মানে অতিরিক্ত প্রায় ৯০০ কোটি টাকা রাজ্যের হাতে আসা। আগে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কিছুটা অনীহা থাকলেও এখন বরং শর্ত মেনে কেন্দ্রের টাকা আনতে সব রকম পদক্ষেপ করতে বলা হচ্ছে দফতরগুলিকে।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, খরচ সামলাতে গিয়ে এ বছরের (২০২২-২৩) বাজেটে বহু দফতরের বরাদ্দ কমাতে হয়েছে। কিছু দফতরে বরাদ্দ বেড়েছে সামান্য। কিন্তু তার পরেও ঘাটতির মাথাব্যথা থেকেই যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, ধর্মশালায় মুখ্যসচিবদের বৈঠকে অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা রাজ্যগুলিকে নিত্যনতুন নগদ অর্থ বিলি প্রকল্প ঘোষণার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। তাতে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার দেউলিয়া দশার উদাহরণও টানা হয়েছিল।
জিএসটি চালুর পরে রাজ্যের নিজস্ব কর আদায়ের পরিধি কমেছে। প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এই পরিস্থিতিতে দেশে পেট্রল ডিজ়েলের দাম যত বেড়েছে, তত ‘সুবিধা’ হয়েছে রাজ্যের। কারণ, সেই সূত্রে কর আদায়ের অঙ্ক বৃদ্ধি। জিএসটির আওতায় পেট্রল-ডিজ়েলকে আনার প্রস্তাব থাকলেও, পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্য তার কার্যত বিরোধিতাই করেছে। ফলে রাজনৈতিক তরজা থাকলেও, পেট্রোপণ্যের উপর রাজ্যের কর থাকায় ২০-২৫% বেশি আয় হচ্ছে।
যদিও অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের দাবি, “কেন্দ্রআমাদের বকেয়া দিচ্ছে না বলেই সমস্যা বাড়ছে।” অর্থনীতিবিদ তথা বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ির পাল্টা দাবি, “কেন্দ্র কেন টাকা দিচ্ছে না, তা খোলসা করতে হবে রাজ্যকে।”
অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, ঘাড়ে ঋণের বোঝা কমিয়ে দেখাতে অনেক রাজ্যই বাজেটের বাইরে ঋণ নিচ্ছে। এ বিষয়ে রাজ্যগুলিকে সতর্কও করেছে কেন্দ্র। অর্থ মন্ত্রকের সিদ্ধান্ত ছিল, চলতি বছরেই এই সমস্ত ঋণকে বাজেটের খাতায় আনতে হবে। তাতে রাজকোষের আসল ছবি স্পষ্ট হবে। অবশ্য এখন কেন্দ্র জানিয়েছে, ২০২৬-এর মার্চ পর্যন্ত রাজ্যগুলি এ কাজ শেষ করার সময় পাবে। অর্থাৎ, অন্তত তার আগে ঋণের বোঝা কমানোর বন্দোবস্ত করতে হবে রাজ্যকে।