সেতুর বাড়তি বোঝার ‘ভুল’ শোধরাচ্ছে রাজ্য

২০১৮ সালে মুর্শিদাবাদে সেতুর রেলিং ভেঙে যাত্রিবাহী বাস নদীতে পড়ে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৯ ০২:২৮
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

বোঝার উপরে শাকের আঁটি নয়! লোক ও যান চলাচলের বোঝা যাদের নিত্যদিন সইতে হয়, সেই সব সেতু, উড়ালপুল, রেল ওভারব্রিজের উপরে দুর্ঘটনা রোধক বেড়া এখন অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিকর বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

Advertisement

তা হলে কি বেড়া লাগানোর ব্যাপারে উপর মহলের নির্দেশ তড়িঘড়ি বলবৎ করতে গিয়ে প্রযুক্তির ন্যূনতম নিয়মবিধির সঙ্গেই সমঝোতা করতে হয়েছিল? দীর্ঘ এক বছর পরে সরকার সেই ‘ভুল’ কার্যত স্বীকার করায় এই প্রশ্ন উঠছে পূর্ত দফতরের অন্দরেই। ভুল শোধরানোর জন্য নতুন করে পদক্ষেপ করার নির্দেশও দিয়েছে দফতর। কিন্তু এই নির্দেশের ফলে উভয়সঙ্কটে পড়তে হবে বলেই আশঙ্কা করছেন পূর্ত ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ।

২০১৮ সালে মুর্শিদাবাদে সেতুর রেলিং ভেঙে যাত্রিবাহী বাস নদীতে পড়ে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়। তার পরেই রাজ্যের সব সেতু, উড়ালপুল, রেলওয়ে ওভারব্রিজে (আরওবি) নিরাপত্তা বিধি রূপায়ণের নির্দেশ দেয় নবান্ন। রাতারাতি সেগুলিতে ‘ক্র্যাশ ব্যারিয়ার’ বা দুর্ঘটনা রোধক বেড়া তৈরির কাজও শুরু হয়ে যায়। এত দিন বাদে দফতর নির্দেশিকা দিয়ে জানাচ্ছে, নতুন ‘ক্র্যাশ ব্যারিয়ার’ লাগানোর ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেসের নির্ধারিত বিধি মেনে চলতে হবে। এত দিন ধরে সেতু-উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা না-করেই বর্তমান ক্র্যাশ ব্যারিয়ার লাগানোর ফলে কাঠামোর উপরে বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। যার ফলে আগামী দিনে বিভিন্ন সেতু, উড়ালপুল, আরওবি-র ভীষণ ক্ষতি হতে পারে। তাই কালবিলম্ব না-করে সেগুলির পরিমার্জন দরকার!

Advertisement

পূর্ত দফতরের কারিগরি বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে, ২০১৮ সাল থেকে এ-পর্যন্ত ক্র্যাশ ব্যারিয়ার লাগানোর ক্ষেত্রে কি কোনও বিধিকেই মান্যতা দেওয়া হয়নি?

ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ জানাচ্ছেন, ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেসের বিধি অনুযায়ী সাধারণত তিন ধরনের ক্র্যাশ ব্যারিয়ার ব্যবহার করা হয়।

১) ফ্লেক্সিবল বা নমনীয় বেড়া। যা খুবই হাল্কা। কোনও গাড়ি ধাক্কা মারলে এই ধরনের ক্র্যাশ ব্যারিয়ার গাড়িটিকে রাস্তার দিকে ঠেলে দিয়ে দুর্ঘটনা রোখে। উন্নত দেশগুলিতে এই ধরনের ক্র্যাশ ব্যারিয়ারের ব্যবহার বেশি।

২) সেমি রিজিড বা আধা-দৃঢ় বেড়া— ধাতব কাঠামোয় তৈরি এই ক্র্যাশ ব্যারিয়ারের ব্যবহার বাড়ছে। কারণ, তাতে কাঠামোর উপরে মাত্রাতিরিক্ত ওজন পড়ে না।

৩) রিজিড বা দৃঢ় বেড়া— কংক্রিটের তৈরি এই ক্র্যাশ ব্যারিয়ারের ওজন বাকি দু’টি ব্যারিয়ারের তুলনায় অনেক বেশি।

পূর্ত দফতরের একাংশের দাবি, বেশির ভাগ সেতুতেই কংক্রিটের ক্র্যাশ ব্যারিয়ার লাগানোয় সেতু, উড়ালপুল, আরওবি-র উপরে বাড়তি ওজন চাপছে। সমস্যা হল, এক-একটি কাঠামো এক-এক সময়ে তৈরি হয়েছে। বহু কাঠামো অনেক পুরনো। সেই সব সেতু-উড়ালপুল তৈরির সময়কার নকশায় এখনকার এই বাড়তি ওজনের পরিকল্পনা ছিল না। সে জন্য নতুন তৈরি ক্র্যাশ ব্যারিয়ারগুলি বাড়তি ‘বোঝা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পূর্ত দফতর লিখিত ভাবে তা স্বীকারও করে নিয়েছে। এখন এই ক্র্যাশ ব্যারিয়ারগুলির পরিমার্জন চাইছে সরকার। তবে ইঞ্জিনিয়ারদের কারও কারও দাবি, পরিমার্জন করতে গেলে ক্র্যাশ ব্যারিয়ারগুলিকে কাটতে হতে পারে। সেই কম্পন প্রভাব ফেলতে পারে বিভিন্ন সেতু, উড়ালপুল, আরওবি-র স্বাস্থ্যের উপরে। পাশাপাশি, ক্র্যাশ ব্যারিয়ারগুলি তৈরির সময় বিপুল খরচ করতে হয়েছিল সরকারকে। এ বার পরিমার্জনের খরচও খুব কম হবে না বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement