হাওড়া জেলার একটি স্টেশন থেকে ট্রেনে চেপেছিলেন এক দল আদিবাসী। সঙ্গে শিকার করা গোসাপ-সহ কিছু বন্যপ্রাণীও ছিল। স্টেশনের কর্মী, রেলরক্ষী বাহিনীর জওয়ানেরা তাঁদের দেখলেও কাউকে পাকড়াও করেননি। খবর যায়নি বন দফতরেও। পরে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মারফত খবর পেয়ে বনকর্মীরা কয়েক জন আদিবাসী যুবককে আটক করেন। উদ্ধার করা হয় কয়েকটি মৃত গোসাপও।
বন দফতর সূত্রের খবর, হাওড়া জেলার ওই ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন উদাহরণ নয়। বন্যপ্রাণী পাচারকারী ও চোরাশিকারিরা মাঝেমধ্যেই ট্রেনে চেপে যাতায়াত করে। রেলরক্ষী বাহিনী বা রেলের অফিসারেরা তাঁদের দেখলেও পাকড়াও করেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে রেলের সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়ে বনকর্তারা জেনেছেন, বন্যপ্রাণী ও বন্যপ্রাণ আইন নিয়ে রেলকর্মীদের অজ্ঞতা রয়েছে। তার সুযোগেই পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। এ সব ঘটনা রুখতে এ বার রেলকর্মী ও রেলরক্ষী বাহিনীর জওয়ানদের বন্যপ্রাণী ও বন্যপ্রাণ আইনের পাঠ দেবে বন দফতর।
রাজ্যের অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবীন্দ্রপাল সিংহ সাইনি জানান, প্রথমে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্মীদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কারণ, দক্ষিণবঙ্গের বড় একটি বনাঞ্চলের এবং আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার মধ্যে দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ট্রেন যাতায়াত করে। ভবিষ্যতে পূর্ব রেলকেও এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ সবের বাইরে আরও একটি বিষয় তুলে ধরছেন রাজ্যের বনকর্তাদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, দেশজুড়ে নানা ধরনের চোরাশিকার বাড়ছে। বিমানবন্দরে নজরদারি বেশি থাকার ফলে ট্রেনের পথই বেছে নিচ্ছে চোরাকারবারিরা। এর উদাহরণ হিসেবে একটি ঘটনার কথা তুলে ধরেছেন বন দফতরের এক অফিসার। তিনি জানান, সম্প্রতি শিয়ালদহে দাঁড়িয়ে থাকা একটি দূরপাল্লার ট্রেনের শৌচাগারের সামনে থেকে মুখবন্ধ বস্তা উদ্ধার করে জিআরপি ও রেলরক্ষী বাহিনী। সেটি থানায় এনে খুলতেই ভিতর থেকে একটা আস্ত ময়াল সাপ বেরিয়ে এসেছিল! অনেক সময় তক্ষকও ট্রেনে করে উত্তরবঙ্গে পাচার হচ্ছে বলে জানতে পেরেছেন বনকর্তারা। রেলকর্মীদের সচেতনতা বাড়লে এই ধরনের অপরাধও কমানো সম্ভব বলেও মনে করছেন বনকর্তারা।
বন দফতরের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রশিক্ষণের কর্মশালায় দেশের কোন কোন প্রাণী তফসিলভুক্ত, চোরাবাজারে কোন প্রাণীর চাহিদা বেশি তা যেমন শেখানো হবে, তেমনই যে যে এলাকা দিয়ে রেললাইন গিয়েছে তার আশপাশে কী কী বন্যপ্রাণী থাকে, সে ব্যাপারেও রেলকর্মীদের অবগত করা হবে। এর ফলে কোন কোন এলাকা থেকে কী কী প্রাণী পাচার হতে পারে, সে সম্পর্কেও একটা ধারণা তৈরি হবে রেলকর্মীদের।
এই ধরনের প্রশিক্ষণ যে লাভজনক হবে, তা মেনে নিচ্ছে রেলও। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখপাত্র সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘বন দফতরের প্রস্তাবকে আমরাও স্বাগত জানিয়েছি। কর্মশালা করে প্রশিক্ষণ দিলে রেলরক্ষী বাহিনী, স্টেশনকর্মীরা উপকৃতই হবেন। বন্যপ্রাণী বাঁচানোর কাজে আমরাও সহযোগিতা করতে তৎপর।’’