প্রতীকী চিত্র।
প্রতি বছরেই ‘বুক ডে’ বা পুস্তক দিবসে স্কুলপড়ুয়াদের বৃহৎ অংশকে বিনামূল্যে বইপত্র দেয় রাজ্য সরকার। কিন্তু চলতি বছরে পরপর ঘূর্ণিঝড়, দফায় দফায় বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাড়িঘরের সঙ্গে সঙ্গে অনেক ছাত্রছাত্রীরই বইখাতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই আগামী পুস্তক দিবসে শিক্ষা দফতর তাদের আবার বইখাতা দেবে বলে জানিয়েছেন ওই দফতরের পাঠ্যক্রম কমিটির এক কর্তা।
সোমবার ওই শিক্ষাকর্তা বলেন, “এ বছরের বন্যায় অনেক গ্রামেই পড়ুয়াদের ঘরবাড়ি ডুবে গিয়েছে। সেই বিপর্যয়ে বইখাতাও বাঁচাতে পারেনি অনেকে। এমনিতেই করোনার জন্য বিশেষত গ্রামাঞ্চলের বহু ছাত্রছাত্রী পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় বইখাতা না-থাকলে তাদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়বে। তাই দুর্গত পড়ুয়ারা আবেদন করলে তাদের নতুন বইখাতা দেওয়া হবে।”
প্রতি বছরেই ২ জানুয়ারি সরকারি, সরকার পোষিত এবং সরকার সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে বই দেওয়া হয়। ওই দিনটাকেই বলা হয় ‘বুক ডে’ বা পুস্তক দিবস। শিক্ষা দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, করোনা পরিস্থিতি যেমনই থাকুক না কেন, এই বছরেও ওই নির্দিষ্ট দিনে বই দেওয়া হবে। করোনা পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি না-হলে মিড-ডে মিলের জিনিসপত্র বিতরণের দিনে বইখাতাও তুলে দেওয়া হবে অভিভাবকদের হাতে। পড়ুয়াদের বই বিলির জন্য প্রয়োজনীয় কাজকর্ম প্রায় শেষ। বিভিন্ন স্কুলে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সেকশন বা বিভাগ-ভিত্তিক ক’জন পড়ুয়া রয়েছে, তার পরিসংখ্যানও চাওয়া হয়েছে জেলা স্কুল পরিদর্শকদের কাছে।
সরকারের তরফে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের বিনামূল্যে বই দেওয়া হয়। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হয় বাছাই করা কিছু বই। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশ কিছু পড়ুয়ার বইখাতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে ধরে নিয়ে কয়েক হাজার অতিরিক্ত বই ও খাতা ছাপা হয়েছে বলে জানান এক শিক্ষাকর্তা।
নষ্ট বইখাতার বদলে নতুন বইপত্র দেওয়ার সরকারি উদ্যোগকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্বাগত জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁদের একাংশের বক্তব্য, শুধু বইখাতা দিলেই হবে না। অ্যাক্টিভিটি টাস্ক বা গৃহপাঠে দেওয়া প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তিতে মার্কশিটও দিতে হবে। কারণ, গত বছর করোনার দাপটে অনলাইন বা অফলাইন, কোনও পদ্ধতিতেই পরীক্ষা না-হওয়ায় পড়ুয়াদের কেউ মার্কশিট পায়নি। মূল্যায়ন ছাড়াই সকলে পাশ করে গিয়েছে। এ বারেও অফলাইন বা স্কুলে পরীক্ষা না-হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করছেন অনেকে। তাই অ্যাক্টিভিটি টাস্ক পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে। তাতে এ বার নম্বরেরও ব্যবস্থা হয়েছে। পড়ুয়ারা গৃহপাঠে দেওয়া প্রশ্নাবলির সমাধান করে স্কুলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মতে, সেই গৃহপাঠের মূল্যায়নের পরে প্রাপ্ত নম্বরের উল্লেখ করে মার্কশিট দেওয়া জরুরি।