হেমতাবাদের বিজেপি বিধায়কের রহস্যমৃত্যুর তদন্তভার নিচ্ছে সিআইডি।
হেমতাবাদের বিধায়কের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় বিজেপি নেতৃত্ব সিবিআই তদন্তের দাবি জানালেও, রাজ্য সরকার তদন্তভার তুলে দিল হল রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি-কে। নবান্ন সূত্রে খবর, সোমবার দুপুরেই সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে। সিআইডির স্পেশ্যাল সুপারিনটেন্ডেন্ট পদমর্যাদার এক আধিকারিক ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন।
সিআইডি সূত্রে খবর, ওই আধিকারিক আজকেই প্রাথমিক রিপোর্ট দেবেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং অটোপ্সি সার্জেনের সঙ্গে কথা বলে। প্রাথমিক ভাবে জেলা পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বিধায়কের জামার পকেটে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে। সেই নোটে দুই ব্যক্তির নাম রয়েছে এবং তাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়।
অর্থাৎ, জেলা পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত আত্মহত্যার দিকেই ইঙ্গিত করছে। ২০১৬ সালে দেবেন্দ্রনাথ রায় সিপিএমের টিকিটে বিধানসভা নির্বাচনে জেতেন। পরে ২০১৯ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। তবে তিনি তাঁর বিধায়ক পদ ত্যাগ করেননি। দেবেন্দ্রনাথকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্য বিজেপি এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। বিধায়কের পরিবারেরও দাবি তাঁকে খুন করা হয়েছে।
তাঁরা বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেন।
কেন বিধায়কের ঝুলন্ত দেহে বাঁ হাতের সঙ্গে দড়ি বাঁধা? একটি দোকানের সামনের বারান্দায় দেবেন্দ্রনাথের ঝুলন্ত দেহ পাওয়া গিয়েছে। পরেন লুঙ্গি এবং জামা। নীচু চালাঘরের বাঁশ থেকে ঝুলছে দড়ির ফাঁস। সেই দড়িরই একটা অংশ প্যাঁচানো বিধায়কের বাঁ হাতের পাঞ্জার সঙ্গে। বাঁ হাতটা চালের দিকে উঁচু হয়ে আছে। প্রশ্ন, কেউ আত্মহত্যা করলে তাঁর হাত এ ভাবে বাঁধা থাকবে কেন?
আরও পড়ুন: ঝুলন্ত বিধায়কের পকেটে মিলেছে সুইসাইড নোট, বলল পুলিশ
পরিবারের প্রশ্ন, আত্মহত্যা করার জন্য বাড়ি থেকে এতটা দূরে গেলেন কেন দেবেন্দ্রনাথ? তাঁদের দাবি, রাতে ফোন করে কেউ ডেকে নিয়ে গিয়েছিল দেবেন্দ্রনাথকে। কারা তাঁকে রবিবার রাতে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল?
বিধায়কের ঝুলন্ত পা মাটি থেকে ইঞ্চি ছয়েকের বেশি উঁচুতে নয়। বুক পকেটে খুব স্বাভাবিক ঢংয়ে রাখা রয়েছে চশমা। এত নীচু একটা চালা থেকে কেন আত্মহত্যা করবেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ।
আরও পড়ুন: বিধায়কের দেহ উদ্ধার ঘিরে উত্তপ্ত হেমতাবাদ, তীব্র আক্রমণে বিজেপি
রাজ্য পুলিশ এবং সিআইডি-র আধিকারিকরাও স্বীকার করছেন যে পকেটে কোনও নোট পাওয়া গেলেই নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না তা আত্মহত্যার ঘটনা। সেই নোটের সঙ্গে বিধায়কের হাতের লেখা মিলিয়ে দেখতে হবে। হস্তাক্ষরবিদদের মতামত নিতে হবে। পাশাপাশি, যে ভাবে দেহটি ঝুলছিল, তা থেকে অনেকগুলো সম্ভবনাই তৈরি হয়। ফলে এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ধরন সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ময়না তদন্তের রিপোর্টের সঙ্গে মেলাতে হবে পারিপা্র্শ্বিক তথ্য প্রমাণও। সূত্রের খবর, ময়না তদন্তের পর চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়ার আগে প্রয়োজনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে পারেন অটোপ্সি সার্জেন। সেই সঙ্গে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত মিলিয়ে তবেই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব ঠিক কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে বিধায়কের। খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাঁর মোবাইলের কল রেকর্ডসও।
এ দিন জেলা পুলিশের তরফ থেকেই ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পুলিশ কুকুর। তবে তদন্তে উল্লেখযোগ্য দিশা দেখাতে পারেনি পুলিশ কুকুর। কারণ, কুকুর পৌঁছনোর আগে সেখানে বহু মানুষের ভিড় হয়েছিল। ফলে কুকুর খুব একটা কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারেনি বলে জানা গিয়েছে তদন্তকারীদের সূত্রে। সিআইডি সূত্রে খবর, প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনে ভবানীভবনে সিআইডির সদর দফতর থেকে হোমিসাইড বিভাগের তদন্তকারীদের পাঠানো হতে পারে ঘটনাস্থলে।