(বাঁ দিক থেকে) হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, নন্দিনী চক্রবর্তী এবং ভগবতীপ্রসাদ গোপালিক। — ফাইল চিত্র।
বছরের শেষ দিনে রদবদল হয়ে গেল রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহলে। রবিবার তিনটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। প্রত্যাশিত ভাবেই রাজ্যের মুখ্যসচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন ভগবতীপ্রসাদ গোপালিক। তবে স্বরাষ্ট্রসচিব পদে চমক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের নতুন স্বরাষ্ট্রসচিব পদে আনা হয়েছে পর্যটন সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীকে। আর বিদায়ী মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পদ দেওয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বরাষ্ট্রসচিবকে মুখ্যসচিব করার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। রবিবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই মুখ্যসচিব হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। রবিবার নবান্নে বিদায়ী মুখ্যসচিবের থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন তাঁর উত্তরসূরি। রাজ্য প্রশাসনিক মহলের একাংশের কথায়, স্বরাষ্ট্রসচিবই যে রাজ্যের মুখ্যসচিবের দায়িত্ব পাবেন তা এক প্রকার ঠিকই হয়ে গিয়েছিল। রবিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। স্বরাষ্ট্রসচিব পদে যে ভাবে নন্দিনীকে আনা হয়েছে, তাতে প্রশাসনিক মহল চমক দেখলেও গোপালিকের মুখ্যসচিব পদে আসার ঘটনায় কোনও চমক নেই বলেই মনে করছেন তাঁরা। স্বরাষ্ট্রসচিব পদে কাকে নিয়োগ করা হবে, তা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই আলোচনা চলছিল প্রশাসনিক স্তরে। এর মধ্যে অর্থ সচিব মনোজ পন্থ, বন দফতরের সচিব বিবেক কুমার, শ্রম দফতরের সচিব বরুণ রায়ের নাম উঠে এসেছিল। এ ছাড়া তালিকায় ছিল বরিষ্ঠ আমলা প্রভাত মিশ্রের নামও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিকে ছিঁড়ল নন্দিনীর ভাগ্যেই। এত দিন পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি বা প্রধান সচিবের দায়িত্বে ছিলেন নন্দিনী।
রবিবার জারি করা সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, নন্দিনীকে পর্যটন দফতরের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র এবং পাহাড় সংক্রান্ত বিষয়ের প্রধান সচিব হিসাবে নিয়োগ করা হল। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তিনি এই সমস্ত দায়িত্বই সামলাবেন। এ ছাড়া নন্দিনীর হাতে মেদিনীপুর ডিভিশনের অতিরিক্ত কমিশনারের দায়িত্বও থাকছে। নন্দিনী ১৯৯৪ ব্যাচের আইএএস অফিসার। অতীতে রাজ্যের বহু গুরুত্বপূর্ণ দফতরের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। বাম আমলে তো বটেই, ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে নন্দিনী মমতার ‘প্রিয় পাত্রী’ হয়ে ওঠেন বলে জানা যায়। সেই সময় শিল্পোন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং তথ্য সংস্কৃতি দফতরের সচিবের মতো গুরুদায়িত্ব তিনি একসঙ্গে সামলেছেন। যদিও পরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর মতানৈক্যের কারণে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে গুরুত্ব কমতে থাকে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। তবে সম্প্রতি সেই দূরত্ব কিছুটা কমেছিল।
২০২২ সালের নভেম্বর মাসে রাজ্যপাল পদে সিভি আনন্দ বোস দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর প্রধান সচিব হয়েছিলেন নন্দিনী। রাজভবনে যাওয়ার পরেই তিনি ‘শাসকদলের লোক’ তকমা পান। রাজভবন সূত্রে খবর, সেই তকমার কারণেই গত ফেব্রুয়ারি মাসে নন্দিনীকে সরানো হয় রাজভবন থেকে। তার পর তাঁকে পাঠানো হয়েছিল পর্যটন দফতরে। নবমহাকরণে বসেই পর্যটন দফতরের দায়িত্ব সামলাতেন তিনি। নবমহাকরণ থেকে সরাসরি উন্নীত হয়ে তাঁর গন্তব্য এখন নবান্ন।