Voter List

ভোটার তালিকা: সর্বদল ডেকে বিডিও-র ‘বিধিভঙ্গ’! কমিশনারকে চিঠি রাজ্য নির্বাচনী আধিকারিকের

রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর সূত্রে খবর, শান্তিপুরের বিডিও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই ওই বৈঠক ডেকেছেন। তাঁকে এমন কোনও বৈঠক ডাকতে বলেনি কমিশন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৫ ২০:২৩
Share:
ভোটার তালিকা।

ভোটার তালিকা। — প্রতীকী চিত্র।

নদিয়ার শান্তিপুরের বিডিও-র সর্বদল বৈঠক ডাকার বিষয়টি জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরের নজরে আনল রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর দফতর। সিইও দফতর সূত্রে খবর, এ বিষয়ে কমিশনের দিল্লি অফিসকে বিস্তারিত জানিয়েছেন রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দিব্যেন্দু দাস। আগামী ৫ মার্চ একটি সর্বদল বৈঠক ডেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে চিঠি পাঠানো হয়েছে শান্তিপুরের বিডিও অফিস থেকে। ওই চিঠি ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধতেই কমিশনের কেন্দ্রীয় অফিসে গোটা ঘটনার কথা জানাল সিইও-র দফতর। দিল্লি থেকে জবাব এলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর সূত্রে খবর।

Advertisement

আলোচিত ওই চিঠিতে বৈঠকের মূল বিষয় হিসাবে উল্লেখ রয়েছে, বুথস্তরের এজেন্টদের তালিকা, মৃত এবং অন্যত্র চলে যাওয়া ভোটার শনাক্তকরণ-সহ অন্য প্রসঙ্গ। কমিশনের নির্দেশ ছাড়া এই ধরনের বৈঠক কি ডাকতে পারেন বিডিও? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, ওই বৈঠক ডেকে এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করেছেন বিডিও। যদিও শান্তিপুরের বিডিও সন্দীপ ঘোষের বক্তব্য, বৈঠকটি একটি চলমান প্রক্রিয়ার অংশ। এর জন্য কমিশনের অনুমতি নেওয়া আবশ্যিক নয়। এই বিতর্কে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর সূত্রে খবর, শান্তিপুরের বিডিও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই ওই বৈঠক ডেকেছেন। কমিশনের তরফে তাঁকে এমন কোনও বৈঠক ডাকতে বলা হয়নি।

জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, বিডিও-সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক আধিকারিকদের নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব থাকে। তেমনই শান্তিপুরের বিডিও শান্তিপুর এবং রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম বিধানসভার সহকারী নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক (অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সিইও দফতর সূত্রে খবর, নির্বাচন সংক্রান্ত বৈঠক ডাকতে পারেন বিডিও। কিন্তু কমিশনের সম্মতি ছাড়া বৈঠকের আলোচ্য বিষয় স্থির করতে পারেন না তিনি।

Advertisement

বর্তমানে বছরে চার বার ভোটার তালিকা প্রকাশ করে কমিশন। জানুয়ারি মাসে শেষ বার তা প্রকাশিত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিডিও-র ডাকা বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ের সঙ্গে কমিশনের বর্তমান কাজের কোনও সম্পর্ক নেই বলেই সিইও দফতর সূত্রে খবর। কমিশন সূত্রে খবর, ওই কাজের কথা বর্তমানে বলা হয়নি। তা হলে এখন কেন ওই কাজ করা হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয় সিইও দফতরের কাছে। মৃত এবং অন্যত্র চলে যাওয়া ভোটার শনাক্তকরণের দায়িত্ব ব্লক স্তরের আধিকারিকদের উপরে দেয় কমিশন। তবে কমিশনের বর্তমানে যে কাজগুলি করছে, তার সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই বলে খবর। পাশাপাশি বুথ স্তরের এজেন্টের তালিকা এখনই কেন চাওয়া হচ্ছে, তা-ও স্পষ্ট নয় কমিশনের কাছে। ফলে গোটা বিষয়টি কমিশনের দিল্লি অফিসে জানিয়েছে রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর।

শান্তিপুরের বিডিওর ডাকা সর্বদল বৈঠক সংক্রান্ত চিঠির ছবি শনিবার সকালে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে তিনি লেখেন, ২০২৫ সালের ৫ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। ওই তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে নির্বাচন কমিশন নির্দেশ না-দিলে আর কোনও সংশোধন সম্ভব নয় বলে দাবি বিরোধী দলনেতার। তাঁর অভিযোগ, কমিশনের কোনও নির্দেশ ছাড়াই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে সর্বদল বৈঠক ডেকেছেন শান্তিপুরের বিডিও। রাজ্যের শাসকদলের সুনজরে থাকতেই বিডিও সর্বদল বৈঠক ডেকেছেন বলে দাবি শুভেন্দুর। ঘটনাচক্রে, সম্প্রতি নেতাজি ইন্ডোরে দলীয় সমাবেশ থেকে ভোটার কার্ড সংক্রান্ত অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ভূতুড়ে ভোটারদের’ প্রসঙ্গ উঠে এসেছে তাঁর বক্তৃতায়।

এই অবস্থায় কমিশনের কাছে শুভেন্দুর আর্জি, এই ধরনের ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হোক। তাঁদের যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার কাজে যুক্ত না করা হয়, কমিশনের কাছে সেই অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি। যদিও শান্তিপুরের বিডিও সন্দীপ ঘোষের বক্তব্য, “এটি একটি কন্টিনিউয়াস প্রসেস (চলমান প্রক্রিয়া)। নির্বাচন কমিশনের অনুমতির প্রয়োজন হয় না। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের বুথ স্তরের প্রতিনিধিদের তালিকা তৈরির জন্য এই বৈঠক ডাকা হয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement