Parnasree Suicide Case

অটিজ়ম আক্রান্ত কন্যাই ছিলেন ‘প্রাণ’, ভবিষ্যতের উদ্বেগেই কি সৃজাকে নিয়ে আত্মহত্যার পথে স্বজন

স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, ৫৩ বছরের স্বজন এলাকায় শান্ত এবং ভদ্র মানুষ বলেই পরিচিত ছিলেন। পরিবার এবং প্রতিবেশীদের বিভিন্ন সময়ে সাহায্যও করতেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৫ ১৮:৩৯
Share:
কন্যার সঙ্গে গলায় দড়ি বাবার।

কন্যার সঙ্গে গলায় দড়ি বাবার। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

কন্যা সৃজা দাস অন্তপ্রাণ ছিলেন বাবা স্বজন দাস। অটিজ়ম আক্রান্ত কন্যার দুশ্চিন্তাই ভাবিয়ে তুলত তাঁকে। তিনি না-থাকলে মেয়ের কী হবে, সেই চিন্তাও ছিল। দাস পরিবারের সদস্যদের কথা বলে পুলিশ এমনটাই জানতে পেরেছে। তদন্তকারীদের একটা অংশ মনে করছেন, সেই উদ্বেগের কারণে কলকাতার পর্ণশ্রীর অফিসে কন্যাকে নিয়ে তিনি গলায় ফাঁস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন। এই ঘটনায় পরিবারের তরফে থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর একটি মামলা রুজু করেছে। স্বজন এবং সৃজার দেহের ময়নাতদন্ত হয়ে গিয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, আত্মহত্যা করেছেন স্বজন এবং সৃজা। গলায় দড়ি দেওয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে। দু’জনের শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই।

Advertisement

পর্ণশ্রীর হো চি মিন সরণিতে একটি বাড়ির এক তলায় দোকান এবং অফিস ছিল স্বজনের। তিনি রান্নাঘরের চিমনি, জলের ফিল্টার ইত্যাদি মেরামত ও বিক্রি করতেন। ওই অফিস থেকেই বাবা এবং কন্যার দেহ উদ্ধার করা হয় শুক্রবার রাতে। ২২ বছরের মেয়েকে নিয়ে কেন তিনি এই সিদ্ধান্ত নিলেন, সেই প্রশ্নই এখন ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। পরিবারের অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছে পুলিশ। সেই সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়েকে খুব ভালবাসতেন স্বজন। দক্ষিণ ভারতে তাঁকে চিকিৎসার জন্যও নিয়ে গিয়েছিলেন। স্বজনের এক ছেলেও রয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর অবর্তমানে অটিজম আক্রান্ত মেয়ের কী হবে, এই চিন্তাই ভাবিয়ে তুলত তাঁকে। আর্থিক অনটন ছিল না। তবু অর্থের চিন্তা ছিল স্বজনের। মেয়ের ভবিষ্যৎ তিনি সুনিশ্চিত করতে চাইতেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যেরা। ঋণ নেওয়ার কথাও বলেছিলেন। তবে সেই বিষয়ে পরিবারের লোকজন স্পষ্ট ভাবে কিছু জানেন না।

সম্প্রতি ট্যাংরায় একই পরিবারের তিন মহিলার দেহ উদ্ধার হয়। বাকি তিন জন অভিষিক্তা মোড়ের কাছে স্তম্ভে ধাক্কা দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাঁরা দাবি করেন, আর্থিক অনটনের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। স্বজনের আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে তাঁর আর্থিক অনটন ছিল, এমন কোনও বিষয় জানতে পারেনি পুলিশ। ওই ঘটনা দ্বারা তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন, এমন তথ্যও পুলিশ পায়নি বলেই সূত্রের খবর। স্বজনের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্যাংরাকাণ্ড নিয়ে তিনি বাড়িতে আলোচনা করেছেন, তেমনটাও নয়।

Advertisement

শুক্রবার রাতে পর্ণশ্রী থানার শকুন্তলা পার্কে বাবা এবং কন্যার দেহ উদ্ধার হলেও তাঁরা আদতে মহেশতলা চিংড়িপোতা রামেশ্বরপুরের বাসিন্দা। স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, ৫৩ বছরের স্বজন এলাকায় শান্ত এবং ভদ্র মানুষ বলেই পরিচিত ছিলেন। পরিবার এবং প্রতিবেশীদের বিভিন্ন সময়ে সাহায্যও করতেন। স্বজন খুব মিশুকেও ছিলেন। কন্যা সৃজাও ছিলেন তেমনই মিশুকে, দাবি স্থানীয়দের। তাঁরা জানিয়েছেন, স্থানীয় কিছু মানুষের সঙ্গে ‘আত্মীয়তা’ গড়ে উঠেছিল স্বজনের। অনেক সময় স্থানীয়দের সঙ্গে গল্প করে কাটাতেন তিনি। প্রয়োজনে সাহায্য করতেন। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, কন্যাকে নিয়ে যে উদ্বিগ্ন, তা অনেক সময় কাউকে বুঝতে দিতেন না। তবে কন্যাকে নিয়ে একটা উদ্বেগ ছিলই স্বজনের মধ্যে বলে দাবি তাঁর পরিচিতদের। সেই উদ্বেগের কারণেই চরম পদক্ষেপ করেছেন কি না খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement