ছাত্রছাত্রীদের কোনওরকম ক্ষোভ-বিক্ষোভে না গিয়ে শান্ত মনে পরীক্ষায় মনোনিবেশ করতে বলেছে পর্ষদ। নিজস্ব চিত্র।
২০২৩ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে আগে থেকেই বেশ কড়া মনোভাব নিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এ বার পরীক্ষার্থীদের শান্ত থাকার বার্তা দিল তারা। সোমবার মাধ্যমিক পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা জারি করেছে পর্ষদ। সেই নির্দেশিকাটি মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রে ছাত্রছাত্রীরা কেমন আচরণ করবেন। সঙ্গে বলা হয়েছে, কোন কোন ঘটনা ঘটালে কড়া পদক্ষেপ করবেন পর্ষদ। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে ওই নির্দেশিকাটি জারি করেছেন সচিব সুব্রত ঘোষ।
সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনও ভাঙচুর বা গোলমালের ঘটনা ঘটালে সংশ্লিষ্ট ছাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পর্ষদ। কড়া পদক্ষেপ হিসেবে তাদের মাধ্যমিকের রেজাল্টও আটকে দেওয়া হতে পারে। পরীক্ষা কেন্দ্রের কোনও ক্ষয়ক্ষতি ঘটালেও একই ফল পেতে হবে অভিযুক্ত ছাত্রকে। কোনও অভিযুক্ত ছাত্র ততক্ষণ পর্যন্ত রেজাল্ট পাবে না, যতক্ষণ না সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রের অফিসার-ইন-চার্জ, সেন্টার সেক্রেটারি, ভেন্যু সুপারভাইজার ও অ্যাডিশনাল ভেন্যু সুপারভাইজার ছাড়পত্র দিচ্ছেন। এক কথায় ছাত্রছাত্রীদের কোনওরকম ক্ষোভ-বিক্ষোভে না গিয়ে শান্ত মনে পরীক্ষায় মনোনিবেশ করতে বলেছে পর্ষদ।
কারণ, আসন্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্বচ্ছতা বজায় রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে। তাই চলতি বছর মাধ্যমিক নিয়ে আগের থেকেও অনেক বেশি কঠোর পর্ষদ কর্তারা। শেষ কয়েক বছরে মাধ্যমিক পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে সমালোচনার তীব্র মুখে পড়েছিল পর্ষদ। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নতুন সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সেই সমস্ত ক্ষেত্র পর্যালোচনা করে মাধ্যমিক পরীক্ষার নতুন নীলনকশা তৈরি করা হয়েছে, যাতে এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে কোনও অভিযোগ না ওঠে। তাই প্রশাসন এবং প্রযুক্তি— দু’টি বিষয়কেই কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
ছাত্রছাত্রীদের আগে থেকেই সতর্কবার্তা দিতে একেবারে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দেশিকা পাঠিয়ে দিয়েছে পর্ষদ। কারণ, মাধ্যমিক পরীক্ষা আয়োজনের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয় পর্ষদ কর্তাদের। তাই নিরাপত্তা, নিরপেক্ষতা বজায় রাখার পাশাপাশি, ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভ বিক্ষোভের বিষয়টি নজরে রেখেছে পর্ষদ। তাই নির্দেশিকার পাশাপাশি, পরীক্ষাকেন্দ্রে মোতায়েন পুলিশ কর্মী এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে যে মোবাইল থাকবে না, সে কথা ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে পর্ষদ। শিক্ষক সংগঠনগুলি পর্ষদের এই নির্দেশিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘এর আগে কখনও এমন কড়া নির্দেশিকা মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে দিতে হয়নি। এখন কেন এমন নির্দেশিকা দিতে হল, তা নিয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন থাকছে। কারণ এই নির্দেশিকায়, ছাত্রছাত্রীদের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।’’
শিক্ষক সংগঠনগুলি এমন প্রশ্ন তুললেও, মাধ্যমিক সফল করতে মরিয়া মধ্যশিক্ষা পর্ষদ একঝাঁক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষাকেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা হবে না সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও। থাকবেন শুধু পুলিশকর্মীরা। কারণ, সাধারণত স্থানীয়দেরই সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ফলে কোনও না কোনও ভাবে তাঁরা প্রভাবিত হয়ে যেতে পারেন। ফলে পরীক্ষা কেন্দ্রের নিরাপত্তা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তাই আগাম সতর্কতা হিসাবেই এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ভেনু সুপারভাইজারদের জন্যও থাকছে কড়া নিয়ম। অতীতে প্রশ্নপত্র সংগ্রহে অনুমোদিত ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়ার পদ্ধতি চালু ছিল। এ বার সেই পুরোনো নিয়ম বাতিল করা হয়েছে। ভেনু সুপারভাইজারদের কাছে থাকবে পর্ষদের দেওয়া বিশেষ অ্যাপ। তাতে ‘রিয়াল টাইম ডেটা’ পাবে পর্ষদ। কখন প্রশ্নপত্র পৌঁছল, কখন তা খোলা হল, কখন তা পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হল বা পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্ন বিলিবণ্টন নিয়ে কোনও বিপত্তি ঘটল কি না, সে সবই সরাসরি জেনে নিতে পারবেন পর্ষদ কর্তারা।