তৈরি ৭২ পাতার রিপোর্ট। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বাংলার সীমান্তের গ্রামগুলির অবস্থা কেমন? কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের সুযোগসুবিধা কতটা পাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা? সীমান্তের অন্যান্য সমস্যাই বা কেমন? এ সব জানতে রাজ্যের ৮২টি গ্রামে সমীক্ষা চালিয়ে রাজ্য বিজেপি একটি রিপোর্ট পাঠাতে চলেছে দিল্লিকে। বিজেপি সূত্রে খবর, দলীয় এই রিপোর্ট যেতে পারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। এই সমীক্ষার দায়িত্ব ছিল রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চার উপরে। যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁয়ের তত্ত্বাবধানেই এই রিপোর্ট তৈরি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই ৭২ পাতার সেই রিপোর্ট তৈরি। তবে কবে তা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বা অমিত শাহের মন্ত্রকে জমা পড়বে তা জানা যায়নি।
বাংলার সীমান্ত নিয়ে বিজেপির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। অনুপ্রবেশ থেকে পাচার, নানা অভিযোগে বরাবর সরব গেরুয়া শিবির। প্রতিটি নির্বাচনে সীমান্তের সমস্যাকে প্রচারে তুলে ধরা এবং ক্ষমতায় এলে তার সমাধানের কথা বলে বিজেপি। গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে শাহ তো বটেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বার বার বলেছেন, বিজেপির কাছে বাংলা বেশি গুরুত্বপূর্ণ দেশের স্বার্থেই। কারণ, এই রাজ্যে একাধিক দেশের সীমান্ত রয়েছে।
নেপাল, ভুটানের পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের আশপাশের গ্রামগুলি কেমন রয়েছে তা জানতে জানুয়ারি মাসে ‘সীমান্ত গ্রাম সম্পর্ক’ কর্মসূচি নেয় যুব মোর্চা। আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে এমন ১০টি জেলার ৮২টি গ্রামকে চিহ্নিত করা হয়। ২০, ২১ এবং ২২ জানুয়ারি তিন দিন ধরে যুব মোর্চার নেতারা ওই সব গ্রামে ঘোরেন। এর পরেই জেলা ধরে ধরে রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। তাতে কোন জেলার কতগুলি গ্রামে যাওয়া হয়েছে, কারা গিয়েছেন এবং কাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তার উল্লেখ যেমন রয়েছে, তেমনই বলা হয়েছে ওই সব এলাকার অনুন্নয়নের কথা। প্রতিটি জেলা ধরে ধরে সীমান্ত-সমস্যার কথারও উল্লেখ রয়েছে সেখানে।
বিজেপি সাংগঠনিক ভাবে প্রতিটি লোকসভা এলাকাকে একটি করে জেলা ধরে। এই সমীক্ষার অন্তর্ভুক্ত প্রশাসনিক ১০টি জেলা হলেও ১৫টি লোকসভা এলাকা থেকে গ্রাম বাছাই করে বিজেপি। উত্তরে দার্জিলিং থেকে দক্ষিণে বনগাঁ, বসিরহাটের সীমান্ত এলাকায় সমীক্ষা করে যুব মোর্চা এটাও খোঁজ নিয়েছে সেই সব এলাকার মানুষেরা কেন্দ্রীয় সরকারের আবাস যোজনার সুযোগসুবিধা কতটা পেয়েছেন। অন্য যে সব কেন্দ্রীয় প্রকল্প রয়েছে সেগুলি সম্পর্কে মানুষ জানেন কি না তারও খোঁজ নেওয়া হয়। বিনামূল্যের রেশন থেকে গ্রামীণ সড়ক যোজনা যে আদতে কেন্দ্রীয় প্রকল্প, সেগুলি সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কতটা সচেতন তারও খোঁজ নেওয়া হয়েছে। মানুষ কী বলেছে তার ভিত্তিতেই বানানো হয়েছে ওই রিপোর্ট। বিজেপির জেতা লোকসভা এলাকার গ্রামগুলিতে সাংসদ তহবিলের টাকায় কী কী কাজ হয়েছে তার উল্লেখও রয়েছে রিপোর্টে।
দিল্লিকে পাঠানোর জন্য ওই রিপোর্টে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির যোগাযোগ ব্যবস্থা কেমন তারও জেলা অনুযায়ী উল্লেখ রয়েছে। কোথায় গরুপাচার এবং অনুপ্রবেশের সমস্যা কেমন, সে কথাও বলা হয়েছে। রয়েছে মাদক পাচারের তথ্যও।
তবে সব জেলার রিপোর্টেই কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সেইসঙ্গে শৌচাগার, পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্যা থেকে কর্মসংস্থান নিয়েও সমীক্ষায় কী কী উঠে এসেছে তার বিবরণ দেওয়া হয়েছে ওই রিপোর্টে।