সময় কম। তাই চিন্তায় রাজ্য বিজেপি। — ফাইল চিত্র।
এক মাসেরও কম সময়ে এক হাজার সভা করতে হবে রাজ্য বিজেপিকে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ পাওয়ার পর ইতিমধ্যেই সেই পরিকল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। যা ঠিক হয়েছে, তাতে অগস্টে স্বাধীনতা দিবসের পর থেকেই শুরু হয়ে যাবে ওই কর্মসূচি। রাজ্য নেতাদের যা ভাবনা, তাতে অগস্টের মধ্যেই এক হাজার সভা শেষ করার চেষ্টা করা হবে। একান্তই সম্ভব না হলে তা সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত হতে পারে।
গত জুন থেকেই লোকসভা নির্বাচনের পুরোদস্তুর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। সেই লক্ষ্যে জুন ও জুলাই মিলিয়ে সব রাজ্যকেই প্রতিটি সাংগঠনিক মণ্ডলে একটি করে জনসভা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে বাংলাতেও পরিকল্পনা তৈরি করেছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। ঠিক হয়েছিল, জুন ও জুলাই মাসের মধ্যে প্রতিটি মণ্ডলে সভা করা হবে। ৩০ মে কর্মসূচি শুরু করে কয়েকটি সভাও হয়েছিল। ২ জুন করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পরে বিজেপি একটু ধীরে চলো নীতি নিয়েছিল। তারই মধ্যে ৮ জুন আচমকা রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় তা বন্ধ হয়ে যায়। অন্য দিকে, দেশের অন্য সব রাজ্যেই বিজেপি এই কর্মসূচি করে ফেলেছে। এখন বাংলাকে ঝড়ের গতিতে তা করে ফেলতে হবে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল পর্যালোচনা ও পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করতে শনিবার রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব একটি বৈঠক করেন। কলকাতার একটি হোটেলে হওয়া সেই বৈঠকে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ছাড়াও ছিলেন রাজ্য দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সতীশ ধন্দ। ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন রাজ্যের দায়িত্ব পাওয়া চার কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালবীয় এবং আশা লাকড়া। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানেই এই কর্মসূচি করতে হবে বলে জানান কেন্দ্রীয় নেতারা। সিদ্ধান্তও হয়ে যায়। এর পরে রবিবার দলের সল্টলেকের দফতরে রাজ্য নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে শুভেন্দু ছাড়া শীর্ষ নেতারা সকলেই হাজির ছিলেন। বৈঠকে ছিলেন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষও। কী ভাবে এই কর্মসূচি রূপায়ণ করা যেতে পারে, সেখানে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এত কম সময়ের মধ্যে কী এই কর্মসূচি শেষ করা সম্ভব হবে? দিলীপ বলছেন, ‘‘বিজেপি একটা সর্বভারতীয় দল। আমাদের দলে যে কোনও কর্মসূচি নেওয়া হলে তা সর্বত্রই পালন করতে হয়। বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন থাকায় তা নির্দিষ্ট সময়ে সম্ভব হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ থাকলে তা করতেই হবে। করবও আমরা।’’
বাংলায় প্রতিটি বিধানসভা এলাকার মধ্যে বিজেপির তিন বা চারটি করে মণ্ডল রয়েছে। ২৯৪ আসন মিলিয়ে মোট মণ্ডলের সংখ্যা ১,২৬৩টি। এর মধ্যে সংগঠন দুর্বল এমন ২৬৩টি মণ্ডলে সভা হবে না। বাকি এক হাজারটিতে কবে সভা হবে তা খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে বলে রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। এখন দলের ১৬ জন সাংসদ এবং ৬৯ জন বিধায়ক রয়েছেন। সকলেই এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। ঠিক হয়েছে, কোনও বড় সভা হবে না। তবে প্রতিটিতে যাতে কমপক্ষে দু’হাজার কর্মী-সমর্থক জড়ো করা যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। গোটা রাজ্যেই এই সভাগুলি আয়োজন করবেন স্থানীয় জেলা নেতৃত্ব। স্থানীয় সাংসদ, বিধায়কেরাও থাকবেন। বাছাই কিছু সমাবেশে হাজির থাকবেন সুকান্ত, শুভেন্দু, দিলীপেরা।
এই সব সভায় কী বিষয়ে সাধারণ মানুষের সামনে বক্তৃতা করতে হবে সেটাও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ঠিক করে দেওয়া। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর ন’বছর পূর্ণ হয়েছে সম্প্রতি। এই ন’বছরে কেন্দ্র কী কী প্রকল্প চালু করেছে, তাতে কেমন সাফল্য এসেছে— সে সবই মূলত বলতে হবে। এই কর্মসূচি চলার মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাও এক বার করে রাজ্যে আসতে পারেন। তবে সেটা এই কর্মসূচির অঙ্গ হবে না। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি হেরে গিয়েছিল, এমন কোনও আসন এলাকায় দুই শীর্ষ নেতা জনসভা করবেন। সেই এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথাও বলবেন।
এক হাজার সভা করা নিয়ে একটাই চিন্তা রাজ্য বিজেপি নেতাদের। ২০ জুলাই থেকে সংসদে অধিবেশন শুরু হয়ে যাবে। বাদল অধিবেশন শেষ হতে হতে অগস্টের মাঝামাঝি। তার আগে কর্মসূচি শুরু করা যাবে না। আবার ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পুজো এবং পরের দিন ১৮ সেপ্টেম্বর গণেশ চতুর্থী। বাংলায় সেই সময় থেকেই পুজোর আমেজ চলে আসে। ফলে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে কর্মসূচি শেষ করে ফেলতে হবে। আরও একটি চিন্তা রয়েছে। এই সময়টায় বাংলায় বর্ষা থেকে যেতে পারে। গ্রামেগঞ্জে আমন চাষেরও সময়। ফলে গ্রামাঞ্চলে সভা করা নিয়েও চিন্তা রয়েছে গেরুয়া শিবিরে।