Abhishek Banerjee

বাপের ব্যাটা হলে বিজেপি-কে ‘জয় সিয়ারাম’ বলিয়ে ছাড়ব, কুলপিতে অভিষেক

এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র রাজ্য যেখানে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন, তাই মমতাকে হঠাতে বিজেপি এত তৎপর বলেও অভিযোগ করেন অভিষেক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢোলাহাট শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:৪৬
Share:

ঢোলাহাট মাঠের সভায় অভিষেক। নিজস্ব চিত্র।

অমিত শাহের কোচবিহারের পাল্টা শনিবার কুলপিতে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বৃহস্পতিবার কোচবিহারের জনসভা থেকে অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘‘ভোট শেষ হতে হতে মমতাদিদিও ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে শুরু করবেন।’’ আর শনিবার কুলপির জনসভা অভিষেকের হুঙ্কার, ‘‘যদি বাপের ব্যাটা হই, ভোট শেষ হওয়ার আগে ওদের জয় সিয়ারাম বলিয়ে ছাড়ব।’’ অভিষেকের অভিযোগ, বিজেপি মহিলাদের সম্মান করতে জানে না। এককথায় তারা নারী বিদ্বেষী। তাই সীতা যেহেতু মহিলা, কখনওই রামের আগে সীতার নাম ‘সিয়া’ উচ্চারণ করে না তারা। যে কারণে সারা ক্ষণ ‘জয় শ্রীরাম’ বললেও কখনও ‘জয় সিয়ারাম’ বেরোয় না তাদের মুখ থেকে।
রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষের ‘দুর্গার পূর্বপুরুষ’ মন্তব্যকে ইতিমধ্যেই হাতিয়ার করেছে তৃণমূল। এ বার দিলীপের ওই মন্তব্যের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হল নারী অবমাননার মতো বিষয়ও। শনিবার কুলপিতে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক তোপ দেগে বললেন, ‘‘দুর্গার পূর্বপুরুষ নিয়ে প্রশ্ন তোলার দুঃসাহস যাঁরা রাখেন, যাঁরা মহিলাদের সম্মান দিতে জানেন না, বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে বাংলার মানুষই তাঁদের দিল্লিতে ফেরত পাঠাবেন।’’
শনিবার কুলপির জনসভায় অভিষেকের বক্তৃতার সিংহভাগ জুড়েই ছিল বিজেপি-র ‘নারী অবমাননা’ প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘‘কাল দিলীপ ঘোষ বলেছেন, রামের চোদ্দপুরুষের আদি বৃত্তান্ত জানি। কিন্তু মা দুর্গার ব্যাপারে কিছু জানি না। ওদের কাছে রামই সর্বেসর্বা। দুর্গার কোনও মূল্য নেই। অথচ যে রামের নামে এরা ধ্বনি দেয়, তাঁকে আমরা অকাল বোধনের রাম বলে জানি, যিনি মা দুর্গার জন্য নিজের চোখ পর্যন্ত দান করেছিলেন। সেই দুর্গার প্রতি এঁদের এমন আচরণের কারণ জানেন? আসলে এঁরা নারীদের সম্মান করতে জানেন না। নারীর ক্ষমতা কী জিনিস, তা শিখিয়ে দিল্লি ফেরত পাঠাতে হবে এঁদের।’’

Advertisement

এ প্রসঙ্গে নেতাজির জন্মদিনে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে মমতাকে উদ্দেশ করে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানের প্রসঙ্গও টেনে আনেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘নেতাজি কি রাজনীতির পাত্র? ভিক্টোরিয়ায় তাঁর জন্মদিনে এক জন মহিলাকে অসম্মান করা হয়েছে। কারণ তিনি বাংলার মহিলা। গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মহিলা হলে গাত্রদাহ হত না? বাংলার মেয়ে মমতা। গুজরাত থেকে লোক এসে বাংলার মেয়েকে অসম্মান করবে, বাংলার নারী, দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতীকে অসম্মান করবে? অত সোজা নয়। অমিত শাহ বলেছেন, ভোট শেষ হওয়ার আগে মমতাজিও জয় শ্রীরাম বলবেন। আমি বলছি, যদি বাপের ব্যাটা হই, ভোট শেষ হওয়ার আগে ওদের জয় সিয়ারাম বলিয়ে ছাড়ব। মহিলাদের যোগ্য সম্মান দিতে হবে। বাংলা তোমাদের শেখাবে।’’
শুধু তাই নয়, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র রাজ্য যেখানে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন, তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হঠাতে বিজেপি এত তৎপর বলেও অভিযোগ করেন অভিষেক। অভিষেকের বক্তব্য, ‘‘দেশের মধ্যে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই মহিলা মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন এই মুহূর্তে, যিনি মানুষের জীবনকে উন্নয়নের পথে পরিচালিত করছেন। তাই তাঁকে হঠাতে চাইছে বিজেপি। এ রা নারীদের সম্মান করতে পারে না। মা-বোনেদের বলব, যারা নারীদের সম্মান দেয় না, যারা নারীদের অত্যাচার এ নিপীড়নের শিকার করে রাখে, যাদের রাজত্বে উত্তরপ্রদেশে হাথরস এবং উন্নাওয়ের মতো গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তাদের নারীর ক্ষমতা শিখিয়ে দিল্লি ফেরত পাঠাতে হবে। যারা সারা ক্ষণ জয় শ্রী রাম বলে বেড়ান, তাদের চ্যালেঞ্জ করছি, জয় সিয়ারাম বলার ক্ষমতা আছে আপনাদের? মিটিং-মিছিলে এ বার থেকে জয় সিয়ারাম বলে দেখান দেখি! জানি পারবেন না। কারণ সীতাকে এঁরা সম্মান দেবেন না।’’
নামের মিল রয়েছে বলে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আকছার যে বিবেকানন্দের তুলনা টানতে দেখা যায় বিজেপি নেতৃত্বকে, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে সে কথাও টেনে আনেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘বিবেকানন্দ বলেছিলেন, নারীশক্তি মাতৃশক্তি। নারীরা জাগ্রত না হলে পৃথিবীতে কোনও মহৎ কাজ হয় না। বলেছিলেন, না জাগিলে ললনা, এ বিশ্ব জাগে না। যাদের রাজ্যে মহিলারা প্রতিনিয়ত ধর্ষণের শিকার হন, অত্যাচারিত হন, খুন হন, তাদের এ রাজ্য থেকে বিতাড়িত করবেন কি না, আপনারাই বলুন। জোরে আওয়াজ তুলুন। এমন জোরে আওয়াজ তুলুন যেন দিল্লি কাঁপে।’’

এ বারের নির্বাচন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী করার লড়াই নয়, বরং বহিরাগতদের বাংলা থেকে তাড়ানোর লড়াই বলেও দাবি করেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘কত ঔদ্ধত্য ভাবুন! বলছে, দুর্গার পূর্ব পুরুষের কোনও পরিচয় নেই? মহিষাসুর বধ মনে আছে? সে ভাবেই বধ করা হবে। মা দুর্গার মতোই এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক দিকে, আর এক দিকে, বিজেপি, ইডি-সিবিআই, জগাই-মাধাই। মহিষাসুর বধ হওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement