মিলবে পর্যটন-পূর্বাভাস

বেড়াতে যাবেন? জেনে নিন হাওয়ার মেজাজ

ঠিক করেছিলেন, ভরা গ্রীষ্মে ক’টা দিন দার্জিলিং গিয়ে গা জুড়িয়ে আসবেন। কিন্তু বাসুদেব চৌধুরীর কপাল খারাপ। শিলিগুড়ি ছাড়িয়ে গাড়ি পাহাড়ি পথ ধরেছে কি ধরেনি, মুষলধারে বৃষ্টি।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০৪:০৫
Share:

ঠিক করেছিলেন, ভরা গ্রীষ্মে ক’টা দিন দার্জিলিং গিয়ে গা জুড়িয়ে আসবেন। কিন্তু বাসুদেব চৌধুরীর কপাল খারাপ। শিলিগুড়ি ছাড়িয়ে গাড়ি পাহাড়ি পথ ধরেছে কি ধরেনি, মুষলধারে বৃষ্টি। ধস নেমে রাস্তা বন্ধ। বৌ-বাচ্চা নিয়ে পথে বসার জোগাড়!

Advertisement

সদ্য বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে গোয়ায় হনিমুনে গিয়েছিলেন সুপ্রিয় হালদার। ইচ্ছে ছিল, ওয়াটার স্কুটারে চেপে বলিউডি কায়দায় সাগরজলে তুফান তুলবেন। তোড়জোড় করে স্কুটারে চড়েও বসেছিলেন যুগলে। বাদ সাধল জোরালো হাওয়া আর বিশাল বিশাল ঢেউ। তাদের দাপটে পুরো প্ল্যান চৌপাট। গাঁটগচ্চাও গেল কম না!

বিদেশে কিন্তু পর্যটকদের এমন দুর্গতি বড় একটা শোনা যায় না। কারণ, বেড়ানোর জায়গাগুলোয় কোথায় কখন, কেমন আবহাওয়া থাকবে, তার নির্দিষ্ট পূর্বাভাস দেওয়া হয় ঘণ্টায় ঘণ্টায়। ফলে মানুষ আগাম প্রস্তুতি নিতে পারেন। এতে ভোগান্তি কমে, পকেটও বাঁচে। ভারতও এ বার সে রাস্তায় হাঁটতে চলেছে। ঝড়-জল-বৃষ্টি-গরমের চিরাচরিত গণ্ডি ছাড়িয়ে পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে বিশেষ আবহাওয়া-পূর্বাভাস ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে নয়াদিল্লির মৌসম ভবন। সম্প্রতি দেশের আবহাওয়া পূর্বাভাস পদ্ধতিতে বদল আনার প্রশ্নে পুণেতে বৈঠকে বসেছিলেন মৌসম ভবনের কর্তারা। পর্যটন-পূর্বাভাসের প্রসঙ্গটি সেখানে ওঠে। স্থির হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় ‘ট্যুরিস্ট স্পট’-এর আবহাওয়া সম্পর্কে নির্দিষ্ট পূর্বাভাস ঘোষণা করা হবে। তা ভ্রমণপিপাসুদের বিলক্ষণ উপকারে লাগবে বলে আবহ-কর্তারা আশাবাদী।

Advertisement

ব্যাপারটা ঠিক কী রকম? মৌসম ভবনের খবর: পর্যটনভিত্তিক পূর্বাভাসের জন্য গড়া হয়েছে চারটে বিভাগ— উপকূলীয়, পাহাড়ি, ঐতিহাসিক পর্যটন ও তীর্থস্থযাত্রা। এক-একটার জন্য এক-এক রকম প্রাকৃতিক পরিস্থিতির আগাম আন্দাজ মিলবে। যেমন উপকূলে লোকজন সমুদ্রে স্নান করতে নামে, নৌকো-লঞ্চে চেপে জলবিহার করে, অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় প্যারাগ্লাইডিংয়ে মাতে, দরিয়ায় ওয়াটার স্কুটার ছোটায়। ওদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি ও দুর্ভোগের সম্ভাবনায় দাঁড়ি টানতে জানিয়ে দেওয়া হবে, তটবর্তী অঞ্চলে আগামী চার-পাঁচ দিন কত জোরে বাতাস বাতাস বইতে পারে, সমুদ্র উত্তাল হবে কিনা, কত উঁচু ঢেউ আসবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। পাহাড়ের ভ্রমণার্থীরা জানতে পারবেন, জোরালো বৃষ্টির সম্ভাবনা কতটা, আকাশ সাফ থাকবে কি না। ঐতিহাসিক জায়গাগুলিতেও তা-ই। আর কোনও তীর্থস্থানে ভারী বৃষ্টি কিংবা তাপমাত্রায় বড় মাপের উত্থান-পতনের আশঙ্কা থাকলে পুণ্যার্থীরা আগে জেনে সেই মতো তৈরি থাকতে পারবেন।

শুধু চার-পাঁচ দিনের জন্য নয়। পর্যটনের ক্ষেত্রে ‘মরসুমি’ পরামর্শও দেবে মৌসম ভবন। অর্থাৎ, বছরের কোন সময়ে কোথায় গেলে জমিয়ে বেড়ানো যাবে। ‘‘সেই পরামর্শ মেনে চললে ভ্রমণে প্রকৃতির বাধা পড়ার আশঙ্কা কমবে। বিপদও এড়ানো যাবে।’’— বলছেন কেন্দ্রীয় আবহ দফতরের এক ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘কারও হয়তো রাজস্থানের জয়সলমের বেড়ানোর ইচ্ছে। তিনি জানতে পারবেন, কোন সময়ে ওখানকার আবহাওয়া মনোরম থাকবে, মরুরাজ্য চষে বেড়ালেও বিশেষ কষ্ট হবে না। একই ভাবে গ্যাংটক-দার্জিলিং বা শিমলা-কাশ্মীরে উপভোগ্য ভ্রমণের সময় কোনটা, পরামর্শবার্তায় তা-ও বলা থাকবে।’’

মৌসম ভবনের খবর: উদ্যোগটি সফল করতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের মতামত নেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। পর্যটন-পূর্বাভাস কী ভাবে দিলে ভাল হয়, সে সম্পর্কে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক ও বিভিন্ন রাজ্যের পর্যটন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করবে মৌসম ভবন। ট্যুর অপারেটরদের পরামর্শও চাওয়া হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement