নতুন নির্ঘণ্ট অনুযায়ী ১১ জুন কলকাতায় বর্ষা আসার কথা। সেই জায়গায় এল ১২ জুন। ছবি: রয়টার্স।
কয়েক বছর ধরে বর্ষা সমাগমের ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিকূলতা দেখা যাচ্ছিল। এ বার অবশ্য প্রাক্-বর্ষার ভূমিকা প্রস্তুত তৈরি করে নিয়ম মেনে প্রায় ঠিক সময়েই (শুক্রবার) রাজ্যে প্রবেশ করল মৌসুমি বায়ু। ‘প্রায়’ বলতে হচ্ছে এই কারণে যে, নতুন নির্ঘণ্ট অনুযায়ী ১১ জুন কলকাতায় বর্ষা আসার কথা। সেই জায়গায় এল ১২ জুন। মাত্র এক দিনের এই দেরিটা হাওয়া দফতরের চোখে স্বাভাবিকই।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মৌসুমি বায়ু এ দিন দক্ষিণবঙ্গের বেশির ভাগ জেলা এবং উত্তরবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই পৌঁছে গিয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূল থাকায় আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যের বাকি জেলাগুলিতেও হাজির হবে সে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় গাঙ্গেয় বঙ্গে ও উত্তরবঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। উপকূলবর্তী এলাকার দু’-একটি জায়গায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও তরাই এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ভারী এবং কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া একটি নিম্নচাপ মৌসুমি বায়ুর আগমনের পথ প্রশস্ত করেছে। নিম্নচাপটি এখন ওড়িশা ও অন্ধ্র উপকূলে রয়েছে। সঞ্জীববাবু জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে ওড়িশা ও অন্ধ্র উপকূলে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। রাজ্যের মৎস্যজীবীদের আপাতত ২৪ ঘণ্টা ওড়িশা উপকূলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। দিল্লির মৌসম ভবন জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও মৌসুমি বায়ু হাজির হয়েছে মহারাষ্ট্র, বিদর্ভ ও ছত্তীসগঢ়ের একাংশে। সিকিম-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছে সে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বিহার-ঝাড়খণ্ডেও ঢুকতে চলেছে বর্ষা।
আরও পড়ুন: যাত্রী পরিষেবায় সোমবার থেকে রাস্তায় আরও ৪০০ এসি, নন-এসি বাস
বর্ষা এল: শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে শুক্রবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
এ দিন সকাল থেকেই কলকাতা ও লাগোয়া জেলাগুলির আকাশে ঘন মেঘ জমছিল। দফায় দফায় বৃষ্টিও হয়েছে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত কলকাতায় বৃষ্টির পরিমাণ ৩৯ মিলিমিটার। মেঘলা আবহাওয়ার দরুন দিনের তাপমাত্রাও ছিল অনেক কম। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এ দিন কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে হাজির হয়েছে বর্ষা। সে পৌঁছে গিয়েছে উত্তরবঙ্গের মালদহ, দুই দিনাজপুর, দার্জিলিং-সহ পাহাড়ি এলাকা এবং তরাই-ডুয়ার্সেও। আপাতত বর্ষাভাগ্য প্রসন্ন থাকবে বলেই আশ্বাস দিচ্ছেন আবহবিদেরা।
আরও পড়ুন: ‘আমপান যোদ্ধাদের ধন্যবাদ, সাবধান থাকুন করোনায়’, টুইট মমতার
কয়েক বছর ধরে বর্ষার আগমনে নানান বাধাবিপত্তি দেখে আবহবিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদদের অনেকেই বলছিলেন, বর্ষার চরিত্রে বদল দেখা যাচ্ছে। এ বার বর্ষার নির্ঘণ্ট নতুন ভাবে ঘোষণা করে মৌসম ভবন। ওই ভবন সূত্রের মতে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর জলবায়ুগত পরিবর্তন দেখা যায়ই। এত দিন ১৯০১ থেকে ১৯৪০ পর্যন্ত সময়ের তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ চলছিল। নতুন নির্ঘণ্ট তৈরি করা হয়েছে ১৯৬১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়ের তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে। বস্তুত, গত কয়েক বছরের পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে, জুনে পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টিতে ঘাটতি থাকছে। এ বছরও সেই ধারা বজায় থাকে কি না, সেটাই দেখার। এ বার অবশ্য গোটা দেশেই মোটের উপরে স্বাভাবিক বর্ষণ হবে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন। তবে আঞ্চলিক হিসেবে বলা হয়েছে, পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে স্বাভাবিক বৃষ্টির সম্ভাবনা তুলনায় কম।