গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
কোভিড পর্বের সময় থেকেই ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর স্লোগান দেওয়া শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার পর ক্রমে সেই স্লোগানকে ২০২৪-এর লক্ষ্যে ভোটের স্লোগানে পরিণত করেছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার রাজ্য বাজেটের পর তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেন ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর পাল্টা শব্দবন্ধ হাজির করতে চাইলেন— ‘স্বনির্ভর বাংলা’।
বৃহস্পতিবার অভিষেক এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘আমাদের মা-বোন এবং গরিব মানুষের হাত শক্ত করে আমরা স্বনির্ভর বাংলার দিকে অগ্রসর হচ্ছি।’’ বৃহস্পতিবারই রাজ্য বাজেটে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এখন সাধারণ শ্রেণির মহিলারা এই প্রকল্পে মাসে ৫০০ টাকা পান। অনগ্রসর শ্রেণির মহিলারা পান মাসে এক হাজার টাকা। বাজেটের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১ এপ্রিল থেকে সাধারণ শ্রেণিভুক্ত মহিলারা পাবেন মাসে এক হাজার টাকা এবং অনগ্রসর শ্রেণির মহিলারা পাবেন মাসে ১২০০ টাকা। পাশাপাশি, ‘কর্মশ্রী’ নামে নতুন একটি প্রকল্পও ঘোষণা করা হয়েছে বাজেটে। যে প্রকল্পে জব কার্ড থাকা শ্রমিকেরা বছরে ৫০ দিন কাজ পাবেন। বস্তুত, কেন্দ্রের ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প বাংলায় বন্ধ রয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, বঞ্চনা করে নরেন্দ্র মোদী সরকার বাংলার শ্রমিকদের টাকা আটকে রেখেছে। ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, কেন্দ্র টাকা না দিলেও ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের ২১ লক্ষ শ্রমিকের বকেয়া মজুরি ২১ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সরকার মিটিয়ে দেবে। অভিষেক এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘‘ডাবল ইঞ্জিন সরকারের চেয়ে বাংলার সিঙ্গল ইঞ্জিন সরকার বেশি ক্ষমতাশালী।’’
‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে ভাতাবৃদ্ধিকে রাজনৈতিক মহলের অনেকেই লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মহিলা ভোটকে আরও এককাট্টা করার কৌশল হিসেবেই দেখছেন। তবে সরকার তথা শাসক শিবির সামগ্রিক ভাবে মহিলাদের ক্ষমতায়ন হিসাবে দেখাতে চেয়েছে। মমতা বলেছেন, ‘‘আমি চাইনি ৫০০ টাকা ও এক হাজার টাকা নিয়ে কোনও বৈষম্যের মনোভাব তৈরি হোক। আমরা জাতিগত বিভাজন চাই না। তাই বাড়িয়ে এক হাজার টাকা ও ১২০০ টাকা করা হয়েছে।’’
কেন্দ্রীয় বাজেটের ক্ষেত্রেও মহিলা মন পাওয়ার বিভিন্ন ঘোষণা ছিল অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বক্তৃতায়। তিন তালাক প্রথা তুলে দেওয়া থেকে লোকসভা এবং বিধানসভায় এক-তৃতীয়াংশ মহিলা সংরক্ষণকে আইনি করার কথা বলেছিলেন নির্মলা। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছিলেন, ‘লাখপতি দিদি’র সংখ্যা এক কোটি থেকে বাড়িয়ে দু’কোটি করতে চান আগামী পাঁচ বছরে। বাজেট বক্তৃতায় নির্মলার দাবি ছিল, দেশের এক কোটি মহিলা এখন লাখপতি। সেই সংখ্যা দু’কোটিতে নিয়ে যেতে চায় মোদী সরকার। কারা এই ‘লাখপতি দিদি’? গত বছর অগস্টেই ‘বিশ্বকর্মা প্রকল্প’ ঘোষণার পাশাপাশি ‘লাখপতি দিদি’ প্রকল্প ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। এই প্রকল্পে গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের নানা রকম কারিগরি দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যার সাহায্যে প্রতি বছর অন্তত ১ লক্ষ টাকা করে উপার্জন করতে সমর্থ হবেন ওই মহিলারা। মূলত গ্রামীণ মহিলাদের আর্থিক ভাবে স্বাধীন করাই ছিল এই প্রকল্পের লক্ষ্য।
ভারতের রাজনীতিতে অনেক বছর ধরেই এই কথা চালু রয়েছে— নির্বাচনে জেতা-হারার ক্ষেত্রে মহিলা ভোট অন্যতম সূচক। এ কথা অনস্বীকার্য যে, সেই সূচকের ক্ষেত্রে সম্প্রতি সবচেয়ে বড় উদাহরণ বাংলা। মমতা প্রণীত ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প মোটামুটি গোটা দেশেই ‘মডেল’ হয়ে উঠেছে। মধ্যপ্রদেশে দীর্ঘ দিন শাসনের পরেও প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়াকে রুখে দিয়ে বিজেপির ক্ষমতায় ফিরে আসার নেপথ্যে শিবরাজ সিংহ চৌহানের ‘লাডলি বহেনা’ প্রকল্প কাজ করেছিল। সেই প্রকল্পের নাম আলাদা হলেও ছাঁচটা ছিল মমতার ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মতোই। ২০২১ সালের ভোটে প্রবল শক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়া বিজেপিকে রুখে দিয়েছিল তৃণমূল। নেপথ্যে অনেক কারণের মধ্যে ছিল ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের প্রতিশ্রুতিও। সরকারে এসে তা কার্যকর করেছিলেন মমতা। লোকসভার আগে ভাতার অঙ্ক বৃদ্ধি করা হল। যাকে স্বনির্ভর বাংলার লক্ষ্যে পথ চলা হিসাবে উল্লেখ করলেন অভিষেক।