WBCS Officers Association

বেতন-ক্ষোভে ‘বেসুর’ বাজছে বিসিএস স্তরে!

সংগঠন সূত্রের খবর, নেতৃত্বের সেই ডাকে বেশির ভাগ সদস্যই সাড়া দেননি!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২১ ০৬:১১
Share:

ফাইল চিত্র।

করোনা তহবিলে সব অফিসারের সাধ্যমতো সহযোগিতা চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডব্লিউবিসিএস অফিসার সংগঠনের নেতারাও তহবিল জোগাড় করতে সব সদস্যের কাছে আবেদন জানান। সংগঠন সূত্রের খবর, নেতৃত্বের সেই ডাকে বেশির ভাগ সদস্যই সাড়া দেননি! ফলে সরকারি কোভিড-তহবিলে যে-অর্থ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছিল, সংগৃহীত হয়েছে তার অর্ধেকেরও কম। এই ঘটনা অনেকের কাছেই ‘বেসুরো’ ঠেকেছে।

Advertisement

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বিসিএস সংগঠনে ক্যাডার-শক্তি ১৭৬৭। এখন কর্মরত আছেন ১৬০০ জন অফিসার। বাকিরা অবসর নিয়েছেন। সংগঠন-নেতৃত্ব চেয়েছিলেন, ১৬০০ জন অফিসারের প্রত্যেকের কাছ থেকে অনুদান হিসেবে দু’হাজার টাকা নিলে করোনা তহবিলে দান করা যাবে মোট ৩২ লক্ষ টাকা। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে দেখা যায়, মাত্র ১৫ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে। বাকি টাকা কেন সংগ্রহ করা গেল না, তার খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ অফিসারই অনুদান দিতে নারাজ! এমনকি সংগঠনের হয়ে জেলায় জেলায় অফিসারদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহেও অনীহা ছিল অনেক সদস্যের। অফিসার তথা এক সদস্যের কথায়, “কঠিনতম সময়ে এত দায়িত্ব সামলানোর পরেও দীর্ঘদিন ধরে দাবিপূরণ না-হওয়ায় আমাদের সংগঠনের উপরে অনেকেই বেজায় ক্ষুব্ধ। এমনকি ২-৩টি জেলা সংগঠনের নামে অনুদান সংগ্রহ করতে সরাসরি অস্বীকার করেছেন কেউ কেউ। তাই লক্ষ্য পূরণ করা যায়নি।”

ডব্লিউবিসিএস সংগঠনের এক নেতা বলেন, “আমরা অনুদান দিতে আবেদন জানিয়েছিলাম। এখানে জোর করার ব্যাপার ছিল না। যাঁরা মনে করছেন, তাঁরা টাকা দিয়েছেন।”

Advertisement

কিন্তু ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের এত ক্ষোভ কিসের? অনেক সংগঠন-সদস্যের বক্তব্য, সরকার এবং অফিসারদের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজটা করার কথা সংগঠনের নেতাদের। অফিসারদের চাহিদা, দাবিদাওয়া সংগঠনের নেতাদেরই সরকারের কাছে পৌঁছে দেন। অভিযোগ, ২০১৬ সালের পরে সংগঠনের কোনও বার্ষিক সাধারণ সভা হয়নি। সরকার সেই সভায় সংগঠনের যে-সব দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার সবটা এখনও পূরণ হয়নি বলে অভিযোগ।

অভিযোগ, বিভিন্ন গ্রুপে অফিসারদের সঙ্গে একই বেতনক্রমে আছেন বিসিএস এগ্জ়িকিউটিভরা। অথচ তুলনায় অনেক বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয় তাঁদের। সেই জন্য আলাদা বেতন-কাঠামোর দাবি তুলেছিল সংগঠন। যে-হেতু একই রোপা-রুলের মধ্যে পৃথক বেতনহার দেওয়া সম্ভব নয়, তাই আইএএস অফিসারদের মতো পৃথক কাঠামোর দাবি জানানো হয়েছিল। অভিযোগ ছিল হুটহাট বদলি করে দেওয়ার বিষয়েও। ২০১৬ সালের বার্ষিক সাধারণ সভায় এই ধরনের ১২টি দাবি পেশ করা হয়েছিল সরকারের কাছে।

বিসিএস সংগঠনের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, গত বছর ঘূর্ণিঝড় আমপানের ধাক্কা সামলাতে হয়েছে অনেক অফিসারকেই। তার চেয়েও বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে করোনা মোকাবিলায়। সেই কাজে নেমে কিছু অফিসার প্রাণ হারিয়েছেন। আবার ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ, দুয়ারে সরকার, পাড়ায় সমাধানের মতো কর্মসূচিতে গুরুদায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে তাঁদেরই। এই অবস্থায় অপ্রাপ্তিগুলিই এখন ক্ষোভে ইন্ধন দিচ্ছে। “সরকারের পক্ষে এত কিছু মনে রাখা মুশকিল। সরকার যখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তখন সরকারের থেকে সময়মতো কাজগুলি করিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব সংগঠনেরই। কিন্তু সংগঠনের নেতারা সেই পথে হাঁটেনি। তাই ক্ষোভ বাড়ছে ক্যাডারদের মধ্যে। তার পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে সরকারের উপরে। অবশ্য এ-সব কিছুর পরেও অফিসারেরা নিজেদের কাজ করে চলেছেন নিষ্ঠার সঙ্গেই,” বললেন এক অফিসার।

সংগঠন নেতৃত্বের বক্তব্য, সরকার প্রায় সব দাবিদাওয়াই পূরণ করেছে। এখন প্রতিটি স্তরে দু’টি করে ‘স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট’-এর সুযোগ আছে। বদলি সংক্রান্ত আবেদনগুলিও সরকার সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করছে। শুধু বিশেষ সচিব থেকে সচিব পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ সংক্রান্ত বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন। পদ বাড়ানোর পাশাপাশি পৃথক পে-রুল তৈরি করার কথা আছে।

“বার্ষিক সাধারণ সভা হচ্ছে না, ব্যাপারটা এমন নয়। সংগঠনের সদস্যেরা যখন স্থির করবেন, তখন সভা হতে বাধা নেই। আগের থেকে অনেক ভাল জায়গায় আছেন অফিসারেরা। সরকারের কাছে প্রত্যেকের গুরুত্ব ও মর্যাদা রয়েছে,” বলেন বিসিএস সংগঠনের এক নেতা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement