মাধ্যমিকের শেষ ক’দিন বাড়তি কড়াকড়ি, হলে ঢোকার গেটে থাকবে পুলিশও, জানাল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। ফাইল চিত্র।
মাধ্যমিকে প্রশ্ন ফাঁস রুখতে পরীক্ষার শেষ কয়েক দিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কড়া করতে চাইছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। মাধ্যমিকে দ্বিতীয় ভাষার পরীক্ষার দিন ইংরেজি প্রশ্নপত্র ‘ফাঁসে’র অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ তুলেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। যদিও পর্ষদের তরফে সেটিকে প্রশ্নপত্র ফাঁস বলে মানা হয়নি। এই আবহে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সোমবার আট দফা নির্দেশ দিলেন পর্ষদ সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়।
আগে পরীক্ষাকেন্দ্রে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপস্থিতিতেই পরীক্ষার্থীরা ভিতরে প্রবেশ করতেন। নতুন বিধি অনুযায়ী পরীক্ষাকেন্দ্রের দরজায় এ বার উপস্থিত থাকবেন পুলিশকর্মীরাও। প্রয়োজনে তাঁরা পরীক্ষার্থীদের কাছে মোবাইল ফোন অথবা বৈদ্যুতিন সামগ্রী রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখবেন। পরীক্ষাকেন্দ্রে যাঁরা নজরদারি চালাবেন, তাঁরা যাতে গোটা শ্রেণিকক্ষে জুড়ে নজর রাখতে পারেন, সে জন্য পরীক্ষাকেন্দ্রের জানালা খুলে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পর্ষদের একাংশ মনে করছেন, অসুস্থ পরীক্ষার্থী, বিশেষত যাঁরা হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসে পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল হয়ে পড়ছে। তাই এই সব জায়গায় নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে পাহারার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা ফোন নির্দিষ্ট জায়গায় জমা রাখছেন কি না, তা লগ বুকে লিখে রাখার কথা জানানো হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে অচেনা ব্যক্তির প্রবেশাধিকার রুখতেও কঠোর পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে পর্ষদ।
আপাত ভাবে পর্ষদের নির্দেশিকায় পুরনো কিছু নিয়মের কঠোর প্রয়োগের কথাই বলা হয়েছে। তবে পুলিশকে দিয়ে তল্লাশির নির্দেশ এই প্রথম। পরীক্ষা চলাকালীন মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে শুক্রবার অভিযোগ তুলেছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত। মাধ্যমিকের দ্বিতীয় ভাষার পরীক্ষা চলাকালীনই ১টা ৪২ মিনিটে টুইটারে ইংরেজি প্রশ্নপত্রের ৩টি পাতার ছবি পোস্ট করেন তিনি। সুকান্তের পোস্ট করা প্রশ্নপত্রের ছবি যে এ বারের ১৬ পাতার ইংরেজি প্রশ্নপত্রেরই ৩টি পাতা তা স্বীকার করে নিয়ে তদন্তের প্রক্রিয়া শুরুর বার্তা দেয় পর্ষদ।
পর্ষদের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘‘এটি প্রশ্নফাঁসের ঘটনা নয়, পরিকল্পিত অন্তর্ঘাত।’’ সেই ‘পরিকল্পিত অন্তর্ঘাতের’ উৎস খুঁজে বার করার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করে বলে পর্ষদ। পর্ষদের দাবি ছিল, শুক্রবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছিল। ১২টায় পরীক্ষা শুরু হয়। যখন ছবি তোলা হয়েছিল, পরীক্ষাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা হলেই ছিলেন। ফলে পরীক্ষার উপর কোনও প্রভাব পড়েনি। তবে পর্ষদ তদন্ত চাইলেও সুকান্তের এই টুইটে বিধিভঙ্গ হয়নি বলে মনে করেন অনেকে। কারণ, তিনি যখন ‘প্রশ্নপত্রের’ একাংশ টুইট করেছেন, তার ১ ঘণ্টা ৪২ মিনিট আগে, বেলা ১২টায় পরীক্ষা শুরু হয়েছে। দেড়টার পর থেকে খাতা জমা দিয়ে বাইরে আসার সুযোগ পেয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। ফলে ‘টেকনিক্যালি’ বিষয়টিতে ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস’ বলা যায় না বলে মত ওই অংশের। তবে ওই ‘প্রশ্নফাঁস’ বিতর্কে পর্ষদ মেনে নিয়েছিল যে, পরীক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষকদের পক্ষে সব কিছুর দিকে নজর রাখা সম্ভব নয়। সেই ‘অপারগতা’ থেকেই পুলিশের শরণাপন্ন হওয়া কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।