মধ্যশিক্ষা পর্যদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। শুরুর দিন থেকেই বিক্ষিপ্ত ভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠছিল। আর এই অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মালদহ জেলা। বিজেপির অভিযোগ, পর্ষদের মাধ্যমিক সংক্রান্ত কমিটিতে রয়েছেন তৃণমূল ঘনিষ্ঠেরা। তাঁদের মাধ্যমেই পরিকল্পনা সাজিয়ে প্রশ্ন ফাঁস করা হচ্ছে। বিজেপি নেতাদের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার মুখ খুললেন খোদ পর্ষদ সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়। সাফ বললেন, ‘‘প্রতিটি ইউনিয়নের লোককে যদি আমাকে সরিয়ে দিতে হয় তাহলে আসছে বছর মাধ্যমিক পরীক্ষাই করতে পারব না!’’
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের রক্তচাপ বাড়িয়ে রেখেছে মালদহ জেলা। গত কয়েক দিন যে ক’টা ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র ‘ফাঁসের’ অভিযোগ উঠেছে, সবগুলির সঙ্গেই মালদহের যোগ আছে। সোমবার ইতিহাস পরীক্ষার দিন রাজ্যে যে ন’জন পড়ুয়ার কাছ থেকে মোবাইল ফোন মিলেছে, তাদের মধ্যে তিন জন মালদহের। মঙ্গলবারও মালদহে পরীক্ষাকেন্দ্রের ভিতর থেকে সাতটি মোবাইল ও একটি স্মাট ওয়াচ ধরা পড়েছে। আট পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার সময় তল্লাশিতে ২৫টি মোবাইল পাওয়া যায়। এ দিন জেলায় হাজির ছিলেন পর্ষদ সভাপতি রামানুজ। যে সমস্ত স্কুলে ‘প্রশ্ন ফাঁসে’র অভিযোগ উঠেছিল, সেই সমস্ত স্কুল পরিদর্শন করেন তিনি। কথা বলেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা আধিকারিকদের সঙ্গে। বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রামানুজ।
বিজেপির অভিযোগ ছিল, পর্ষদের ‘কনফিডেন্সিয়াল সেকশন’-য়ে কর্মরত এক ব্যক্তি তৃণমূল ঘনিষ্ঠ। তাঁর ‘হাতযশে’ই প্রশ্ন ফাঁসের ধুম পড়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিকরা বিজেপির তোলা প্রশ্ন করেন পর্ষদ সভাপতিকে। তার জবাবে রামানুজ বলেন, ‘‘অনেক জায়গায় মনে হতে পারে যে, কিউআর কোডের জন্য এগুলি সামনে আসছে। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে, তিন জন সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট আছেন আমাদের, ‘কনফিডেন্সিয়াল সেকশন’-এ, সেখানে একজনকে নিশানা করা হবে! আরও এক জন আছেন যিনি, একটি ইউনিয়নের পদে রয়েছেন। আমি খুব সন্ত্রস্ত যে, আবার বলবে অমুক আছে, তাহলে তাঁকে কেন রাখা হল? এ তো বোর্ড তুলে দেওয়ার মতো অবস্থা! আসছে বছর মাধ্যমিক হবে কি না আমি জানি না। আপনারা যে ভাবে প্রশ্নগুলোকে আমার সামনে নিয়ে আসছেন, আসছে বছর মাধ্যমিক করতে পারব না, যদি প্রতিটা ইউনিয়নের লোককে সরিয়ে দিতে হয়। সবাই এখন পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত।’’
প্রসঙ্গত, বিজেপির যে ব্যক্তিকে নিয়ে আপত্তি তাঁকে নিয়ে পর্ষদ জানিয়েছে, স্রেফ যোগ্যতার মাপকাঠিতেই ‘কনফিডেন্সিয়াল সেকশন’-এ কে থাকবেন, কে থাকবেন না, তা ঠিক করা হয়। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ বছর মাধ্যমিক শুরুর আগেই পর্ষদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, এ বার প্রশ্নপত্রেই লুকনো থাকছে কিউআর কোড। প্রশ্নপত্রের ছবি তুললেই সেই ছবি দেখে লুকনো কোড থেকে বার করা যাবে কারা সেই ছবি তুলেছে। সেই পদ্ধতি প্রয়োগ করেই এখনও পর্যন্ত বেশ কয়েক জনের পরীক্ষা বাতিল হয়েছে।