উদয় সাহারান (বাঁ দিকে) ও সচিন ধাসের জুটি ফাইনালে তুলল ভারতকে। ছবি: এক্স।
নতুন সচিনের উদয় হল ভারতীয় ক্রিকেটে। পছন্দের ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকরের নামে বাবা নাম দিয়েছিলেন তাঁর। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে পরেন সচিনের ১০ নম্বর জার্সি। কাজটাও করলেন সচিনের মতো। কঠিন পরিস্থিতি থেকে দলকে টেনে তুললেন মহারাষ্ট্রের ছেলে সচিন ধাস। দলের অধিনায়ক উদয় সাহারানের সঙ্গে মিলে দলকে জেতালেন সচিন। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল ভারত। ৪ রানের জন্য শতরান হাতছাড়া হলেও তিনি বুঝিয়ে দিলেন, ভারতীয় ক্রিকেটে দীর্ঘ দিন থাকতে এসেছেন। সচিনের ৯৬ রানের ঝকঝকে ইনিংস দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদেরই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় ঘটিয়ে দিল। বল হাতে ৩ উইকেটের পাশাপাশি শেষ দিকে মহামূল্যবান ছক্কা মারলেন রাজ লিম্বানি। জয়ের রানও এল তাঁর ব্যাটে। ৮১ রান করে অধিনায়কের ইনিংস খেললেন উদয়। এই তিন জনের কাঁধে চেপে ফাইনালে উঠল ভারত।
গত বছর দেশের মাটিতে এক দিনের বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরেছিল ভারত। রবিবার কি রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের ব্যর্থতা ঢেকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারবেন উদয়, সচিনেরা?
সচিন যখন ব্যাট করতে নামেন ২৪৫ রান তাড়া করতে নেমে ৩২ রানে ৪ উইকেট পড়ে গিয়েছে ভারতের। আর একটি উইকেট পড়লে ভারতের হার প্রায় নিশ্চিত ছিল। তখন আগুন ছোটাচ্ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই পেসার ট্রিস্টান লুস ও কোয়েনা মাফাকা। তাঁদের বলে একে একে আউট হয়ে ফিরেছেন আদর্শ সিংহ, আর্শিন কুলকর্নি, মুশির খান ও প্রিয়াংশু মোলিয়া। ভয় না পেয়ে ঠান্ডা মাথায় ইনিংস ধরলেন উদয় ও সচিন। তাড়াহুড়ো করলেন না। অফস্টাম্পের বাইরের বল অবলীলায় ছাড়লেন। বোলারদের বাধ্য করলেন শরীরে বল করতে। তবে মারার বল পেলে ছাড়লেন না।
উদয়ের থেকে বেশি আক্রমণাত্মক দেখাচ্ছিল সচিনকে। তিনি পাল্টা আক্রমণের পথে যান। কয়েকটি বড় শট খেলে রান তোলার গতি স্বাভাবিক রাখেন। এক বার লুস ও মাফানা আক্রমণ থেকে সরে যাওয়ার পরে বোলারদের নিশানা করলেন দুই ব্যাটার। চার, ছক্কার থেকে বেশি দৌড়ে রান নিতে থাকলেন। তাতেই দলের রান ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল।
এক বার অর্ধশতরান করার পরে রান তোলার গতি আরও বাড়ান সচিন। তাঁরা জানতেন দুই সেরা বোলারকে এখনই আক্রমণে আনতে পারবেন না দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক জুয়ান জেমস। উদয়ের পরে অর্ধশতরান করেন উদয়ও। শুরুর দিকে জরুরি রান বেশি থাকলেও দুই ব্যাটার তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছিলেন। ফলে এক বার হাত জমে যাওয়ার পরে দ্রুত রান উঠছিল।
বাধ্য হয়ে প্রতিযোগিতার সর্বাধিক উইকেটের মালিক মাফাকাকে বলে আনেন জেমস। তিনি এসে প্রথম বলেই ফেরান সচিনকে। ১১টি চার ও একটি ছক্কা মেরে ৯৫ বলে ৯৬ রান করে ফেরেন সচিন। ভেঙে যায় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ইতিহাসে পঞ্চম উইকেটে সর্বাধিক (১৭১) রানের জুটি। তখনও জিততে দরকার ছিল ৪২ রান। বাকি দায়িত্বটা নেন উদয়। অন্য প্রান্তে উইকেট পড়লেও তাঁকে আউট করা যাচ্ছিল না। কঠিন সময়ে লিম্বানি একটি ছক্কা মেরে কাজটা সহজ করে দেন। ভারতের জিততে যখন এক রান দরকার তখন তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে রান আউট হয়ে যান উদয়। তাতে অবশ্য় জয় আটকায়নি। পরের বলেই চার মেরে দলকে জিতিয়ে দেন লিম্বানি।
চলতি বিশ্বকাপে এই প্রথম বার শুরুতে বল করে ভারত। বোলিংয়ের শুরুটা ভালই করেছিল তারা। দক্ষিণ আফ্রিকার মারকুটে ব্যাটার স্টিভ স্টোক বেশি রান করতে পারেননি। ১৪ রানে আউট হন তিনি। ডেভিড টিগার শূন্য রানে আউট হন। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস সামলান লুয়ান দ্রে প্রিটোরিয়াস ও রিচার্ড সেলেৎসোয়ানে। দু’জনে মিলে ধরে ধরে রান এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন।
ভারতীয় স্পিনারদের সামনে হাত খুলে মারতে পারছিলেন না দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারেরা। বিশেষ করে সেলেৎসোয়ানে খুব ধীরে খেলছিলেন। ১০ রান করতেই ৪০ বল লাগে তাঁর। প্রিটোরিয়াস অর্ধশতরান করার পরে একটু হাত খুলে খেলার চেষ্টা করেন। দেখাদেখি কয়েকটি বড় শট মারেন সেলেৎসোয়ানেও। কিন্তু বেশি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে ৭৬ রানের মাথায় আউট হন প্রিটোরিয়াস। সেলেৎসোয়ানে ১০০ বলে ৬৪ রানের ইনিংস খেলেন।
৪০ ওভারের পর মনে হচ্ছিল, মেরেকেটে ২০০ রান পার হবে দক্ষিণ আফ্রিকার। কিন্তু শেষ দিকে আক্রমনণাত্মক ক্রিকেট খেলল তারা। বিশেষ করে ভারতের পেসারদের বিরুদ্ধে এল বড় শট। অলিভিয়ের হোয়াইটহেড ২২ রান করেন। অধিনায়ক জুয়ান জেমস ১৯ বলে ২৪ ও ট্রিস্টান লুস ১২ বলে ২৩ রান করেন। রাজ লিম্বানি ৩ উইকেট নিলেও ৬০ রান দেন। আর এক পেসার নমন তিওয়ারি ১ উইকেট নিয়ে ৫২ রান দেন। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৪৪ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ বারের বিশ্বকাপে মাত্র এক বারই ২৪০ রানের বেশি তাড়া করে জিতেছিল কোনও দল। দ্বিতীয় বার সেই কাজটা করল ভারত।