পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে ডাক্তারিই লক্ষ্য মাধ্যমিকে রেকর্ড গড়া মেয়ের

৭০০তে ৬৯০। ৯৮.৫৭ শতাংশ নম্বর। মাধ্যমিকের ইতিহাসে আগে কখনও হয়নি। একে গোটা রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থানাধিকারী তার উপর রেকর্ড। এখনও ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাঁকুড়ার বিবেকানন্দ শিক্ষায়তন হাইস্কুলের পড়ুয়া অন্বেষা পাইনের পরিবার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৭ ১৪:১০
Share:

প্রথম স্থানাধিকারী অন্বেষা পাইন। নিজস্ব চিত্র।

৭০০তে ৬৯০। ৯৮.৫৭ শতাংশ নম্বর। মাধ্যমিকের ইতিহাসে আগে কখনও হয়নি। একে গোটা রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থানাধিকারী তার উপর রেকর্ড। এখনও ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাঁকুড়ার বিবেকানন্দ শিক্ষায়তন হাইস্কুলের পড়ুয়া অন্বেষা পাইনের পরিবার। তবে সপ্রতিভ ভাবেই সমস্ত রকম প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেল ছোট্ট-খাটো মেয়েটা। জানিয়ে দিল তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও।

Advertisement

এমন ফলাফল কল্পনায় ছিল না। অভাবনীয় সাফল্যের ঘোর না কাটলেও, সংযত অন্বেষার কথায়, “সবে তো শুরু। এটা কোনও ব্যাপারই নয়। আসল যুদ্ধটা এখনও বাকি। বাকি আছে অনেক লড়াই। পাখির চোখ উচ্চমাধ্যমিক। একটা পড়ুয়ার জীবনের আসল ভিতটা তো গড়ে দেয় দ্বাদশ শ্রেণির ফলাফলই।” মাধ্যমিকে প্রথম হওয়ার খবর পেয়েও ঠোঁটে স্মিত হাসি, চোখে চরম দৃঢ়তা নিয়ে এই কথাগুলোই বলে গেল অন্বেষা।

গোটা রাজ্যের মধ্যে সে-ই সেরা। প্রথম ফোনটা এসেছিল বাবার এক বন্ধুর কাছ থেকে। কিন্তু তখনও বিশ্বাস হয়নি। আসলে বাড়ির টিভি সেটটা খারাপ হয়ে গিয়েছে। সে জন্য মধ্য শিক্ষা পর্ষদের তরফে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণাটা নিজের চোখে দেখে উঠতে পারেনি। তখন সবে ঘড়িতে সকাল ৯টা বেজে ২০ মিনিট। আসতে শুরু করেছে একের পর এক ফোন। শুভেচ্ছা-বার্তায় ভেসে যাচ্ছে বাড়ির প্রতিটা সদস্যের মোবাইলের ইনবক্স। বাড়ির দরজায় ভিড় করতে শুরু করেছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের গাড়ি। অন্বেষার সংশয়টা কাটল তখন। হাসতে হাসতে বলল, ‘‘এখনও ঘোরটা কাটেনি জানেন। মনে হচ্ছে গোটাটাই স্বপ্ন। আশা ছিল না এতটা ভাল করবো।’’ কৃতী মেয়ে তার এই সাফল্যটা ভাগ করে নিয়েছে বাবা-মা, স্কুলের শিক্ষিকা, গৃহশিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে।

Advertisement

বাবা-মায়ের সঙ্গে অন্বেষা পাইন। নিজস্ব চিত্র।

ইচ্ছে ছিল পাইলট হওয়ার। তবে এখন লক্ষ্য ডাক্তারির। সদ্য প্রয়াত হয়েছেন অন্বেষার ঠাকুরদা। তাঁর আশা ছিল অন্বেষার বাবা বিশ্বজিৎ পাইনকে ডাক্তার বানাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। মারা যাওয়ার আগে নাতনিকে ডেকে পরামর্শ দিয়েছিলেন ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করার। আজ আর তিনি নেই। কিন্তু প্রয়াত দাদুভাইয়ের সেই অপূর্ণ ইচ্ছেটাকেই পূরণ করতে হবে বলে সঙ্কল্প প্রথম স্থানাধিকারী অন্বেষার। বলল,‘‘এতটা ভাল রেজাল্ট হয়েছে দাদুর আশীর্বাদেই। আমাকে ডাক্তার হতেই হবে। ভাল ফলাফলটা আরও উৎসাহ জোগালো।’’ মেয়ের কথা শুনে পাশে বসা অন্বেষার বাবা বিশ্বজিৎবাবুর চোখের কোনায় জল। আবেগে গলা ধরে এসেছে। নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়ে বললেন, ‘‘আমার মেয়ে আমার গর্ব। মেয়েকে ঘিরেই আমাদের স্বপ্ন। বাবার স্বপ্ন ও পূরণ করবেই আমি জানি।’’

মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে অন্বেষার মা তনুশ্রী পাইন বলে উঠলেন, ‘‘মেয়েকে কখনওই পড়াশোনা নিয়ে কিচ্ছু বলতে হয়নি। ও নিজের পড়াটা নিজেই সব সময় গুছিয়েই করে। তবে হ্যাঁ ঘরের কাজ করে না বলে মাঝে-মধ্যে বকেছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বাড়ির টুকটাক কাজ করে ভাগ্যিস সময় নষ্ট করেনি।’’

আরও পড়ুন: মাধ্যমিকে প্রথম অন্বেষা, মেধায় এগিয়ে বাঁকুড়া, পাশে পূর্ব মেদিনীপুর

সামনের বছর কবে মাধ্যমিক, বলল না মধ্যশিক্ষা পর্ষদ

১০ লক্ষ ৬১ হাজার ১২২ জন পরীক্ষার্থীকে পিছনে ফেলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে মেয়েটা। কিন্তু এখনও বাড়িতে সে ভাবে উৎসব শুরু হয়নি। আসলে এই সুখবরটা পেয়ে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না অন্বেষার বাবা-মা। এ দিকে বাড়িতে মেয়েটাকে শুভেচ্ছা জানাতে ভিড় করেছেন আত্মীয়-পরিজন, পাড়া-প্রতিবেশী থেকে শুরু করে বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষকরাও। তাঁদেরও তো আপ্যায়ণ করতে হবে।

ভিড়ে ঠাসা ঘরে বসেই বাঁকুড়ার বিবেকানন্দ শিক্ষায়তন হাইস্কুলের কৃতী ছাত্রীটি জানালেন, পড়াশোনার চাপের জন্য বন্ধ রয়েছে নাচ-গান আর আঁকা। আর যাই হোক গানটা অন্তত কোনও ভাবেই বন্ধ করা যাবে না। তাই সামনে যতোই উচ্চ মাধ্যমিক থাকুক না কেন, কিছু দিন বাদেই গানের চর্চাটা ফের শুরু হয়ে যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement