ভোটের মধ্যেও বিপুল পরিমাণে বোমা উদ্ধার মুর্শিদাবাদে। ফাইল চিত্র।
রাস্তায় জমায়েত করেছে বিপক্ষ দল। আচমকা সেই জটলায় উড়ে এল পর পর ৩-৪টি সকেট বোমা। বিকট শব্দে গোটা এলাকা কেঁপে উঠল। মুহূর্তে সব সুনসান। কয়েক মিনিটের মধ্যেই এলাকা অন্য পক্ষের দখলে। আবার লক্ষ্যবস্তু দূরে হলেও অসুবিধা নেই। নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে সুযোগ বুঝে পর পর কয়েকটি বোমা ছুড়লেই কেল্লা ফতে! তার জন্য দক্ষ হওয়ারও দরকার নেই। অদক্ষ হাতেও লক্ষ্যবস্তুর উপর নির্ভুল আঘাত হানা যায়। এই সব দিক নজরে রেখে মুর্শিদাবাদে সারা বছরই বোমার কদর। পঞ্চায়েত ভোটের আবহে সেই বোমার চাহিদা নাকি কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে! সামাল দিতে পড়শি রাজ্য বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে ডাক পড়ছে দক্ষ ও অভিজ্ঞ বোমা কারিগরদের। অন্তত তেমনটাই দাবি বোমা কারবারিদের। যা চিন্তা বাড়িয়েছে জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের।
মুর্শিদাবাদে বিপুল পরিমাণে বোমা এবং আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের খবর পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার অনেক আগে থেকেই বার বার প্রকাশ্যে আসছিল। ভোট-পর্ব শুরু হওয়ার পরেও সেই ধারা অব্যাহত। গত শনিবারই শমসেরগঞ্জ থেকে উদ্ধার হয়েছে ব্যাগ ভর্তি ২৫টি তাজা সকেট বোমা। ব্যাগ ভর্তি সকেট বোমা উদ্ধারকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হুমাইপুর অঞ্চলের লালনগর এলাকায়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে, হরিহরপাড়া থানার পুলিশ রবিবার সকালে লালনগর ঘোষপাড়া সংলগ্ন এলাকায় তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে ৩০টি তাজা বোমা। বুধবার দুপুরে মুর্শিদাবাদ জেলার রেজিনগর থানার তেঘরি নাজিরপুর বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হয় দু’টি নাইলন ব্যাগ। সেই ব্যাগ থেকে মোট ৪০টি তাজা বোমা পাওয়া গিয়েছে। ভোটের মরসুমে যে বোমার চাহিদা বেড়ে গিয়েছে, এই পরিসংখ্যানই কি তার প্রমাণ? বহরমপুর পুলিশ জেলার সুপার সুরিন্দর সিংহ বলেন, ‘‘বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের জন্য নিয়মিত অভিযান চলে। পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বাড়তি সর্তকতা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের সোর্স ও জেলা গোয়েন্দা বিভাগ সক্রিয় হওয়ায় বোমা উদ্ধারের পরিমাণ আগের চেয়ে বেড়েছে।’’
কিন্তু ভোটের আবহে কেন বোমার প্রতি ঝোঁক বাড়ছে? কারবারিদের একাংশের বক্তব্য, সব চেয়ে বড় কারণ হল, বোমা সস্তা। সব চেয়ে সস্তার দেশি বন্দুক-সহ এক রাউন্ড গুলির দাম অন্তত ১৫-২০ হাজার টাকা পড়ে। সেখানে মাত্র ৮০ টাকায় পাওয়া যায় বোমা। একটু ভাল মানের সকেট বোমা মেলে ২৫০-৩০০ টাকায়। এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করতে বন্দুকের থেকেও দুষ্কৃতীদের বেশি পছন্দ কম দামি সুতলি বোমা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শমসেরগঞ্জের এক বোমা কারিগর বলেন, ‘‘বোমার বিপুল চাহিদা এখন। মুড়িমুড়কির মতো বিকোচ্ছে। ঝাড়খণ্ড, বিহার থেকে লোকদের আনতে হচ্ছে। রাত জেগে আমরা কাজ করছি। এক একটা সকেট বোমায় আমরা ৩০-৩৫ টাকা পাই। বাজারে যা বিক্রি হয় ২৫০-৩০০ টাকায়। পেটের দায়ে করতেই হয়।’’ ঝা়ড়খণ্ড থেকে আসা কারিগর টিঙ্কু সিংহ বলছেন, ‘‘ভালই লাভ হচ্ছে। দরকার পড়লে মাসখানেক এখানেই থাকব।’’
ভোটের সময় জেলায় বোমার ব্যবহার বেড়ে যাওয়া নিয়ে শাসকদল তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে বিরোধীরা। মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি শাখারভ সরকার বলেন, ‘‘১০০ দিনের কাজের টাকা থেকে যে বাড়তি আমদানি হত, তা দিয়ে বন্দুক কিনতেন তৃণমূল নেতারা। যে হেতু সেই টাকা কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে, তাই বোমা হাতে করে এলাকা দখলের যুদ্ধে নেমেছে। মুড়িমুড়কির মতো বোমা উদ্ধার হচ্ছে জেলা জুড়ে।’’ পাল্টা বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অপূর্ব সরকার বলেন, ‘‘ভোট এলে বোমার ব্যবহার বাড়ে। এটা খুব সত্যি কথা। তবে তৃণমূল এর সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত নয়। পুলিশ প্রশাসন সক্রিয় আছে। নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে।’’