৮৭ নম্বর ওয়ার্ডের মহিশীলা গ্রামে বাসিন্দাদের প্রতিবাদ। ছবি: পাপন চৌধুরী
বুথের বাইরে এসে দাঁড়াল চার-পাঁচটি গাড়ি। গাড়ি থেকে নেমে যুবকের দল সটান ঢুকল ভোটকেন্দ্রে। তারা গা-জোয়ারি শুরু করে বলে অভিযোগ। পরে, শূন্যে গুলিও চালায় বলে দাবি। তবে এলাকাবাসীর প্রতিবাদ প্রতিরোধে বদলাতেই এলাকা ছাড়ে তারা। পুরভোটের দিন, শনিবার আসানসোল পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ড (জামুড়িয়ার) ঘটনা। প্রায় একই ভাবে এ দিন ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডেও এলাকাবাসীর বাধার মুখে পড়ে এলাকা বদলাতে হয় ‘বহিরাগতদের’। সেখানে ঘটনার প্রতিবাদে একটা সময়ের পরে, ভোট দেননি নাগরিকদের একাংশ। দু’টি ঘটনাই রাজনৈতিক মত নির্বিশেষে এলাকাবাসীর প্রতিবাদ বলে দাবি বিরোধীদের।
আসানসোলের পুরভোটে ‘বহিরাগতদের’ অস্তিত্ব মানেননি রাজ্যের মন্ত্রী তৃণমূলের মলয় ঘটক-সহ দলের জেলা ও রাজ্য স্তরের নেতারা। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুধীরকুমার নীলাকান্তম নির্দিষ্ট করে ওই দু’টি জায়গার বিষয়ে কিছু বলেননি। তাঁর দাবি, “অশান্তি দেখলে, পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ করেছে।”
৮৭ নম্বর ওয়ার্ডে ডামরা গ্রামের তিনটি বুথে সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ঢুকে ছাপ্পা-ভোট দিতে শুরু করে প্রায় তিরিশ জন ‘বহিরাগত’, অভিযোগ বাসিন্দাদের একাংশের। ভোটারেরা প্রশ্ন তোলেন, “কী হচ্ছে এটা?” জনতার মেজাজ দেখে দলটি ওই বুথ ছেড়ে ডামরারই অন্য তিনটি বুথে যায়। সেখানেও গ্রামবাসী বিক্ষোভ দেখালে, তারা সরে পড়ে। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ মহিশীলা গ্রামের চারটি বুথে দেখা যায় দলটিকে। সেখানে এলাকাবাসী আপত্তি করলেও তারা নিরস্ত হয়নি বলে অভিযোগ। বহু চেঁচামেচির পরে তারা বুথ থেকে বেরোয়।
মহিশীলা গ্রামের বাসিন্দা সুজিত ঘোষ, জয়ন্ত মণ্ডল, মুনমুন চক্রবর্তীরা বলেন, “আমাদের বেড়ে ওঠা এখানে। কিন্তু ভোট লুট করতে বাইরে থেকে ছেলে আনা হবে, এমন আগে দেখিনি। সেটা ঠেকাতে কোথাও প্রতিরোধ হয়েছে। কোথাও প্রতিরোধে লাভ না হওয়ায় ভোট দিতে যাননি বাসিন্দারা।” খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছয়। প্রশাসন সূত্রের দাবি, ওই চারটি বুথে প্রায় ২,৬০০ ভোটার রয়েছেন। দুপুর ১টা পর্যন্ত সেখানে বারোশোর কিছু বেশি ভোট পড়েছিল। পরে, সংখ্যাটা বাড়েনি। জামুড়িয়ার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীপুর হাইস্কুলের বুথে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ প্রায় জনা চল্লিশ জন ‘বহিরাগত’ ঢুকেছিল, বলে দাবি ওই ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী দয়াময় বাউড়ির। তিনি বলেন, ‘‘ওরা বুথ দখল করতে চাইছে বুঝে বাধা দিই।’’ ইতিমধ্যে স্থানীয় বাউড়িপাড়া, মুকারিমহল্লা থেকে জনা ষাট স্থানীয় বাসিন্দা বুথে জড়ো হন। অবস্থা ‘বেগতিক’ দেখে, স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক হরেরাম সিংহের ছেলে প্রেমপালের নেতৃত্বে ওই ‘বহিরাগতেরা’ শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়ে জনতাকে ভয় দেখাতে চেষ্টা করে বলে দাবি। দয়াময়ের মেয়ে লিপি দাস ইতিমধ্যে ‘ফেসবুক লাইভ’ (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) শুরু করেন। খবর পেয়ে লাঠি হাতে জড়ো হন বহু এলাকাবাসী। তাঁদের মারমুখী মেজাজ দেখে এলাকা ছাড়ে ‘বহিরাগতেরা’। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এলাকার মণ্টু বাউড়ি, অনুপ বাউড়িরা বলেন, “বাইরের ছেলেরা ভয় দেখাতে চেয়েছিল। জমি ছাড়িনি।”
ঘটনাচক্রে, ১২ ও ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডে ২০১৫-র পুরভোটে জিতেছিল তৃণমূল। সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীর দাবি, ‘‘তৃণমূল বহিরাগতদের এনে বুথ দখল করতে চেয়েছিল। রুখেছে জনতা।’’ বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দিলীপ দে বলেছেন, ‘‘বাইরের লোক ঠেকাতে এলাকাবাসী জোট বাঁধেন। তাতে রাজনৈতিক রং ছিল না।’’ একই দাবি জেলা কংগ্রেস সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীর। যদিও তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। এ সবই বিরোধীদের সাজানো ঘটনা।”